দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে কঠোরভাবে সতর্ক করে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ বিষয়টি নিস্পত্তি করে এ আদেশ দেয়। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আদালত অবমাননা বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ট্রাইব্যুনালে তলব করে গত ১২ জুলাই আদেশ দেয়া হয়। বিচারকদের নিয়ে মন্তব্যের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে গত ৯ আগস্ট বক্তব্য পেশ করেন তিনি। আজ আদেশে তাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে আদালত অবমানার এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ সময় ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে ডা. জাফরুল্লাহকে ‘এক্সট্রিমলি রং হেডেড পারসন’ বলেও উল্লেখ করা হয়। ডা. জাফরুল্লাহর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন তুরিন আফরোজ ও তাপস কান্তি বল। আদালত অবমাননার আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
ট্রাইব্যুনাল-২ বিষয়ে নানা মন্তব্য করায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ৬ জুলাই আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন দাখিল করেন তিন মুক্তিযোদ্ধা ও গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ। আবেদন দাখিলকারীগণ হলেন-স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আসগর, মুক্তিযোদ্ধা শেখ নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের আহবায়ক কামাল পাশা চৌধুরী ও কর্মী এফ এম শাহীন। আবেদনের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামিম আজিজ ও আবেদনকারী মনোরঞ্জন ঘোষাল। শুনানিতে মনোরঞ্জন ঘোষাল তিনজন বিচারপতি ও বিচারালয় সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যেসব মন্তব্য করেছেন, তা আদালত অবমাননা বলে দাবী করে বলেন, তার এসব মন্তব্য আদালতের সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে।
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হলো। ব্রিটিশ নাগরিক ও ঢাকার নিউ এজ পত্রিকার সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে দেয়া ট্রাইব্যুনালের সাজার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয়ায় গত ১০ জুন আদালত অবমাননার দায়ে তাকে এক ঘণ্টার কারাদন্ড (ট্রাইব্যুনালের এজলাসকক্ষে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা) এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে একমাসের কারাদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। আসামি কাঠগড়ায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার দন্ড ভোগ করলেও জরিমানা দেবেন না জানিয়ে আদালতের ভেতরে-বাইরে নানাভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। এক ঘন্টা সাজা ভোগ করে বাইরে বের হয়ে আদালত অবমাননার রায়কে তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আবেদনে তাকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ নি:শর্ত ক্ষমার প্রেক্ষিতে মওকুফ করে তাকে বিচার বিভাগ ও বিচারিক বিষয়ে সতর্ক করে বিষয়টি গত ২৮ জুলাই নিস্পত্তি করেছে আপিল বিভাগ। এছাড়াও বেসরকারী টিভি চ্যানেল চ্যানেল-২৪ এ “মুক্তবাক” অনুষ্ঠানে করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তখন বিচারিক বিষয় ও ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্ক করে ওই আবেদনটি নিস্পত্তি করা হয়েছিল।
