Pic-4-07-09-15

দৈনিকবার্তা-ভোলা, ৭ সেপ্টেম্বর: ভোলায় গত কয়েক দিনের বৃষ্টি থামলেও থামেনি মেঘনার ভাঙন৷ বরং মেঘনা নদীর তীব্রতা আরো বেড়েছে৷ প্রায় প্রতিদিনই ভাঙছে সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের বিসত্মীর্ণ এলাকা৷ গৃহহারা হচ্ছে বহু পরিবার৷ ভাঙনে সর্বশানত্ম হয়ে এসব পরিবার এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে৷ নদী ভাঙনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের গাফিলতিকেও দায়ী করছেন স্থানীয়রা৷ এদিকে, ক্ষতিগ্রসত্মদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও অনেক ক্ষতিগ্রসত্ম মানুষ ত্রাণ পাননি বলেও অভিযোগ করেছেন৷

রবিবার বিকেলে ভোলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের মেঘনার পাড়ে সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, মেঘনা নদীর ভাঙনে মাত্র ২ সপ্তাহে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার এলাকা, ওই এলাকার সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি, ৩টি মসজিদ, ৫টি মক্তব, ২টি বোট, পুলিশ ফাঁড়ি, ইসলামী মিশন, ৩শ’ একর ফসলি জমি, ২ শতাধিক দোকান এবং ১ জন মাঝিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে৷ ভেসে গেছে দুই শতাধিক পুকুর ও শতাধিক ঘেরের মাছ সহ অনত্মত শতাধিক গবাদি পশু৷ এতে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা৷

ইলিশা ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামের বাসিন্দা হানিফ খলিফা (৭৫) বলেন, ‘আমি বিগত ৫০ বছরেও এমন ভাঙন দেখিনি৷ মেঘনার তীরেই আমার বাড়ি ছিল৷ ছিল এক কানি ৯ গন্ডা জমি৷ যেই জমির লগি্ন করা হতো বছরে ৮০ হাজার টাকা৷ সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে৷ এ পর্যনত্ম আমি ৫বার মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি৷ এখন আর কিচ্ছু নাই৷ খালি জীবনটা আছে কোন রকমে৷’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে আজ নদী বেশি ভাঙছে৷ কারণ গত প্রায় দেড় মাস আগে যখন নদী ভাঙন শুরম্ন হয় তখন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নির্দেশে পাউবো কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙন রোধে কিছু দিন ইলিশা কালুপুর এলাকা দিয়ে মেঘনার পাড়ে জিইও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরম্ন করে৷ তবে ১৫ দিন পর হঠাত্‍ করে পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ঠিকাদার সেখানে জিইও ব্যাগ ফেলা বন্ধ করে দেন৷ তখন থেকেই ভাঙনের তীব্রতা দেখা দেয়৷’হানিফ খলিফা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা যদি মাঝ পথে জিইও ব্যাগ ফেলা বন্ধ না করে আরো কিছু জিইও ব্যাগ ফেলতো তাহলে হয়তো ভাঙন রোধ হতো৷একই গ্রামের বাসিন্দা শামছুদ্দিন (৪৫) বলেন, ‘মেঘনার ভাঙন যেন থামছেই না৷ মেঘনা নদীর ভাঙনে আমার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে৷ আমার বাড়িঘরসহ সব তো নদীগর্ভে বিলীন হইছেই৷ এ ছাড়া ২৭ জেলেকে আমি নগদ ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা দাদন দিয়েছিলাম৷ সেই সব জেলেদের বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা এখন লাপাত্তা৷ ওই টাকা আর পাওয়া যাবে কিনা-তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি৷

শামসুদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘এ পর্যনত্ম আমাদেরকে সরকারিভাবে কোন ত্রাণ বা সাহায্য দেয়া হয়নি৷’ যারা ক্ষতিগ্রসত্ম হয়েছে তাদেরকে কোন ত্রাণ দেয়া হয়নি৷ অথচ যারা ক্ষতিগ্রসত্ম হয়নি তাদেরকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷

মোঃ আলাউদ্দিন (৭৪) নামে অপর একজন বলেন, ‘গত প্রায় দেড় মাসে নদী ভাঙনে বহু মানুষ গৃহহারা হলেও গত ২ দিন ধরে নদীর স্রোত কিছুটা কম মনে হচ্ছে৷ তাই ভাঙন রোধে এখনই নদীর তীরে জিইও ব্যাগ এবং বস্নক ফেলার দাবি জানান তিনি৷ ইলিশা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হযরত আলী চৌকিদার (৫৫) বলেন, গত ২০ বছর যাবত এই খানে বসবাস করছি৷ কিন্তু বিগত বছরে এমন ভাঙন দেখিনি৷ নদী ভাঙনের কারণে তাকে এ পর্যনত্ম ২/৩ বার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে৷ পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সঠিকভাবে নদী ভাঙন রোধে কাজ করছেন না৷ তারা কোন রকম দায় এড়ানোর কাজ করছে৷

তিনি আরো বলেন, গত ৩ দিনে কমপৰে ২ কিলোমিটার এলাকা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে৷ এমনকি এই নদীর গর্ভে ২টি বোট এবং জাহাঙ্গীর (৩৬) নামের একজন মাঝি হারিয়ে গেছে৷ ওই ২টি বোট এবং মাঝিকে এখনও খুজে পাওয়া যায়নি৷ বোট আর মাঝি সম্পর্কে তিনি বলেন, নদীর মাঝ খান দিয়ে ২টি বোট যাচ্ছিল; তখন হঠাত্‍ বোট দুটি নদীর মধ্যে বিলীন হয়ে যায়৷ আর জাহাঙ্গীর নামের মাঝি নদীর কিনারে নৌকায় বসে মাছ ধরার জাল কাটছিলেন, এমন সময় উপর থেকে বড় একটি মাটির স্তুপ তার উপর পরে৷ তখন সে নদীতে তলিয়ে যায়৷ তবে নদী ভাঙনের শিকার শর্বসানত্ম এলাকায় যত্‍ সামান্য সাহায্য দেয়া হচ্ছে৷ এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম বলেন, ‘মেঘনার ভাঙন থামেনি৷ বরং ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে৷’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরম্নদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ভাঙন রোধে পাউবো ও ঠিকাদার অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে৷ এখনও মেঘনার তীরে টিউব ফেলা হচ্ছে৷’ এ পর্যনত্ম ৪১টি টিউব ফেলা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷