Thakurgaon Jute Pic-1

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ৩১ জুলাই  ২০১৫: এ বছর বর্ষা ঋতুতে আকাশে বৃষ্টি নেই। ঠাকুরগাঁও জেলায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেনা চাষিরা। পাট কেটে রোপা আমন লাগাবে সে সুযোগ পাচ্ছে না তারা। ফলে চলতি মওসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে দাম না থাকায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছে জেলায় পাট চাষিরা।ঠাকুরগাঁও জেলায় এ বছর ৮ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর পাট চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে। এদিকে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমি। পানির অভাবে চাষিরা পাট কেটে জমি খালি করে ধান লাগাবে তার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে এবার রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।আষাঢ় শেষে শ্রাবণ মাস চলছে। তারপরও আকাশে পানি নেই। যদিও মাঝে-মধ্যে ছিটে ফোটা পানি হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এলাকার নদী-নালা, খাল-বিল, গর্ত বা পুকুরে কোনো জায়গায় এতোটুকু পানি নেই। যে কারণে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা পাট কেটে জাগ দিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পাট কেটে গর্ত বা নালার মধ্যে শ্যালোইঞ্জিনের সাহায্যে পানি জমিয়ে পাট জাগ দিচ্ছে। এতে চাষিরা অতিরিক্ত খরচের মধ্যে পড়ছে। পানি না থাকার কারণে আমন ধান লাগানোর কাজেও চরম বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে পাটের দাম মণ প্রতি মাত্র সাড়ে ৮শ থেকে ৮শ ৫০ টাকা হওয়ায় পাটচাষ থেকেও তারা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

Thakurgaon Jute Pic-2

সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পাট চাষি জয়নাল আবেদিন জানান, পাট কেটে কোথাও পানি না পেয়ে একটি গর্ত ভাড়ার মাধ্যমে পাট জাগ দিয়েছি। এলাকার অনেক চাষি জানিয়েছে, বর্ষাকালে ঠাকুরগাঁও জেলায় বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল, নদী-নালা গর্ত কিংবা পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় তারা পাট কেটে পঁচাতে পারছে না। যদি কোনো গর্তে পাট পঁচানোর জন্য ফেলছে তাতেও প্রতি ২/৩ দিন পরপর ওই গর্তে শ্যালোইঞ্জিনের মাধ্যমে পানি দিতে হচ্ছে। এতে তার অতিরিক্ত ৮শ’ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান যে পাটের বাজার তাতে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছে।সদর উপজেলার আক্চা ইউনিয়নের বন্দপাড়া গ্রামের কৃষক শ্রী জয়ন্ত লাল জানান, প্রতিবিঘা পাটের আবাদে চাষ-মই খরচ, বীজ, সার-বিষ কেনা, সেচ দেয়া, নিড়ানী, পাট কাটা, বাধা, বহন, গর্তভাড়া, পঁচানো, আঁশ ছাড়ানো, শুকানো ইত্যাদি খরচ বাবদ প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপন্ন হয় প্রায় ১২ মণ। যার বর্তমান বাজার দাম সাড়ে ৮শ’ টাকা মণ দরে ১০ হাজার টাকা। হিসেব-নিকেস করে লাভ থাকে পাট খড়ি। তারপরও খড়ি বহনের খরচ আছে। যে কারণে পাটচাষও করার মানসিকতা চাষিরা হারিয়ে ফেলছে।

গড়েয়া ইউনিয়নের তেওয়ারিগাাঁও গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দীন জানান, এক হাজার ৫শ’ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হলেই চাষিদের সামান্য লাভ থাকতো। এ বছর যে সব চাষিরা নিজের লাঙল-গরু দিয়ে চাষ করে এবং নিজেরা শরীরে খেটে আবাদ শেষ করেছে তারাই কেবল সামান্য লাভের মুখ দেখতে পেয়েছে। রফিকুল ইসলাম নামে আরেক পাটচাষি জানান, এবার ৩ বিঘা জমিতে পাট আছে। ওই পাট কেটে তার ধান লাগানোর কথা। কিন্তু পানির অভাবে পাটও কাটা হচ্ছেনা। ধানও লাগানো যাচ্ছে না।ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী খান জানান, পানির অভাব বর্তমানে পাট জাগ দেয়া একটা বড় সমস্যা। আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি চলছে এরপরও বৃষ্টি কোন খোজখবর নেই। আর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে খাল বিলে পানি নেই। কৃষক পাট কাটার ঝুঁকি নিচ্ছে না। তারপরও জেলায় অর্ধেকের বেশি পাট কাটা হয়ে গেছে। কৃষক সেচ দিয়ে ধান রোপণ করছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে দ্রুত পাট কাটা শেষ হবে এবং কৃষক পূর্ণদমে রোপা আমন চাষ করবে।