image_133829tofayel-ahmed

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ আগস্ট ২০১৫: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।তিনি অ বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন ও মিডাস টাস এশিয়া ইনস্টিটিউট (এমটিএ)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সিংগাপুরের দি ফুলারটন হোটেলে ‘বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০১৫’ অনুষ্ঠানে ‘কী-নোট’ বক্তৃতায় একথা বলেন।তোফায়েল আহমেদ বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রদানসহ সকল প্রকার সহযোগিতার আশ^াস দিয়ে বিনিয়োগ সুরক্ষা করারও আহবান জানিয়েছেন।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করার কারনে বাংলাদেশে বিনিয়োগে অনেক দেশের বিনিয়োগকারিরা এগিয়ে আসছেন।তিনি বলেন, তার দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য গড়ে তোলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে জাপান, চীন এবং ভারতকে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলতে জমি বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে চট্রগ্রামে পাঁচশত একর জমির ওপর নির্মিত রপ্তানি প্রক্রিয়া করণ অঞ্চলের মধ্যে ২৫০ একর জমি কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যে কোন বিদেশি বিনিয়োগকারিদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারিগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন।তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশকে একসময় তলাবিহিন ঝুড়ি আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের মাত্র ২৫টি পণ্য পৃথিবির ৬৮টি দেশে রপ্তানি করা হতো, মোট রপ্তানির পরিমান ছিল মাত্র ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেইদেশ আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ৭২৯টি টি পণ্য পৃথিবীর ১৯২টি দেশে রপ্তানি করছে, রপ্তানি আয় এখন ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তোফায়েল আহমেদ বলেন,বাংলাদেশ সরকার ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা মোতাবেক রপ্তানি পণ্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রপ্তানি বাজার সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে । সরকার ইতোমধ্যে দেশের আইটি, চামড়া, ঔষধ, ফার্নিচার, জাহাজ নির্মাণ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। বিশ^বাজারে এ সকল পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে এখন বিশ^মানের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।মন্ত্রী বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার বাউশিয়ায় ৪৯২ একর জমির উপর ২দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পাঁচশ’টি তৈরী পোষাক কারখানা থাকবে এবং আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাবে। এখান থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরী পোষাক রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকার এর মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি নি¤œমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বিশে^র মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।তোফায়েল আহমেদ বলেন,বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ বান্ধব আকর্ষনীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতি গ্রহণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এখন আকর্ষনীয় নিরাপদ বিনিয়োগ স্থান। এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অনেকেই বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুরু করেছে। সরকার ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়া করণ অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ করছে। বর্তমানে দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়া করণ অঞ্চলগুলো রপ্তানিতে ১৯.৫৯% অবদান রাখছে। বিভিন্ন কারনে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষনীয় স্থান, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, দক্ষজনশক্তি, ট্যাক্স হ্রাস, পর্যাপ্ত শিল্পের কাঁচামাল যেমন চামড়া, পাট, হস্তশিল্প ইত্যাদি, স্বল্প মূল্যে দক্ষ যুব জনশক্তি, স্বল্পমূল্যে গ্যাস, পানি বিদ্যুতের সুব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। পণ্য রপ্তানির জন্য নৌপথ, রেল পথ এবং আকাশ পথে সুব্যস্থা আছে।

ভারত, বাংলাদেশ, চীন, ভূটান, নেপাল মিলিতভাবে ইতোমধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশে^ অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি রপ্তানি সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরী পণ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, তুরষ্ক, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, বেলারুশ,জাপান, নিউজিল্যান্ড, চিলি এবং নরওয়েতে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি রপ্তানি সুযোগ পা”েছ। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের তৈরী বেশির ভাগ পণ্যে ডিউটি ফ্রি বাজার সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি’র গড় ৬ শতাংশেরও বেশি।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, ঢাকায় নিযুক্ত সিংগাপুরের হাই কমিশনার চ্যান হিং উইং, সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান এবং মিডাস টাস এশিয়া ইনস্টিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক দাতো আনডে ওয়াং এবং প্যানেল আলোচনা পর্বে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি আব্দুল মতলুব আহমেদ, সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান টিও সিয়ং সিং ,মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট এন্ড ডিফেন্স স্টেট মিনিস্টার ড. মোহাম্মদ মালিকি বিন ওসমান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের ব্যবসায়ীগণ বক্তব্য রাখেন।