1142273

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ জানুয়ারি ২০১৬: সোমবার ভোর ঠিক ৫টা ৭ মিনিটে অনুভূত ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বা আসবাবপত্রে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও রাজধানীতে একজনসহ সারাদেশে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজনের একজন রাজশাহীর এবং একজন লালমনিরহাটের। তিনজনের মৃত্যুই ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে। সোমবার ভোরে ভূমিকম্পে একযোগে কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও ভুটান। এ ঘটনায় হুড়োহুড়ি করে বাসা-বাড়ি, ছাত্র হোস্টেল থেকে বের হতে গিয়ে সারাদেশে আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৪০। সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, ভোর রাতে ভূমিকম্পের পর ঢাকার বংশালের একটি ছয় তলা ভবন হেলে পড়েছে; ফাটল দেখা দিয়েছে শাঁখারীবাজারের একটি বাসায়।ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন কুমার সরকার জানান, সোমবার সকালে খবর পেয়ে বংশালে মাজেদসরদার রোডের ওই ছয় তলা ভবনে লোক পাঠানো হয়।ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক আবদুল হালিম ঘটনাস্থল থেকে বলেন, এখানে দুই ভবনের মাঝে চার ইঞ্চির মতো ফাঁকা ছিল। ভূমিকম্পের ফলে একটি অংশ পাশের ভবনে লেগে গেছে। তবে আমরা বড় কোনো ঝুঁকি দেখছি না।রাজউককে খবর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের প্রকৌশলীরা এসে পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কলোনির মধ্যে ওই ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম দিক ফাঁকা। দক্ষিণের একটি অংশ পাশের আরেকটি ভবেনের সঙ্গে লেগে আছে।তবে বড় কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা না থাকায় ওই ভবনের বাসিন্দাদের সরানো হয়নি বলে আবদুল হালিম জানান।ওই ভবনের বাসিন্দা পান্না লাল বলেন, প্রতি তলায় ১০টা করে ঘর। ছয় তলায় আমরা মোট ৬০টি পরিবার বসবাস করি। প্রায় তিন বছর আগে এই বিল্ডিং বানানো হইছে।

ভূমিকম্পের পর শাঁখারীবাজার এলাকার ৬২ নম্বর হোল্ডিংয়ে পুরনো এক বাসায় ফাটল দেখা দেওয়ার খবর পেয়ে সেখানেও লোক পাঠানো হয় বলে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন কুমার সরকার জানান।কোতোয়ালি থানার এসআই আবদুল আজিজ বলেন, তিন তলা ওই ভবনে ফাটল ধরেছে। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও চারটি পরিবার সেখানে বসবাস করে।বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পারিবারিক সূত্রে ওই ভবনের মালিক মোট ২২ জন। এদের মধ্যে চারটি পরিবার এখনও সেখানে বসবাস করছে। ভবনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাকিরা অন্য জায়গায় চলে গেছে।সুমন সুর নামের এক বাসিন্দা বলেন, অন্য পরিবারগুলো এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেও আমাদের চারটি পরিবারের সেই সামর্থ্য নেই। ভোর রাতে যখন ভূমিকম্পে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিল, আমরা বাড়ি থেকে নেমে বাইরে দাঁড়ালাম। ফায়ার সার্ভিস আমাদের নিরাপদে সরে যেতে বলেছে। কিন্তু আমরা যাব কোথায়?বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, হেরিটেজের কথা বলে ভাঙতে দিচ্ছে না। এটা কী রাজবাড়ি? এটা তো সাধারণ একটি ভবন। চারপাশে নতুন সব ভবন হয়েছে। শুধু আমাদেরকে ভাঙতে দিচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭; ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল ইম্ফল থেকে ২৯ কিলোমিটার পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম এবং ঢাকা থেকে ৩৫২ কিলোমিটার পূর্ব উত্তর-পূর্বে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি। উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৫৫ কিলোমিটার গভীরে।ঢাকাসহ সারা দেশেই এ ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শীতের ভোরে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙার পর অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে হুড়োহুড়ির মধ্যে আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। আহত হয়ে ঢাকা ও সিলেটে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও অন্তত ৬৫ জন। এর মধ্যে সিলেটে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে চারজন আহত হয়েছেন। ঢাকার বংশালে ভবন হেলে পড়েছে, শাঁখারীবাজারে এক বাসায় দেখা দিয়েছে ফাটল। জয়পুরহাটেও দেড় শতাধিক বাড়ি-ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সুস্মিতা শাহরীন বলেন, কাঁপুনিতে ঘুম ভাঙার পর তিনি ভূমিকম্পের বিষয়টি টের পান। তখনও ঘরের সবকিছু দুলছিল।বাবা-মায়ের সঙ্গে আমি দ্রুত নিচে নেমে আসি। এটা খুবই জোরালো ছিল।ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অধিকাংশ রাজ্যে চার থেকে পাঁচ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ইম্ফলের বিভিন্ন ভবনের দেয়াল, সিঁড়ি ও ছাদ ধসে পড়েছে; মনিপুরের অনেকে এলাকায় টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়েছে।ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেটের ঘর্ষণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রায়ই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সিলেট অঞ্চল দিয়ে যাওয়া ডাউকি ফল্টের কারণে বাংলাদেশও বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে ভূতত্ত্ববিদরা সতর্ক করে আসছেন।