54333_19

দৈনিকবার্তা-পাবনা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ভারতীয় সিরিয়ালের নামকরনে ও নায়িকাদের ছবি সম্বলিত শিশু শিক্ষা উপকরণে দেদারচ্ছে বিক্রি হচ্ছে পাবনা জেলার সর্বত্র। প্রকাশ্যে বিভিন্ন দোকানগুলোতে নায়িকাদের রঙিন ছবি সম্বলিত এসব উপকরণ (খাতা) বিক্রি হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে বিব্রত হচ্ছে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অভিভাবকদের সচেতন করেও এই সব খাতা ব্যবহার বন্ধ করতে পারছে না শিক্ষার্থীদের। অভিভাকরা বলছেন তারা কোমলমিত শিশুদের এসব খাতা কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। শহরের চেয়ে পাবনার গ্রামগুলোতে এর প্রভাব বেশী পড়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। প্রশাসনের উদাসিনতা এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা। জেলার বিভিন্ন দোকান ও স্কুলগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত, কিরণমালা, বোঝেনা সে বোঝেনার সিরিয়ালের পাখি, বধুবরণ, জলনূপুর, তোমায় আমায় মিলে, দিরা গমনসহ বিভিন্ন সিরিয়ালের নামকরণ এবং নায়িকাদের ছবি মলাট দিয়ে শিশু শিক্ষার খাতা তৈরী করে দেদারছে দোকানগুলোতে বিক্রি ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে পাবনা সদর উপজেলার কলুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন পরাগ বলেন, কয়েকদিন আগে ৫ম শ্রেণীর আঁখি নামের এক ছাত্রীর কাছে এ ধরনের ৫টি খাতা পেয়ে হতবম্ভ হয়ে পড়ি ও সেই খাতাগুলো জব্দ করেছি এবং এ ধরনের খাতা যেন কেউ ব্যবহার না করে সে ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিষেধ করেছি। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা এ ধরনের খাতা বাড়ীতে ব্যবহার করছে। আমাদের নিষেধের কারনে তারা স্কুলে আনছেনা বলে আমরা জানতে পেরেছি। এজন্য আমরা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমার স্কুলের আশ পাশের দোকানগুলোতে এধরনের খাতা বিক্রি থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিষেধ করেছি।

সদর উপজেলার কুঠিপাড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম সালাহ উদ্দিন জানান, আমার বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রীদের এ ধরনের খাতা ব্যবহার করছে। আমরা অভিভাবক এবং স্কুল কমিটিকে বলেও এই খাতা ব্যবহার থেকে ছাত্রীদের বিরত রাখতে পারছি না বলে তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা ইতিমধ্যে এসব বন্ধের জন্য মা সমাবেশ, অভিভাক সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করেছি। কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তিনি মনে করেন এই খাতা শুধু শিক্ষকদের পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়, এজন্য দরকার অভিভাবকের সচেতনা ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ। এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলার দেবত্তর গ্রামের আক্কাজ আলী জানান, আমার সন্তান একদিন স্কুল থেকে এসে পাখি খাতা কিনে দেয়ার জন্য জিদ শুরু ধরে। আমি তাকে নিয়ে একটি স্টেশনারীর দোকানে গিয়ে দেখতে পাই ঐ দোকানে জলনূপুর, কিরণমালাসহ বিভিন্ন ভারতীয় সিরিয়ালের নাম ও নায়ক নায়িকাদের রঙিন ছবি সম্বিলিত খাতা। শিশু শিক্ষা উপকরনে এ ধরনের খাতা দেখে আমি সন্তানকে খাতা কিনে দিতে না চাইলে সে স্কুলে যাবে না বলে জিদ করে। সন্তানের ক্ষতি হবে বুঝেও আমি বাধ্য হয়ে কিনে দেই সেই খাতা।

এ ব্যাপারে গৃহবধু আফরিনা আক্তার, কানিজ ফাতেমা ফাল্গুনী, শবনম মুস্তারী স্বপ্না, সাঈদা পারভীনসহ একাধিক গৃহবধুর সাথে কথা হলে তারা বলেন, ভাই আমরা বাচ্চাদের যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্নতারও আমাদের শেষ নেই আমাদের। জেলা প্রশাসনকেই এ ধরনের খাতা বন্ধে দ্রুত এগিয়ে আসা উচিৎ। তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগকেই দায়ী করে বলে শিক্ষা বিভাগ কেন যে নজর দিচ্ছে না এ ব্যাপারে আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।পাবনা শহরের কয়েকটি দোকনদারের সাথে কথা হয় এ ব্যাপারে। তারা জানান, তারাও বোঝে শিশুদের হাতে এ ধরনের খাতা তুলে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। এমনকি উপজেলা পর্যায় থেকেও আমাদের পাইকারী ক্রেতারা এসব খাতার অর্ডার দিচ্ছে। তাই আমরা ব্যবসায়ীক স্বার্থেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তারা অভিযোগ করেন, এগুলো ঢাকার ‘দোয়া প্রডাক্টস‘‘ সহ ঢাকা ও বগুড়ার কিছু বেনামী প্রেস থেকে এসব শিশুদের খাতা ছাপা হচ্ছে। যার কোন নাম কিংবা ঠিকানা খাতার পিছুনে নেই। এ ব্যাপারে পাবনার ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সালমা খাতুন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো সত্যতা পাওয়া গেলে আমি অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।