মাতাপিতাকে হত্যার দায়ে ঐশীর ফাঁসির আদেশ

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ১৩ নভেম্বর,২০১৫ : পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে এই দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত ১১টার পর পল্টন থানার ২ নম্বর চামেলীবাগের ফ্লাট নম্বর ৫/বি পঞ্চম তলায় মাতাপিতাকে হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র কন্যা ঐশী রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক সাঈদ আহমেদ আজ এই রায় প্রদান করেন। রায় প্রদানের সময় ঐশী রহমান আদালতে উপস্থিত ছিল। এই মামলায় ঐশী রহমানের বন্ধু আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছে। অপর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে হত্যাকান্ডের পর তার বাসায় ঐশী রহমানকে আশ্রয় প্রদানের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দন্ডবিধির ২১২ ধারা মোতাবেক তাকে ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অর্থ অনাদায়ে এক মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। আদালত রায়ে বলেছে, ঘটনার সময় ঐশী নাবালিকা ছিল। কিন্তু তার বয়স সংক্রান্ত ডাক্তারী সার্টিফিকেট অনুসারে সে সাবালিকা ছিল। এই হত্যাকান্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ঠান্ডামাথায় ঐশী রহমান অনেক সময় নিয়ে হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে। সে পরিকল্পিতভাবে কফির সাথে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে তার মাকে পরিবেশন করে। তারপর চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তাকে হত্যা করে । পিতা মাহফুজুর রহমানকে ঘুমন্ত অবস্থায় একই ছোরা দিয়ে সে খুন করে।
আদালত তার রায়ে বলেছে, এটি একটি জঘন্য হত্যাকান্ড। তাই সর্বোচ্চ সাজা দেয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশ এই মামলায় নেই। রায়ে আরও বলা হয়, খুনের আগে ঐশী রহমান মাতাল অবস্থায় ছিল। এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করার জন্যই সে মাদক গ্রহণ করেছিল। তাকে জোর করে কেউ মাদক সেবন করায়নি। এই মামলায় বাদী ছিলেন ঐশী রহমানের চাচা মো. মশিউর রহমান ওরফে রুবেল। ঘটনার পর ঐশী রহমান আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিল। এই মামলায় সর্বমোট ৩৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। রায় ঘোষণার পর ঐশী রহমান আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। পরে পুলিশ তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য, পিতা ও মাতাকে হত্যার দায়ে ঐশী রহমানকে দুবার ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। তাকে একই সাথে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডও দেয়া হয়। এই ফাঁসির আদেশ হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে। ফাঁসির আদেশ অনুমোদনের লক্ষ্যে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার সকল নথি হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানোর জন্য আদেশ দেয় আদালত।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পি পি মো. মাহবুবুর রহমান। আসামীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মাহবুব হাসান রানা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ডিএমপির ডিবি পুলিশ পরিদর্শক আবু আল খায়ের মাতবর। এই মামলা অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় ২০১৪ সালের ৮ মার্চ।