1435176687

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ আগস্ট, ২০১৫: জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে, নবায়ন করতে হলে কিংবা তথ্য সংশোধনের প্রয়োজন হলে মঙ্গলবার থেকে তা পুনরায় নিতে গুণতে হবে ১০০ থেকে এক হাজার টাকা। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ও হারানো কার্ড নবায়ন করতে নাগরিকদের মঙ্গলবার থেকে নির্ধারিত ফি গুণতে হবে।এতোদিন এই সেবাটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিনামূল্যে দিয়ে আসছিল। বিনামূল্যে এনআইডি সেবা প্রদানের সোমবারই শেষ দিন।গত ২৫ জুন এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করে ইসি। গেজেটে উল্লেখ করা হয়, এ সেবা পেতে হলে নাগরিকদের ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ও হারানো কার্ড উত্তোলন করতে হবে।ইসির প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী- জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিকদের (সাধারণ) ১০০ এবং জরুরি ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা ফি দিতে হবে।এছাড়া হারানো বা নষ্ট হওয়ার কারণে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে গেলে প্রথম বার (সাধারণ) ২০০ টাকা, জরুরি ৩০০ টাকা। দ্বিতীয়বার সাধারণ ৩০০ টাকা, জরুরি ৫০০ টাকা এবং পরবর্তী যেকোনো সময়ের জন্য সাধারণ ৫০০ টাকা এবং জরুরি ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে। গেজেটে আরো উল্লেখ করা হয়, উল্লিখিত ফি নির্দিষ্ট খাতে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে অথবা সচিব, নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে অথবা কমিশনের নির্দিষ্টকৃত নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মধ্যেমে পরিশোধ করতে পারবেন। এবং ফি প্রাপ্তির তারিখ হতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা সরকারি হিসাবে জমা করতে হবে।

এদিকে ১ েেসপ্টেম্বর থেকে ফি কার্যকর হলেও ইসি এখনো স্মার্টকার্ড বিতরণের সময়সূচি ঘোষণা করেনি।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্মার্টকার্ড দেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে নাগরিকদের পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের কার্যক্রম চলছে। দেশের ৯ কোটি ৬২ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ লাখ নাগরিকের হাতে এখনো কোনো পরিচয়পত্র দেয়া হয়নি। বাকিদের হাতে রয়েছে লেমিনেটেড পরিচয়পত্র। এতোদিন বিনামূল্যে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে এবং হারানো বা পুনরায় এ কার্ড নিতে বা সংশোধনেও বিনামূল্যে সেবা দিয়েছে ইসি।এছাড়া খুব শিগগির নাগরিকদের বিনামূল্যে স্মার্টকার্ড দেয়ার কথাও রয়েছে। তবে কোন তারিখে স্মার্টকার্ড দেয়া হবে তার ঘোষণা না হলেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে যে কোনো সংশোধিত ও ডুপ্লিকেট লেমিনেটেড পরিচয়পত্র নিতে নাগরিকদের ফি দিতে হবে।ইসি সূত্রে জানা যায়, ৩১ অগাস্টের মধ্যে ইসিতে যাদের আবেদন জমা পড়বে, তাদের সেবা পেতে টাকা দিতে হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য এ ফি নির্ধারিত রয়েছে। জরুরি কাজে যে কোনো কার্ড প্রয়োজন হলে নির্ধারিত ফি দিয়েই তা নিতে হবে।তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নিয়ে সাধারণ ও জরুরি সেবা দিতে ইসির প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই। কোথায় টাকা দেয়া হবে, কোন বিভাগ-জেলার ভোটার কোন ডেস্কে কাজ করবে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস থাকবে কি না, কল সেন্টারের সুযোগ রাখা হবে কি না এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।নবায়নের ফি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশনের গেজেটে এ বিষয়ে বলা আছে। এছাড়া আমরা যে বিষয়টি যোগ করেছি তাহলো কেউ ইচ্ছা করলে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ফি’র টাকা জমা দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছি। নাগরিকরা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রেজারি চালান করতে পারবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সকল ব্যাংকের সাথেও চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।এদিকে নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার লক্ষ্যে চুক্তি হওয়ার পর সাড়ে সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এ কর্মসূচির কোনো দিন তারিখ দেয়নি নির্বাচন কমিশন।ভোটারের তথ্য যাচাইয়ে সরকারি- বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ফলে নির্ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারও অঘোষিতভাবে বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।স্মার্ট কার্ড দিতে দেরি হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র বিনামূল্যে সংশোধনের সময় আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম।তিনি বলেন, অন্তত দু’ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। ফি কার্যকরে বিধি মেনে প্রজ্ঞাপন ও গেজেট হয়েছে। সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। ১ সেপ্টেম্বর থেকে সংশোধিত লেমিনেটেড কার্ড নিতেও টাকা লাগবে। জরুরি কাজে যে কোনো কার্ড প্রয়োজন হলে নির্ধারিত ফি দিয়েই তা নিতে হবে।প্রথমবার জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের কোনো টাকা দিতে হয় না। এ কার্ডের মেয়াদ ১৫ বছর। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের পর জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়নেও ফি দিতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়নের ‘ফি’ ঠিক করা হয়েছে ১০০ টাকা। তবে জরুরিভিত্তিতে নবায়নের জন্য দিতে হবে ১৫০ টাকা।হারিয়ে ফেললে বা নষ্ট হলে নতুন পরিচয়পত্র নিতে সাধারণ সময়ের জন্য প্রথমবার আবেদনে ২০০ ও জরুরি আবেদনে ৩০০ টাকা ‘ফি’ নির্ধারণ করা হয়েছে।এছাড়া দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা (সাধারণ), ৫০০ টাকা (জরুরি) এবং পরবর্তী যে কোনো বার আবেদনে ৫০০ টাকা (সাধারণ) ও জরুরি সময়ের জন্য এক হাজার টাকা ঠিক করা হয়েছে।পরিচয়পত্র হারালে বা নষ্ট হলে বিকল্প পরিচয়পত্র সংগ্রহে নির্বাচন কমিশনের পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে নতুন ফি কমিশন সচিব বরাবর পে-অর্ডার বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।পরিচয়পত্র সংশোধনের ফি প্রথমবার ২০০, দ্বিতীয়বার ৩০০ ও পরের যে কোনো বারের জন্য ৪০০ টাকা।এছাড়া পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনে প্রথমবার ১০০, দ্বিতীয়বার ২০০ ও পরের েেয কোনো বার ৩০০ টাকা করে দিতে হবে।

পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ে যে কোনো সরকারি সংস্থা ও কর্তৃপক্ষকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। প্রতিটি তথ্য প্রতিবার যাচাইয়ে খরচ করতে হবে দুই টাকা।সরকারি সংস্থা ও বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষকে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহের ক্ষেত্রে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা ‘সার্ভিস চার্জ’ ধরা হয়েছে। প্রতিটি উপাত্ত সরবরাহে এক টাকা করে দিতে হবে। প্রতিবছর এক লাখ টাকায় এই সেবা নবায়ন করা যাবে।অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নিয়ে সাধারণ ও জরুরি সেবা দিতে যে প্রস্তুতি দরকার, তা ইসির নেই। কোন ব্যাংকে ফি জমা দিতে হবে, কোন বিভাগ- জেলার ভোটার কোন ডেস্কে কাজ করবে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস থাকবে কিনা, কল সেন্টারের সুযোগ রাখা হবে কিনা এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে- তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনাও কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়নি।