02-01-16-PM_Somaj Sheba Dibosh-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০২ জানুয়ারি ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন,এতিমদের টাকা চুরি করার জন্য নয়, জনগণের সেবা করার জন্য তাঁর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে।তিনি বলেন, এতিমদের অর্থ চুরি বা আত্মসাৎ করার জন্য নয় বরং জনগণ ও সমাজের সেবা করার জন্য আমরা সরকারে এসেছি। আমরা এতিমদের কিছু দেয়ার জন্য এসেছি। কারণ আমরা আমাদের বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়েছি। আমি ও শেখ রেহানা ছাড়া আর কেউ এতিম হয়ে এতো কষ্ট পায়নি।তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে দেশে আর কোন এতিম থাকবে না। শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সকল এতিমের দায়িত্ব গ্রহন করেছে। তিনি বলেন, আমি ও আমার সরকার তাদের দায়িত্ব নিয়েছি এবং আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেকের জীবন মান উন্নত করা।প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে এখানে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় সমাজ সেবা দিবস ও সমাজসেবা সপ্তাহ ২০১৬ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজ সেবা অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট প্রমোদ মানকিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নূরুল কবির ধন্যবাদ জানান।প্রধানমন্ত্রী ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করেন।তিনি বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি যে, ভিক্ষা করা কিছু লোকের পেশায় পরিণত হয়েছে। তাদের কিছু সর্দার রয়েছে এবং তারা ভিক্ষা থেকে অর্জন করা অর্থ ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। আমরা তাদের পুনর্বাসন করার পরও তারা আবার পুরনো পেশায় ফিরে আসে।এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার তাদের জীবিকা এবং বিনামূলে তাদের জন্য বাড়ি নির্মান করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গ্রহন করবে। তাদেরকে এই ধরণের নিকৃষ্ট কাজ করতে দেয়া হবে না। এটাই হচেছ বাস্তবতা।ফুটপাতে ও রেলস্টেশনে যারা বসবাস করে ও ঘুমায়, তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করেন।তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিব যে, তারা কোন গ্রাম থেকে এসেছে। তাদের যদি কোন ঘর-বাড়ি না থাকে তাহলে, আমরা তাদের জন্য বাড়ি তৈরী করবো। প্রয়োজন হলে আমরা প্রথম ছয় মাস তাদেরকে বিনামূল্যে খাবার দেবো।

তিনি বলেন, তারাও মানুষ। তাদেরও উন্নত জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে। তারা কেন ফুটপাতে বা রেলস্টেশনে বসবাস করবে বা ঘুমাবে? তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র এ বিষয়ে সকল দায়িত্ব নিবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন মেয়াদে তাঁর সরকার অসচ্ছল, অক্ষম ও সুবিধা বঞ্চিত লোকদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।তিনি বলেন, এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে অক্ষম লোকদের জন্য ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৩৬০ কোটি টাকায় উন্নীত করা, আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এক লাখ লোকের পুনর্বাসন, ১ কোটি ২০ লাখ ভূমিহীন লোকের মধ্যে ৫৫ লাখ একর ভূমি বিতরণ এবং হিজড়া, দলিত ও বেদে সম্প্রদায়ের জন্য দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন।তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনী কার্যক্রমের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সাংবিধানিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ১৯৭৪ সালে প্রথম দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রম চালু করেন। পরে এই কার্যক্রম সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে দেশব্যাপী রুরাল সোসাল সার্ভিস (আরএসএস) কার্যক্রম হিসেবে সম্প্রসারণ করা হয়।তিনি বলেন, আরএসএস কার্যক্রমের ধারাবাহিতকায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক পাইলট স্কিম চালু করেন এবং জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক বন্ধনমুক্তি নিশ্চিত করার ওপর জোর গুরুত্বারোপ করেন।শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের গৌরবোজ্জ্বল সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে তাঁর গৃহীত কার্যক্রম সহায়ক হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও কার্যক্রম এখনো দেশের জন্য পথ প্রদর্শক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে ‘রূপকল্প-২০২১’ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার এবং টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, অসহায় দুস্থ নারীদের ভাতা, অক্ষম ও অস্বচছলদের জন্য ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার অবহেলিত দরিদ্র জনসাধারণের কল্যাণে এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে এবং ইতোমধ্যেই ন্যাশনাল স্যোসাল সিকিউরিটি স্ট্যাটেজি পেপার অনুমোদন করেছে।বিভিন্ন খাতে তাঁর সরকারের অসাধারণ সাফল্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আর কোন ক্ষুধার্ত মানুষ নেই এবং দেশ এখন দারিদ্র্যমুক্ত।আমরা দারিদ্র্য হার ৪৫ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে কমিয়ে এনেছি এবং জনগণের আয়ের ব্যবধান কমিয়েছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আরো এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে যারা একদা উপেক্ষা করতো এখন তারা এ দেশকে সম্মানের চোখে দেখছে।তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি এবং আমরা আমাদের মাথা উঁচু করে রাখতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, সকল স্তরের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের একটি রোল মডেল’ এবং এ দেশ নি¤œআয়ের দেশ থেকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা দেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করবো।এরআগে প্রধানমন্ত্রী দু’জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ব্রেইল বই হস্তান্তর করেন এবং সরকারি শিশু পরিবার থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ প্রাপ্ত মেধাবী ৭ শিক্ষার্থীর মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।