kaushik-basu_23256

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫: বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু বলেছেন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাংলাদেশে ক্রমাগত বাড়ছে। এ বৈষম্য কমাতে ধনীদের ওপর কর বাড়াতে হবে। রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক গণবক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি, বাংলাদেশ অ্যান্ড রিজিওনাল কো-অপারেশন: প্রবলেম অ্যান্ড প্রসপেক্ট’ শীর্ষক গণবক্তব্য অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কৌশিক বসু বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দুর্নীতি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জগুলোতে জয়লাভ করতে হবে।বর্তমানে চার দিনের সফরে ঢাকায় অবস্থান করছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। শনিবার ভোরে তিনি ঢাকা পৌঁছান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে তার এই ঢাকা সফর।বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সবার অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের সাফল্য সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঢাকায় এসেছেন।সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন তিনি।এ বছর বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ হবে বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। পরবর্তী বছর এ প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ হবে বলেও মনে করেন তিনি।এ প্রসঙ্গে গত ১০ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত বলেছিলেন, যে যাই বলুক এবার জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। এর আগেও অনেক অনেক কথা বলেছিলো। কিন্তু বিশ্ব মন্দা সত্বেও আমরা ৬ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।

অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশকে এশিয়ান টাইগার হিসেবে আখ্যায়িত করে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসু বলেছেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে; যা অন্যান্য দেশের অনুসরণ করার মতো। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ার নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দেশের উন্নয়ন শুধু এ দেশের উন্নয়ন নয়, এ উন্নয়ন সারা বিশ্বে প্রভাব ফেলে।ড. কৌশিক বসু বলেন, শুধু ভালো নীতি একটি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে না। এর জন্য নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি তদারকি ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা জরুরি। একই সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটালেই অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ ভৌগোলিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে এই সুবিধাকে কাজে লাগাতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে জানান তিনি। কৌশিক বসু বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বড় একটি প্রতিযোগী দেশ। দেশটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রবিৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে; যা অন্যান্য দেশের অনুসরণ করার মতো। ২০ বছর আগে যখন বাংলাদেশে এসেছিলাম তথন, ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখা গেছে। গতকাল রাত ১০টার সময়েও ট্রাফিক জ্যামে পড়েছি। এতে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবীদ বিরূপাক্ষ পাল।বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে শনিবার ৪ দিনের সফরে ঢাকা আসেন কৌশিক বসু। কৌশিক বসুর ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় বাংলাদেশ, ভারত তথা বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যা এবং সম্ভাবনার দিক উঠে আসে।সমাপনী বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থান তুলে ধরেন। রিজার্ভ নিয়ে বলেন, আমরা আমাদের বড় এ রিজার্ভ নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নই। এটি নিয়ে ভবিষ্যতে কী কী করা যেতে পারে তা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। কৌশিক বসু বলেন, বেশি রিজার্ভ কোনো সমস্যা নয়। বড় আকারের রিজার্ভ অনেক দেশেরই রয়েছে। তবে এটা শুধু বেশি থাকলেই হবে না। এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।