06

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ জানুয়ারি ২০১৬: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য মানুষ পুড়িয়ে মারার দরকার নেই, দেশের সম্পদ নষ্ট করার দরকার নেই। আসুন আমরা সবাই মিলে সুষ্ঠু রাজনীতির সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।মঙ্গলবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিন ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের লক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।প্রসঙ্গত,এ দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করে বিএনপি। ওই উপলক্ষে এক সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, আসুন আমরা আলোচনায় বসি, সংলাপে বসি। কোনো রাগ ক্ষোভ দুঃখ নেই।আসুন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে একসাথে কাজ করি।দেশ ও জনগণের স্বার্থে আসুন আমরা একসাথে কাজ করি।

আমরা চাই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। গণতন্ত্রের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে।অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানও জানান খালেদা জিয়া। বলেন, তারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তাই তাদেরই এটা করতে হবে।তবে সৈয়দ আশরাফ তার বক্তব্যে খালেদা জিয়াকে তীর্যক বক্তব্যে বিদ্ধ করতেও ছাড়েননি। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জন হত্যা ও ১৫শ মানুষকে আহত করেছেন খালেদা জিয়া। সাতশ গাড়ি পুড়িয়েছেন, ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করেছেন কিসের জন্য? গণতন্ত্রের জন্য? কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য মানুষ হত্যা করতে হয় না। আপনি (খালেদা জিয়া) চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করতে। তাই আপনি রক্তের সেই হলি খেলা খেলেছিলেন।খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে আশরাফ আরো বলেন, আপনার অপকর্ম এ দেশের মানুষ কোনোদিন ভুলে যেতে পারে না। এবার সুষ্ঠু রাজনীতিতে পথে ফিরে আসুন। এতে করে আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, আর ওই নির্বাচনে একটি মানুষেরও যেন প্রাণ দিতে না হয়।

তিনি বলেন, জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে আরো শক্তিশালী করবো। আগামী ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শেখ হাসিনার সমাবেশে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বানও জানান সৈয়দ আশরাফ। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানি আখ্যা দিয়ে তাকে অব্যাহতি দিয়ে দল পুনর্গঠন করার জন্য বিএনপি নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ।হানিফ বলেন, পাকিস্তানি প্রেতাত্মা খালেদার বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, বিএনপির বন্ধুদের কাছে অনুরোধ জানাবো আপনারা খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে দলকে নতুন করে গঠন করুন। তাহলে দেশের জনগণ আপনাদের সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে মেনে নেবে।তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল বলে দেশে আজ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। এভাবে দেশ চলতে থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ে পরিণত হবেই।মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে স্বাধীনতাবিরোধীরা সমাবেশ করার অধিকার রাখে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পাকিস্তানের অনুচর হিসেবে বিএনপিনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে রাজনীতি করার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা কী করেছিল আপনি কিভাবে জানবেন। আপনি তো পাকিস্তানের মেহমান ছিলেন। আপনি এখনও পাকিস্তানের মেহমানি ভুলতে পারেননি। এটা প্রমাণ করে- পাকিস্তানের অনুচর হিসেবে এদেশে রাজনীতি করার দায়িত্ব আপনার উপর পড়েছে।তিনি বলেন,পৌরসভা নির্বাচনে এসে খালেদা জিয়া এটা পরিষ্কার করেছেন- গাধা পানি খায় ঘোলা করে। তিনি রাজনীতিকে ঘোলা করেছেন।মতিয়া বলেন, আপনি শহীদদের নিয়ে যতোই ধৃষ্ঠতা দেখান না কেন, তারা এ দেশে অমর হয়ে থাকবেন। দেশের ফসলের মাঠ, নদীর স্রোতে তারা চির অ¤¬ান। দেশের জনগণ এই অমরদের কোনোদিন ভুলবে না।খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ডাক্তার ভুল করলে একজন মানুষ মারা যায়। আর রাজনীতিবিদ ভুল করলে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। আপনি আজ যাদের নিয়ে সমাবেশ করছেন তারাই সেদিন পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। এখনও সময় আছে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসুন। পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের কথা উলে¬খ করে মতিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ জিতেছে, জিতবে। আমরা সিটি করপোশনে জিতেছি, উপজেলা নির্বাচনে জিতেছি, পৌরসভা নির্বাচনেও জিতেছি। সামনে ইউপি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জিতবে।

দুপুর ২টায় আওয়ামী লীগের এই সমাবেশ শুরু হয়।এতে সভাপতিত্ব করছেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সমাবেশ বক্তব্য রাখেন – কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ প্রমুখ ।এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির রাসেল স্কায়ারে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ব্যর্থতার গ¬ানি থেকে আপনি আর বের হতে পারবেন না। আপনাকে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হতে হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না করে আপনি অনুশোচনা করুন।তিনি বলেন, খালেদা-তারেকের কারণেই আজ বিএনপি নামক দলিটি ধ্বংসের পথে। তিনি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করেননি। অথচ তিনি উপজেলা নির্বাচন সিটি নির্বাচন এবং সর্বশেষ পৌর নির্বাচন করেছেন। কিন্তু পৌর নির্বাচনে খালেদার জ্বালাও-পোড়াও-সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জনগণ জবাব দিয়েছে।

সমাবেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হলে এ দেশে গণতন্ত্র থাকতো না। মার্শাল ল’ জারি হতো, তখন আমরাও সমাবেশ করতে পারতাম না বিএনপিও করতে পারতো না।’ পৌর নির্বাচনে সরকারের অধীনে নির্বাচনে এসে বিএনপি নাকে খত দিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি সভা-সমাবেশ করবেন, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু জ্বালাও- পোড়াও-নৈরাজ্য করলে আপনার কালো হাত ভেঙে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ কী জিনিস বঙ্গবন্ধুর সৈনিক কী জিনিস আপনি জানেন না। আপনাকে জামায়াত ছেড়ে দিয়ে গণতন্ত্রের পথে আসতে হবে।আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘পৃথিবীতে একটি পথ হচ্ছে- নির্বাচনে পথ, গণতন্ত্রের পথ, সংবিধানের পথ। আওয়ামী লীগ সব করতে রাজি কিন্তু জনগণের অধিকার হরণ করতে রাজি নয়। আর অসাংবিধানিকভাবে কেউ যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বিচারের ম্যাধমে তার ফাঁসি হবে।’আওয়ামী লীগ কখনো সংঘাতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে শেখ সেলিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত একটি জঙ্গি দল। সন্ত্রাসী এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না। এদের সঙ্গে কিসের বৈঠক? অন্য দেশে জঙ্গি ও সস্ত্রাসী দলগুলোর যেভাবে বিচার হয়েছে সেভাবে তাদেরও বিচার হবে।তিনি বলেন, এদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হত্যা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর এরা মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করছে। সেলিম আরো বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে ক্যান্টনমেন্টে। এদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। এরা অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করেছে।সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।