goru-hut

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫: বৃষ্টির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গরু ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।একদিকে পশুর হাটে ক্রেতা শুন্যতা অন্যদিকে বৃষ্টির প্রকোপে গরুর রোগবালাইয়ের শংকায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।এসব কারণে ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন পশুহাট ঘুরে দেখা গেছে নানা চিত্র।রোববার সকালে রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুহাট গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার উপস্থিতি সংখ্যা খুবই কম। তারওপর বৃষ্টি বেপারীদের দারুন বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।রাজধানীর সবচেয়ে বড় অস্থায়ী গরুর হাট আফতাবনগর গিয়ে দেখা যায়, প্রবল বৃষ্টিতে গরুর হাটে পানি জমে গেছে।

বৃষ্টিতে গরু এবং খাবার ভিজে যাওয়ায় করুণ অবস্থা সৃস্টি হয়েছে।শাহজাহানপুর রেলওয়ে মাঠে পানি জমে যাওয়ায় কাদায় মাঠ ভরে গেছে। ক্রেতা দূরের কথা বেপারীদের চলাফেরা কষ্টকর হযে দাঁড়িয়েছে।বৃষ্টির কারনে হাটে ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। এ অবস্থা চলতে থাকলে লোকসান গুণতে হবে বলে জানালেন বেপারীরা। েেজলা ও পুলিশ প্রশাসন রোববার থেকে অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দিলেও তিনদিন আগেই রাজধানীর বেশির ভাগ হাট বসেছে। গরুও আসছে প্রচুর। কিন্তু এখনও বেচাকেনা শুরু হয়নি।ব্যবসায়ীরা জানান, বৃষ্টির কারণে যেভাবে গরুর শরীর ভিজছে তাতে নানা আশংকা তৈরি হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টি থাকলে গরু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে। এমনটি মারাও যেতে পারে অনেক গরু।

ঈদের বাকি আর মাত্র চার দিন। শনিবার থেকে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী ১৫টি হাটসহ ২২টি হাটে অনুষ্ঠানিকভাবে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। হাটে পশু বিক্রি শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিনে গরু-ছাগলের পর্যাপ্ত যোগান দেখা গেলেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল যৎসামান্য। ফলে দিনের পুরোটা সময় মূলত বিক্রির জন্য আনা পশুগুলোর সেবা-যতœ করেই কাটিয়েছেন ব্যাপারীরা। রাজধানীর বিভিন্ন হাটঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। হাটে ক্রেতা না পেয়েও মোটেও হতাশ না ব্যাপারীরা। এ বিষয়টিকে বরং তারা যৌক্তিক বলেই মনে করছেন। তাদের ভাষ্য, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সমাগম বাড়বে। কারণ, এখনই কিনে ঈদের দিন পর্যন্ত পশুগুলোর দেখাশোনা করা বা যতœ নেয়ার মতো জায়গা ও মানুষ নেই নগরবাসীর।

শনিবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পশুর হাট বসলেও গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীর হাটগুলোতে কোরবানি পশু আসছে। গত কয়েকদিনের তীব্র গরম থেকে মুক্তি দিয়ে রোববার ঢাকায় বৃষ্টি নামলে তাতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পশু ব্যবসায়ীদের।রাজধানীর খিলখেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী হাটের পশু বিক্রেতা সালমান ফারুক বলেন, লোকজন মাঝে মধ্যে আসে, দর-দাম করে। কিন্তু এখনো কেউ কিনছে না। ঈদের দু’একদিন আগ থেকে পুরোদমে পশু বিক্রি হবে।গরু ব্যবসায়ীরা মনে করছেন আপাতত ক্রেতা না থাকলেও দুই একদিনের মধ্যে ক্রেতার সমাগম ঘটবে। সেই সঙ্গে জমে উঠবে হাটগুলোতবে যে দু’চারজন ক্রেতাকে হাটে পাওয়া গেল তাদের অভিযোগ পশুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। দামের দুই থেকে তিনগুণ বেশি হাঁকা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গরু কেনার চূড়ান্ত সিন্ধান্ত না নিয়ে এলেও বাজারদর যাচাই করতে এসেছিলেন উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের মোয়াজ্জম হোসেন দুলাল। তিনি বলেন, মাত্র তিন মণের একটি গরুর দাম চাচ্ছে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। ৫ মণের পশুর দাম চাচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা।

সকাল থেকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি অস্থায়ী কোরবানিপশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসা শুরু হয়েছে। গরু বিক্রির অনুমতি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হাটের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি লাইনে সারিবদ্ধভাবে পশু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। উল্লেখযোগ্য হারে পশু বিক্রি না হওয়ায় খোশ গল্পে আর পশুর যতœ আর পরিচর্যায় সময় কাটছে তাদের। এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আওতায় ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এগুলো হচ্ছে- সাদেক হোসেন খোকা মাঠ, ধূপখোলার ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, কমলাপুরসংলগ্ন গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজার, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, লালবাগের মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বেড়িবাঁধ ও তার আশপাশের খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা।

অন্য দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি স্থায়ী হাটসহ এ বছর ছয়টি হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- খিলখেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১১ ও ১৩ নং সেক্টর সোনারগাঁও জনপথ সংলগ্ন খালি জায়গা, মীরপুর সেকশন ৬ ওয়ার্ড-৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, পূর্বাচলমূখী ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের পার্শ্বস্ত বাংলাদেশ পুলিশের হাউজিংয়ের জমি সংলগ্ন খালি জায়গা, রায়ের বাজার কবরস্থান সংলগ্ন পশ্চিমাঞ্চল পুলিশ লাইনের জন্য নির্ধারিত খালি জায়গা ও মীরপুর গাবতলী গবাদি পশুর হাট।এসব হাটে সিটি করপোরেশন ঈদের তিন দিন আগ থেকে পশু বিক্রির নিদের্শনা থাকলেও ডিএমপির নির্দেশে শনিবার থেকেই পশু বিক্রির অনুমতি পেয়েছেন ব্যপারীরা।

অন্যদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুমোদিত ছয়টি হাট হলো- কদমতলীর শ্যামপুর বালুর মাঠ, মুক্তি সরণি রোড-আদর্শ নগর রোড- গোয়ালবাড়ি মোড়-বর্ণমালা স্কুলসংলগ্ন ফাঁকা জায়গা, আশকোনা আশিয়ান সিটি হাউজিং এস্টেটের ফাঁকা জায়গা, নতুন বাজার বালু নদীর ১০০ ফুট চওড়া রাস্তার চার নম্বর ব্রিজ থেকে বালু নদী পর্যন্ত উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, সারুলিয়া পশুর হাট এবং মেরুল বাড্ডার আফতাব নগর মেরাদিয়ার ইন্দুলিয়া-দাউদকান্দি-বাঘাপুর।ঝিনাইদহ থেকে ট্রাক ভর্তি করে দুই ডজন ২০টি দেশীয় শঙ্কর জাতের গরু নিয়ে রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজারের পশুর হাট এসেছিলেন গরু ব্যবসায়ী নবীর মিয়া। তিনি বলেন, আমার গরুগুলো প্রাকৃতিকভাবে বড় করেছি। তাই দামও বেশি আশা করছি। বেচা-বিক্রি শুরু হতে এখনো দুই তিন দিন সময় লাগবে জেনেও আমরা গরু নিয়ে এসেছি।

কারণ আজ থেকেই হাট ভর্তি হতে শুরু করবে। তাই হাটের জায়গা দখল রাখতেই আগেভাগে গরু নিয়ে এসেছি।বাজারের ইজারাদার আমিনুল ইসলাম মিঠু বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। এখনো কেউ গরু কিনছে না। ঈদের দুই একদিন আগেই সবাই গরু কিনবে। সবাই এসে শুধু দেখে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি আগামী দুদিন পর থেকেই বেচা বিক্রি শুরু হবে।এদিকে রাজধানীর পশুহাট নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, পশু ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। কোথাও কোনো অবৈধ হাট বসলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।গাবতলী পশুর হাটে ঢোকার পথেই দেখা গেল, বিশাল আকারের সাতটি গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন পাবনার ব্যবসায়ী মাহবুব আলম।রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাটটিতে বিক্রি করে বেশি লাভের আশায় উত্তরাঞ্চল থেকে এসে উঠেছেন একটি হোটেলে, দুই হাজার টাকা ভাড়ায়।মাহাবুবের মতো অনেক গরু ব্যবসায়ী আসতে শুরু করেছেন ঢাকায়। হাটগুলোতে পশু আসতে শুরু করলেও বিক্রি এখনও জমে ওঠেনি। বিক্রেতারা বলছেন, রোববার থেকে জমে উঠবে কেনা-বেচা।

গাবতলীতে সাতটি সিন্ধি গরু আনা মাহবুব জানান, তার আরও ১৭টি গরু শনিবারের মধ্যেই আসছে। এইগুলার দাম ৬-১২ লাখ টাকা। আশা করি, মাইনশের ভাল লাগব।হাটের ভিতরে কিছুদূর এগুলো কুষ্টিয়ার খামারি আমজাদ হোসেনের দেখা মেলে, গায়ে কাদা মেখে লালচে রঙের একটি গরুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন।ভাই গায়ে কাদা মাইখা গরুর যতœ করছি। ভাল দামে গরু বিক্রি হলে কৃষক বাঁচব। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচব,” বলেন তিনি।আমজাদ তার আনা গরুগুলো দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রির ইচ্ছার কথা জানালে পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি বলেন, শুরুতে তো দাম বেশি চাইবেনই। পরে দেখা যাইব, অর্ধেক দামেও গরু বিক্রি করতে পারবেন নাতখন আমজাদের ত্বরিত উত্তর- সময় হইলেই দেখবেন, কত দামে গরু বেচতে পারি।ভারত সীমান্তে কড়াকড়ির জন্য এবার গরুর সংখ্যা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিলেও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক আশ্বস্ত করেছেন, কোরবানির পশুর সঙ্কট হবে না। রাজধানীর অন্য পশুর হাটগুলো ঘুরেও বেচা-বিক্রি তেমন দেখা যায়নি। হাটের ইজারাদাররা বলছেন, ক্রেতারা কিছু এলেও এখন দর যাচাই করছেন, কিনবেন পরে।