i_image_1450010898

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫: বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের ছয় প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান।জাপানি মুদ্রার হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় জাপানি ঋণ বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে। রোববার এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাপান সরকার ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়।বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডির জেষ্ঠ্য সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন এবং জাইকার পক্ষে আবাসিক মিকিও হাতায়েদা এ চুক্তিতে সই করেন।এই ঋণের জন্য বার্ষিক সুদের হার হবে ০.০১ শতাংশ। ঋণ শোধ করতে হবে ৪০ বছরে। ঋণ চুক্তিতে সুদের রেয়াতকাল ধরা হয়েছে ১০ বছর; অর্থাৎ, এই সময়ে কিস্তি হবে না। মেজবাহউদ্দিন অনুষ্ঠানে বলেন, জাপানি এই সহায়তা আমাদের অর্থনীতিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে আমাদের অনেক বিনিয়োগ দরকার।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপানি মুদ্রার হিসেবে এটাই বাংলাদেশকে দেওয়া জাপানের সবচেয়ে বড় ঋণ সহায়তা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফরের সময় জাপান সরকার পাঁচ বছরে ছয় বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, এটি তারই প্রতিফলন।জাইকার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ৩৬তম ঋণ এই প্যাকেজের আওতায় প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণ; ঢাকা-চট্টগ্রাম পাওয়ার গ্রিড শক্তিশালীকরণ; শহুর অঞ্চলে ভবন নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন; সেতু উন্নয়ন; মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ সরকারের ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাপান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ ঋণ চুক্তি জাপান সরকারের ৩৬তম ওডিও লোন প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত।

জাপানি মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ ১৩৩ বিলিয়ন ২৬৫ মিলিয়ন ইয়েন। ঋণের বাৎসরিক সুদের হার ০.০১ শতাংশ। যা ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য । চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ ব্যয় করা হবে ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন’ প্রকল্পে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে জাপানিজ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। এ প্রকল্পের আওতায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের অনুকূলে জাইকা কর্তৃপক্ষ ১৫, ৮২৫ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ১০৯ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে।আরেকটি প্রকল্পের আওতায় শিল্প এলাকায় বিদুৎ সরবরাহের মানোন্নয়ন এবং ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। জাইকা কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্পে ২ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে।

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে পশ্চিমাঞ্চলে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৬১টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে জাইকা কর্তৃপক্ষ ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে। যা মোট ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ।উন্নত স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে আনুমানিক ১ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে মেটারননেল, ন্যাশনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ (এমএনসিএইচ) অ্যান্ড হেলথ সিস্টেম ইম্প্রুভমেন্ট’ প্রকেল্পে। জাইকা কর্তৃপক্ষ ১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান করবে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮১ শতাংশ।জাইকা ৭৮৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিবে আরবান বিল্ডিং সেফটি’ প্রকল্পে। যা মোট ব্যয়ের ৮৬ শতাংশ। এ প্রকেল্প ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওতাভুক্ত। এ তিন জেলার শহরাঞ্চলের বেসরকারি ভবনের নিরাপত্তার মানোন্নয়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৯১২ কোটি টাকা।প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করতে ‘উপজেলা গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবেজাইকা এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ ঋণ সুবিধা দেবে। সে হিসাবে প্রায় ৯৫৭ কোটি টাকা। উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে এ অর্থ বরাদ্দ করা হবে।