Hasina-doinikbarta

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান ও ভবিষ্যত্‍ চ্যালেঞ্জ সাহসিকতা ও আনত্মরিকতার সাথে মোকাবেলা করে দেশ-জাতির উন্নয়নে নিজেদের নিবেদিত রাখার জন্য নতুন পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন৷তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে তা আপনারা অক্ষুণ্ন রাখবেন৷শেখ হাসিনা আনত্মরিকতা ও মানবিক দৃষ্টি থেকে জনগণের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাদের আস্থা অর্জনে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন৷তিনি বলেন,আপনাদের মনে রাখতে হবে, মানুষ তার চরম বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য যায়৷ আইনী সেবা দিয়ে ও মানবিক আচরণ করে গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে৷প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৩তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিৰানবিস সহকারী পুলিশ সুপার (্এএসপি) শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের ভাষণে এসব কথা বলেন৷

শেখ হাসিনা কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন এবং খোলা জিপে করে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন৷ তিনি শিক্ষানবিস সেরা এএসপিদের মাঝে মেডেল বিতরণ করেন৷স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক, একাডেমির অধ্যক্ষ নাঈম আহমেদ এবং উপাধ্যক্ষ অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷প্রধানমন্ত্রী নতুন পুলিশ অফিসারদেরকে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন৷তিনি বলেন, আমি আশা করি আপনারা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন নিশ্চিত করবেন৷

পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করেছে৷তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি যুগোপযোগী আধুনিক পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা এবং এজন্য আমরা বিভিন্ন বাসত্মবমুখী ও জনবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করেছি৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৭৩৩টি ক্যাডার পদসহ ৩২ হাজার ৩১টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ তথাপিও দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশে জনবল যথেষ্ট নয়৷তিনি বলেন, এই বিবেচনায় আমরা বাংলাদেশ পুলিশে আরও ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধানত্ম নিয়েছি৷ ইতোমধ্যেই ১০ হাজার পুলিশ সদস্যের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে৷ বাকি জনবলের নিয়োগ কার্যক্রম অচিরেই সম্পন্ন করা হবে৷শেখ হাসিনা বলেন, রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ বর্ধিত জনবলের সাথে প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সরবরাহের বিষয়টিও আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে৷তিনি বলেন, হোম অব পুলিশ খ্যাত এই একাডেমিকে আমরা ঢেলে সাজিয়েছি৷ নবনিযুক্ত পুলিশ সুপারদের ধাপে ধাপে মৌলিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার অব পুলিশ সায়েন্স’ ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, আনত্মর্জাতিক ও আঞ্চলিক জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে পুলিশের পৃথক বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে৷ এ লক্ষ্যে আমরা পুলিশ বাহিনীকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি৷ তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের ৰেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি৷

সকল অপতত্‍পরতা মোকাবেলায় পুলিশ হচ্ছে জনগণের বর্ম- এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা বরাবরই তাদের জঙ্গী ও নাশকতামূলক কাজে পুলিশকে টার্গেট করেছে৷তিনি বলেন, এর কারণ একটাই- পুলিশকে দুর্বল করতে পারলে তাদের অসত্‍ উদ্দেশ্য হাসিল হবে৷ বার বার আঘাত আসা সত্ত্বেও পুলিশ সাহসের সাথে এই নাশকতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করেছে৷

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহিংসতা মোকাবেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইন-শৃংখলা রৰাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন৷ যার মধ্যে ১৭ জন পুলিশ সদস্য৷সংবিধান, গণতন্ত্র, আইনের শাসন রক্ষার জন্য এ আত্মত্যাগ এক বিরল দৃষ্টানত্ম উল্লেখ করে তিনি বলেন,বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের এই অবদান গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে৷শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী, জাতীয় চার নেতার খুনী ও একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের মাধ্যমে এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে সোপান আমরা রচনা করেছি তাতে পুলিশ বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য৷প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ শানত্মিরক্ষা মিশনে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন৷

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সফলতার এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পর পর দুই মেয়াদে আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের অসমান্য সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে তাঁর সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের সুবাদে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে৷প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী নবীন কর্মকর্তাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত জ্ঞান ও শৃংখলার প্রতি যে আনুগত্য বোধ আপনারা অর্জন করেছেন, তা জনগণের শানত্মি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজে লাগাবেন- এটাই আমার প্রত্যাশা৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লৰ্য স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে পেঁৗছে দেয়া৷ শানত্মি-শৃংখলা রক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তা বিধানই হচ্ছে উন্নয়নের প্রথম সোপান৷ আর এ গুরুদায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ৷

বাংলাদেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এ ধরনের সাফল্য অর্জন করতে হলে আমাদের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির আরো উন্নয়ন ঘটাতে হবে এবং এই গুরুদায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর ওপরই অর্পিত৷২৬ জন নারী সদস্যসহ মোট ১৬১ জন এএসপি এই প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছে৷প্রধানমন্ত্রী কোর্সে অংশগ্রহণকারী সেরা পুলিশ অফিসারদের মাঝে মেডেল বিতরণ করেন৷ প্যারেড কমান্ডার হিসেবে এএসপি হাসিনুজ্জামান কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন৷প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্যে পংকজ বড়ুয়া সেরা শিক্ষানবিস’ এ্যাওয়ার্ড এবং রেজওয়ানা চৌধুরী বেস্ট একাডেমিক এওয়ার্ড এবং ফারম্নক আহমেদ বেস্ট রাইডার’ এ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন৷শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্যারেড গ্রাউন্ডে গ্যালারি এবং পুলিশ একাডেমিতে তরুনিমা ও উর্মি নামে দুটি গেস্ট হাউস উদ্বোধন করেন৷