sp-24-Shaka-16062014

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ অক্টোবর ২০১৫: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজনের সাফাই সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সাকা চৌধুরীর আইনজীবী মো. হুজ্জাতুল ইসলাম খান এই আবেদন জমা দেন। আইনজীবী মো. হুজ্জাতুল ইসলাম খান বলেন, সাফাই সাক্ষীরা হলেন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ মিয়া সুমরো,ইসহাক খান খাকওয়ানি, সমাজকর্মী আমবর হারুন সায়গল, স্থপতি মুনিব আরজামান্দ খান, ভিকারুননিসা নূনের নাতি রিয়াজ আহমেদ নূন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কূটনীতিক ওসমান সিদ্দিক, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন এবং জিনাত আরা বেগম।অবশ্য প্রথমে হুজ্জাতুল ইসলাম বলেছিলেন, চারজন পাকিস্তানিসহ সাতজনের সাফাই সাক্ষ্যেরব্যাপারে আবেদন করা হয়েছে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সাকা চৌধুরী ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন। একই দিন রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। এদিকে,সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী পক্ষে ৮ জন সাফাই সাক্ষী চেয়ে করা আবেদন আমলে নিলে অরাজকতা সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সোমবার (১৯ অক্টোবর) নিজ কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এটি আমলে নিলে প্রতিটি আসামি একের পর এক দরখাস্ত করবে। এছাড়াও এ মামলার বিচারের সময় সাকা চৌধুরী নানান ধরনের তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। আর এগুলো (অর্থাৎ তিনি দেশে ছিলেন না) যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালত বিচার করেছেন। এ কথার পক্ষে এখন কয়েকজনকে সমন চেয়ে একটি দরখাস্ত করেছেন। এটা আদালতে বিচারার্য।

তিনি আরো বলেন, ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে রিভিউ’র স্কোপটা খুবই কম। সাধারণত আদালতের কোনো ভুল পরিলক্ষিত হলে পুর্নবিবেচনার সুযোগ থাকে। আর তিনি এ আবেদন করেছেন নির্ধারিত সময়ের পরে। অর্থাৎ রিভিউ করতে সময় হচ্ছে ১৫দিন। কিন্তু সে সময়তো শেষ হয়ে গেছে। এটা তামাদি হয়ে গেছে। এখন এ দরখাস্ত আমলে নিলে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। প্রতিটি আসামি একের পর এক দরখাস্ত করবে।অপরদিকে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, প্রয়োজনে আপিল বিভাগ সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এসব ব্যক্তিদের সমন দিয়ে এ ব্যাপারে (যুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী পাকিস্তানে ছিলেন) নিশ্চিত হতে পারেন। এতে দিবালোকের হয়ে যাবে সাকা চৌধুরী বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাকা চৌধুরীর সুনির্দিষ্ট ডিফেন্স হচ্ছে তিনি চট্টগ্রামে থাকতেন না। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে থেকে ঢাকার নটরডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে ধানমন্ডির পৈত্রিক বাসায় থাকতেন। এবং ২৯ মার্চ পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকায় আসেন। পাঞ্জাব যাওয়ার সময় কাইউম রেজা চৌধুরী ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিজ গাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন।

খন্দকার মাহবুব বলেন, ইতিমধ্যে দেশি এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এসব রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়- যদি আদালত অনুমতি প্রদান করেন তবে উপরোক্ত ব্যক্তিরা তাদের এফিডেবিট প্রদত্ত বক্তব্যের ব্যাপারে বাংলাদেশে এসে সত্যতা নিশ্চিতের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পক্ষে রিভিউ শুনানির সময় আটজনকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঁচজন পাকিস্তানের, একজন যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি দু’জন বাংলাদেশি সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিতে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়।

সাকা ও মুজাহিদের করা রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন শুনানির দিন ঠিক করতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৫ অক্টোবর ওই আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদন দুটি ২০ অক্টোবর চেম্বার বিচারপতির আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করেন সুটিওম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরদিন তাঁদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ওই দিনই কারা কর্তৃপক্ষ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদ এবং গাজীপুরের কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ সাকা চৌধুরীকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনায়।

আপিল বিভাগের রায় অনুসারে, পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার বা রায় পড়ে শোনানোর পর ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে হবে। পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার এক দিন আগে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের পক্ষে পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। পুনর্বিবেচনার আবেদন নিষ্পত্তির পর পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ওই সময়ের আলবদর নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একই বছরের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

তাঁরা দুজনই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন।প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত ১৬ জুন মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় দেন। একই বেঞ্চ ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় দুটি প্রকাশিত হয়।এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা আবদুল কাদের মোল্লার এবং গত ১২ এপ্রিল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তাঁরা দুজনই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন।মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল ।