09-08-15-PM_HSC Result-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯ আগস্ট: বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় এবার উচ্চ মাধ্যমিকে (এইচএসসি) খারাপ ফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।পাশাপাশি সৃজশীল প্রশ্নও ফলাফলের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে রোববার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল খারাপ হওয়ার তিন কারণ দেখছেন নাহিদ। রোববার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তরের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় শিক্ষা সচিব মো: নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫’র সংখ্যা কমেছে। ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমানে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর জানুয়ারি থেকে হরতাল-অবরোধ শুরু হয়। হরতাল-অবরোধের কারণে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা নিলেও এসএসসিতে খারাপ ফল হয়েছে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা খারাপ, এ অপবাদ এবার ঘুচেছে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবার ভাল রেজাল্ট করেছে। তাদের পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৬। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৬ হাজার ৫৫৬ জন শিক্ষার্থী, যা মোট জিপিএ’র ৬২ ভাগ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সবক্ষেত্রে এবার পরীক্ষার ফল খারাপ হলেও বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় সুসংবাদ আছে। এ দু’ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভাল করেছে। তিনি বলেন, বিজ্ঞানে আমাদের শিক্ষার্থীরা খারাপ, এ অপবাদ সব সময়ই শুনতে হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সে অপবাদ দূর করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সরকারের গ্রহণ করা ওইসব পদক্ষেপের কারণেই এবার বিজ্ঞানের রেজাল্ট ভাল হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।তিনি বলেন, এবার ১ লাখ ৫১ হাজার ২৫৯ জন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৬৪ জন। এ বিভাগের পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৬ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৬ হাজার ৫৫৬ জন। যা এবারের মোট জিপিএ ৫ এর প্রায় ৬২%।

দেশের ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭ জন কৃতকার্য হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ৮ বোর্ডের পাসের গড় হার ৬৫ দশমিক ৮৪ ভাগ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৪ হাজার ৭২১ জন শিক্ষার্থী।তিনি বলেন, এর মধ্যে মানবিক বিভাগ থেকে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৫ জন। পাসের হার ৫৭ দশমিক ৯৯ ভাগ।

আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার ৩২৯ জন পরীক্ষা দিয়ে ২ লাখ ১ হাজার ৬২৮ জন কৃতকার্য হয় ও এ বিভাগের পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ ভাগ।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই তিন বিভাগের পাসের হার তুলনা করলে দেখা যায় বিজ্ঞান বিভাগের পাসের হার মানবিক বিভাগ থেকে প্রায় ২০ ভাগ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে প্রায় ৫ ভাগ বেশি।

কারিগরি শিক্ষার প্রসঙ্গ তুলে নাহিদ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন দেশের মোট শিক্ষার্থীর ১% এরও কম কারিগরি লাইনে পড়াশুনা করতো। কিন্তু দেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনা করে সরকার এ দিকটিতেও জোড় দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়।

তিনি বলেন, এর ফলে কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন এইচএসসিতে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ১০% কারিগরি লাইনে পড়াশুনা করছে। আর এসএসসিতে এ হার ১২% এর বেশি। কারিগরি লাইনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধিতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে।তিনি বলেন, এ বছর কারিগরি বোর্ড থেকে ৯৮ হাজার ২৯৬ জন পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ৮৪ হাজার ১২৫ জন। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৫৮ ভাগ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৪৩০ জন।