RICKSHAW-IN-WATER-thenewscompany

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর: রাজধানীতে টানা বৃষ্টিতে নাগরিক জীবনে দুর্ভোগ অব্যাহত আছে।মঙ্গলবারের পরিমাণে কিছুটা কম হলেও বুধবার ভোর থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে গেছে।এদিকে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে ঢাকায় তীব্র জলজট ও যানজটে নাগরিক ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।দুই দিনের বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ এলাকার রাস্তা ডুবে গেছে পানিতে।কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমড় পর্যন্ত পানি জমে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। রাস্তায় নামা ঢাকাবাসী বিশেষ করে অফিসগামীদের পড়তে হচ্ছে প্রচণ্ড দুর্ভোগে। গণপরিবহন সংকট পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে।এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর আজও বলছে, এই বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চলতে পারে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান ভারী ও মাঝারি বর্ষণ বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে কমে আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।অধিদপ্তরের কর্তব্যরত পূর্বাভাস কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বুধবার দুপুরে বলেন, শুক্রবারের পর থেকে আবহাওয়া ও বৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তারা আশা করছেন।গত কয়েকদিন ধরে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হচ্ছে। বুধবারও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে কমে আসবে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।উত্তাল সাগরে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে অধিদপ্তর।এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রাজধানীতে ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আগেরদিন বেলা ১২টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত হয়েছে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি। ওই সময়ে কক্সবাজারে দেশের সর্বোচ্চ ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।মঙ্গলবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর বেলা সোয়া ১১টার দিকে মুষলধারে বর্ষণ শুরু হয়। এতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ও নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে তা অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও সড়কে জমে থাকা পানিতে নগরবাসীর সেই দুর্ভোগ এখনও চলছে। বিকেলের পর থেকে রাজধানীতে বৃষ্টি কমলেও রাত ১২টার পর থেকে আবার শুরু হয় বুষ্টি। টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছে এখনো। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে গতকাল রাত ১২টার পর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ায় মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অনেক বেশি। সে জন্য এই বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চলার সম্ভাবনা রয়েছে।

একদিকে জলাবদ্ধতার কারণে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহনের আটকে থাকা ও রাজপথের নানা দুর্ভোগ আর অন্যদিকে গন্তব্যস্থলে যেতে যান সংকট ও স্থানে স্থানে বৃষ্টিভেজা নাগরিকদের অপেক্ষার দৃশ্য- চিরচেনা রাজধানীর গতিকে কমিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। সরেজমিনে বুধবার সকালে দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তর বাড্ডা- হোসেন মার্কেট-শাহজাদপুর এলাকায় মূল সড়কে হাঁটু সমান পানিতে গাড়ি থেকে নামতে হচ্ছে যাত্রীদের।রাস্তায় পানি থাকায় খুব সকালেই গণপরিবহনগুলোকে ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যাও সামান্য। এদিকে সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ও রাস্তায় আগে থেকেই পানি জমে থাকায় পথচারীদেরও ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে। সবার চেহারায় বিরক্তিভাব। গণপরিবহন সংকটে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিতে ভিজে মূল সড়কে অপেক্ষারত দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে। তবে যেভাবেই হোক রাস্তার নোংরা কাদা-পানি পার হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে পথে নামছেন অনেকেই। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আসাদগেট পর্যন্ত সড়ক এবং শেরশাহ্ সুরি সড়ক, তাজমহল রোড, হুমায়ূন রোড, নুরজাহান রোডে পানি জমে রয়েছে।পূর্ব রামপুরা এলাকার কিছু কিছু গলিতেও হাঁটু সমান পানি জমার কথা জানিয়েছেন ঐ এলাকার বাসিন্দরা । মঙ্গলবার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কখনো থেমে থেমে, কখনো টানা বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার ভোর থেকেই চলছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। টানা বৃষ্টিতে শান্তিনগর, আরামবাগ, মতিঝিল, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বাড্ডা, নাখালপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় হাঁটু থেকে কোমড় পানি জমেছে। এসব এলাকার পথচারী ও যানবাহনের আরোহীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।এরই মধ্যে রাজধানীর শান্তিনগর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মালিবাগ, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নাজিম উদ্দীন রোড, হাজারীবাগ, গ্রিন রোড ও আগারগাঁওসহ বিভিন্ন সড়কে বৃষ্টির পানি জমেছে। যেসব এলাকা কিছুটা নিচু সেখানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ওয়াসার উন্নয়নকাজ চলার কারণে রাস্তা কাটা হয়েছে। আর তাতে ওইসব এলাকার গর্তগুলোতেও কাদাপানি জমে একাকার হয়ে গেছে। ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে তাঁরাও বিপাকে পড়েছেন। এতে তাঁদের কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার উন্নয়নকাজ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন।

এদিকে, বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে চিরচেনা সেই যানজটও। বাসের জন্য অনেককে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রাস্তায় কাদাপানি থাকার কারণে অনেককে প্যান্ট গুটিয়ে পথ চলতে হচ্ছে। তবে এই বৃষ্টিতে উপরি কিছু লাভ হয়েছে রিকশা বা ভ্যানচালকদের। পাড়া-মহল্লার রাস্তায় কাদা ও পানি থাকার কারণে মানুষকে পথ চলতে রিকশার দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। আর এই সুযোগে ভাড়াও দ্বিগুণ হাঁকাচ্ছেন রিকশাচালকেরা। গ্রিন রোড থেকে ফার্মগেটের ভাড়া সাধারণত ১৫-২০ টাকা হলেও বুধবার বৃষ্টির অজুহাতে ৩০-৪০ টাকা হাঁকাচ্ছেন রিকশাচালকেরা। বসুন্ধরা সিটির পেছন থেকে মিরপুরের কাজীপাড়ার ভাড়া ৬০-৭০ টাকা। আজ এক রিকশাচালক ভাড়া চাইলেন ২০০ টাকা। যাত্রী প্রতিবাদ করার সঙ্গে সঙ্গে রিকশাচালক বললেন, গেলে আসেন, না গেলে নাই।মানুষের এমন সব দুর্ভোগের পাশাপাশি বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে কাঁচা বাজারেও। সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, বন্যার কারণে খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে সরবরাহ কম। দামও বাড়তি।তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন রাস্তার ওপর থাকা ছিন্নমূল মানুষ। রাস্তার ওপর তাঁরা যে ঘর পেতে থাকতেন গতকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে তাঁরা সেখানে ঘুমাতে পারেননি। কেউ কেউ বিভিন্ন ভবনের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনই একজন কারওয়ান বাজার এলাকার শ্রমিক মন্নু মিয়া। রাস্তার পাশে ফুটপাতে তিনি তাঁর বড় ডালির ওপর ঘুমান। গতকাল থেকে আর সেখানে ঘুমাতে পারেননি। এক ভবনের নিচে কিছুক্ষণ আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে নিরাপত্তা কর্মী তাঁকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। পরে আরেক দোকানের নিচে আশ্রয় নেন।

টানা দুইদিনের বৃষ্টির পর বুধবারের গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে রাজধানী ঢাকার সড়কগুলোতে। জমে থাকা পানির কারণে যানবাহনগুলোকে চলতে হচ্ছে ধীর গতিতে। আবার কোনো কোনো এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ট্রাফিক সিগন্যাল অতিক্রম করা যাচ্ছে না। ভয়াবহ এ দুর্ভোগ ও জলাবদ্ধতার জন্য ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করেছেন নগরপরিকল্পনাবিদ ও নগরবাসীরা।বুধবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকার রাজপথে মঙ্গলবারের মতো ভয়াবহ অচলাবস্থা আর তীব্র যানজটের কারণে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।রাজধানীর ধানমন্ডি, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, নতুনবাজার, গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, রামপুরা, বাড্ডা, গ্রিন রোড, ফার্মগেইট, বিজয় সরণী, খিলক্ষেত, মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার, কাকরাইল, ফকিরাপুল, আরামবাগ, রাজারবাগ, গুলিস্তান, দিলকুশা, বংশাল, দৈনিক বাংলা, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, মোহাম্মদপুর, পান্থপথ, শেরেবাংলা নগর, শেওড়াপাড়া, রামপুরা, পরীবাগ, মিরপুরের গোলচত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, শুক্রাবাদ, রূপনগর, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মীরহাজিরবাগসহ অনেক এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।এসব রাস্তায় জমে থাকা পানির সঙ্গে কাদামাটি যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। গাড়ির চাকার সঙ্গে কাদামাটি ছিটকে গিয়ে পড়ে ফুটপাতে চলাচলকরা মানুষের গায়ে।মঙ্গলবারের মতো বুধবার সকালে ফকিরাপুল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সড়কে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও একটি ট্রাফিক সিগন্যাল অতিক্রম করতে পারছেন কেউ। পরে বাধ্য হয়েই অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে।নগরীর পানি নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানীর সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতাল থেকে রাজারবাগ হয়ে শান্তিনগর পর্যন্ত পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর, মালিবাগ মৌচাক, মগবাজার ও সাতরাস্তা হয়ে মহাখালী পর্যন্ত পুরো রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এর মধ্যে শান্তিনগর মোড়ে প্রায় কোমর পানি। রাস্তায় ফ্লাইওভারের কাজ চলমান থাকায় রাস্তার মাঝখানে ছোটখাট কুয়ার মতো গর্ত তৈরি করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি আর সড়কের কাদামাটি একাকার হয়ে উঁচু-নিচু সব সমান দেখা যাওয়ায় গাড়ি চালাতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে যানবাহান চালকদের। সড়কটির বেহাল দশায় যানজটের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।এদিকে, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসী ও নগরপরিকল্পনাবিদরা দায়ী করেছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসাকে। গত শনিবার ঢাকার দুই মেয়রের উপস্থিতিতে দক্ষিণ নগরভবনে জলাবদ্ধতা বিষয়ক এক গোলিটেবিল বৈঠকে তারা এর জন্য এই দুই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেন।তারা বলেন, এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে পরিকল্পনা নিলে নগরীর উন্নয়ন করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজন নগরসরকার। নগরীতে সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকাকে পাল্টিয়ে দেয়া যাবে।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা ও নাগরিক ভোগান্তি নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। এসময় বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, মতিঝিল থেকে ধানমণ্ডি আসতে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে। শান্তিনগর, ফকিরাপুল, আরামবাগসহ সমগ্র রাজধানীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশন শুধু মিটিং সিটিং করে। বাস্তবে কোনো কাজে আসে না। এরপরেও তাদের দিয়ে কাজ করানোর চিন্তা আছে কি না?

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ঢাকার সুয়ারেজ লাইন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, সুয়ারেজ লাইন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। ওয়াসার পানি পাচ্ছে না নাগরিকরা। এর সমাধান কত দিনে হবে?’তাদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এবার অনেক বৃষ্টি হয়েছে। গত ৩০ বছরেরও এতো বেশি বৃষ্টি হয়নি। আগামী ৩ বছরের মধ্যে আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি। বৃষ্টিতে মহানগরী ঢাকা এখন ভেনিস নগরীতে পরিণত হয়েছে। তবে দুই শহরের মধ্যে পার্থক্য হলো, মানুষ গাঁটের পয়সা খরচ করে ভেনিস যান আর ঢাকাবাসী বাধ্য হয়ে পানিবন্দি ছিলেন। রাজধানী ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবস্থা এতোটাই করুণ যে, পুরো শহরটি প্রায় ডুবে গেছে পানিতে।দিনের শুরুটা কিন্তু এমন ছিল না। শরতের আকাশ তার চরিত্র অনুযায়ীই নীলাভ ছিল। কিন্তু সকাল ১০টার পর থেকেই আকাশ তার রুপ বদলাতে থাকে। নীলাভ আকাশ নিমিষেই পরিণত হয় আঁধারে। আর সঙ্গে সঙ্গে ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি। বিরামহীনভাবে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে। বারিধারার মাঝে ক্ষণিকের জন্য যেন সবাই থমকে যায়। বৃষ্টি শেষে ঢাকাবাসীর চিরচেনা নগরী পরিণত হয় এক অচেনা জনপদে। যেখানে টইটুম্বুর পানির মধ্যে থমকে আছে যানবাহন। থমকে যাওয়া যানবাহন যেন নড়তেও ভুলে গিয়েছিল। বৃষ্টির বেগ কমে আসার পর ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের ভিড় বেড়ে যায় সড়কগুলোতে। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। আর যানবাহনে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয় নগরবাসীকে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশিকুর রহমান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে কথা হয় তার সঙ্গে। অফিসের একটি কাজে সকালে সেগুনবাগিচায় গিয়েছিলেন তিনি। বললেন, বৃষ্টির মধ্যেই সাড়ে ১১টার দিকে সেগুনবাগিচা থেকে সিএনজিতে উঠেছি। এই এক ঘণ্টায় কাকরাইল মোড়ে এসে পৌঁছেছি। পাঁচ মিনিটের হাঁটা রাস্তা পার হলাম এক ঘণ্টায়। জানি না, কতোক্ষণে আমার অফিস বনানীতে গিয়ে পৌঁছাবো।প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা টানা মুষলধারে বৃষ্টিতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, অলি-গলিতে পানি জমে যায়। বিভিন্ন সড়কে বিকল হয়ে পড়ে সিনএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন।রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে বিমানবন্দর সড়কের বনানী অংশে যানজট ছিল বেশি। ভিআইপি রোড হিসেবে পরিচিত এই সড়কের বেশির ভাগ অংশই পানির নিচে তলিয়ে যায়। বরাবরের মতো ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ছিল রাজধানীর শান্তিনগর মোড় থেকে মালিবাগ পর্যন্ত। পানি ছিল ফার্মগেট থেকে শাহবাগের পুরো সড়কে। এমন কি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কও তলিয়ে যায় পানিতে। ফলে সেখানকার যানবাহনের গতি শ্লথ হয়, বাড়তে থাকে যানবাহনের চাপ, সৃষ্টি হয় দুর্বিষহ যানজট।এর পাশাপাশি রূপসী বাংলা হোটেল সিগন্যাল, কাওরানবাজার, বাংলামোটর, মিরপুর রোড, সাতরাস্তা থেকে মহাখালী সড়ক, রামপুরা থেকে মালিবাগ মোড়, কাকরাইল, ধানমণ্ডিসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি স্থানেই ছিল জলবদ্ধতা আর যানজন। ফ্লাইওভারের কাজ চলার কারণে এবড়ো- থেবড়ো মালিবাগ-শান্তিনগর এলাকায় ভ্যান, রিকশা গর্তে পড়ে দুর্ঘটনায় পড়তে দেখা গেছে অনেককেই। আর পুরো রাজধানী জুড়েই ইঞ্জিনের মধ্যে পানি ঢুকে যাওয়ায় বিকল হয়ে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা।