shanewaz_26926

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫: পৌর নির্বাচনে সরকারী দলের কেউ যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন সেজন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকার প্রধানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অনুরোধ জানান। সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করে শাহ নেওয়াজ বলেন, সরকার দলীয়রা আইনশৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন এ রকম অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আছেন এবং নির্বাচিত তাদের প্রতি আশা থাকবে, তারা আরো বেশি দায়িত্বশীল হবেন। তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। কারণ, এতে সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন আছে।

যদিও ইসি আলাদা, তারপরও এই সরকারের আমলে নির্বাচন করছি। এজন্য যিনি সরকার প্রধান আছেন, তাকেও বলবো বিষয়টি দেখার জন্য।তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বলবো, সরকারে যারা আছেন, তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। আমাদের যেন অপ্রস্তুত না করেন এবং নিজেরাও যেন অপ্রস্তুত না হন।নির্বাচন কমিশনার বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছি। তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যেমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে, তেমনি সরকারও ব্রিবত হয়েছে।সরকারে যারা আছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব অন্যদের চেয়ে তাদের বেশি। তাই যিনি সরকার প্রধান, তারও হস্তক্ষেপ কামনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

তিনি বলেন, আমরা অনুরোধ করছি, সরকারে যারা আছেন, তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। যদিও নির্বাচন কমিশন আলাদা, তারপরও সরকার থাকা অবস্থায় নির্বাচন করছি আমরা। তাই সরকারের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। সেই কারণে যিনি সরকার প্রধান, তাকেও বলবো বিষয়টি দেখার জন্য।তিনি বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে বা এমন কিছু করে আমাদের যেন অপ্রস্তুত করা না হয়। সরকারে যারা আছেন, তারাও যেন অপ্রস্তুত না হয়ে পড়েন। তাদের একটা ভূমিকা আগেও ছিলো, এবারও থাকবে বলেই আশা করি।সন্ত্রাসীদের আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এ বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ যে পরিমাণ আসার কথা ছিল, সে পরিমাণ আসছে না। আপনারা আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আমরা আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা করবো। বিধি লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি এড়িয়ে গেলে, সে যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং নেব।উত্তরবঙ্গে জঙ্গি হামলা আশঙ্কার ব্যাপারে মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বর্তমানে আশঙ্কা নেই। তবে আশঙ্কা সৃষ্টি হলে তারা ব্যবস্থা নেবে।

ভোটকেন্দ্র দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্র দখলকারী যেই হোক, কাউকেই প্রশয় দেওয়া হবে না। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠিনভাবে বলে দিয়েছি, কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যেন না হয়।বিএনপির পক্ষ থেকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের বিষয়ে এই নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমরা সবসময়ই সচেষ্ট। এরপরও কোনো দল যদি অভিযোগ করে, সেটা তাদের ব্যাপার।আমাদের দেশে একটা নিয়ম হয়ে গেছে। অযথা নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করার চেষ্টা করেন অনেকে। তারা মনে করেন, এতে করে নির্বাচন কমিশন চাপে পড়বে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, আমরা কোনো ধরনের চাপ সহ্য করবো না। আমরা আমাদের মতোই চলবো- যোগ করেন মো. শাহ নেওয়াজ।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে শাহ নেওয়াজ বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যা রিপোর্ট পেয়েছি, আপনারা এমন কিছু দেখেননি যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা অনিয়ম দেখেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। যারা ব্যবস্থা নেবেন না, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেবেন না তাদের বিরেুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

রিটার্নি অফিসারদের উদ্দেশে তিনি বলেন,আমরা তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করবো। তবে ব্যবস্থা নিতেই হবে। কেউ না নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে এ কমিশনার বলেন, আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ যে পরিমাণ পাওয়ার কথা, সে পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বৈঠকে তাদের অত্যন্ত খোলামেলা বলেছি। আপনাদের সহযোগিতা করবো। তাদের বলেছি, এগুলো জাতীয় দায়িত্ব, সঠিকভাবে পালন করেন।ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের জন্য পুলিশ প্রধানের সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠকে সুবিধা-অসুবিধার কথা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সেখানে বলেছি, তারা যেন এলোমেলোভাবে না যান। তারা সুন্দরভাবে যাবে সেটি তাদের বলেছি। সাংবাদিকরা আগে যেভাবে যেতেন, সেভাবেই যাবেন। তবে অন্যদের সুযোগ দেবেন।

বৈঠকে উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, সেক্ষত্রে ইসি বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোয়েন্দারা জানিয়েছে, কোনো আশঙ্কা নেই। তবে আশঙ্কা তৈরি হলে তারা ব্যবস্থা নেবে।ইসি পক্ষপাতিত্ব করছে- বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, সবাই দেখেছেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি। নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারপরও কোনো দল অভিযোগ করলে তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাদের দেশে একটা নিয়ম হয়ে গেছে। যারা চাপ সৃষ্টি করতে চায়, তারা অযথা কমিশনকে দোষারোপ করে, তারা মনে করেন, এতে কমিশন চাপে পড়বে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, আমরা কোনো ধরনের চাপ সহ্য করবো না। আমরা আমাদের মতোই চলবো।আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। এতে মেয়র পদে ৯২৩ ও কাউন্সিলর পদে ১ হাজার ১২২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় ৭২ লাখ ভোটার এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এবারই প্রথম স্থানীয় কোনো নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।