02_97716

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ জানুয়ারি ২০১৬: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দীর্ঘ দিনের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট।এখন থেকে ২০ দলের সাথে তাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবদুল লতিফ নেজামী। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো মধ্যে অন্যতম একটি ইসলামী ঐক্যজোট। ১৯৯৮ সালে চারদলীয় জোট প্রতিষ্ঠার সময় থেকে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ছিল।বৃহস্পতিবার দুপুরে রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জোটের ত্রি-বার্ষিকী সম্মেলনে চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী এই ঘোষণা দেন।তিনি বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট এখন থেকে স্বতন্ত্রভাবে রাজনীতি করবে। সেজন্য আমরা ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমরা আর জোটে নেই।গত ৫ জানুয়ারি নয়া পল্টনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সমাবেশে জোটের শরিক নেতাদের অনুপস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনার মধ্যেই ইসলামী ঐক্যজোটের এ ঘোষণা এলো।

এই সম্মেলনে নেজামীকে চেয়ারম্যান ও মুফতি মুহাম্মদ ফয়েজুল্লাহকে জোটের মহাসচিব পদে পুননির্ববাচিত করা হয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া’ জরুরি হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে নেজামী বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট এখন স্বকীয়তা ধরে রেখে সাংগঠনিক তৎপরতায় আরও মনোযোগী হবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নেবে।

এর আগে গতবছর সেপ্টেম্বরে বিএনপি জোটে ভাঙন ধরিয়ে বেরিয়ে যায় শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এনডিএফ নামে নতুন ১০ দলের নতুন এক জোটের ঘোষণা দিয়ে নীলু সে সময় অভিযোগ করেছিলেন, ২০ দলের জোটে বিএনপি-জামায়াত সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতো।বিএনপি নেতারা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, সরকার ২০ দলীয় জোটে ভাঙন ধরানোর জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবারও একই অভিযোগ করেন।জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জোট ভাঙার এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না । আন্দোলনের জন্য বিএনপিই যথেষ্ট।

১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে সরকার থেকে হঠাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তখনকার আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তখনকার চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠনের ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির সঙ্গেই ছিল ইসলামী ঐক্যজোট। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে নির্বাচন করে জাতীয় সংসদে দুটি আসনও পেয়েছিল তারা। ফজলুল হক আমিনীর মৃত্যুর পর ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হন আবদুল লতিফ নেজামী। মাওলানা মো. আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট মনে করে, সকল ইসলামী দল, সংগঠন ওলামায়ে কেরাম ও ইসলাম মনস্ক লোকদের সমন্বয়ে একটি সংগঠিত, সমন্বিত ইসলামী শক্তি গড়ে তোলা অপরিহার্য। তাই সকল ইসলামী দল, সংগঠন ও ওলামায়ে কোরামকে এ কাজে এগিয়ে আসা উচিৎ। কেননা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধতার অনিবার্যতা দিন দিন ব্যাপক ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

নেজামী বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজেদের সাংগঠনিক তৎপড়তায় মনযোগী হবে। কেননা স্বকীয়তার অন্তঃপ্রেরণায় ইসলামী ঐক্যজোট স্বতন্ত্র। তাই এখন থেকে ইসলামী ঐক্য স্বকীয়তা বজায় রেখে জোটের কর্মতৎপড়তা চালিয়ে যাবে এবং ইসলামী ঐক্যজোট ঘোষণা করছে যে, ২০ দলের সাথে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই।কনভেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘জোট ছেড়ে দেয়ার জন্য কোনো চাপ ছিল না। বিএনপির বিরুদ্ধেও আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। নিজেদের দলে বেশি সময় দেয়ার জন্যই জোট থেকে বের হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।তিনি আরো বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট মনে করে, সব ইসলামী দল, সংগঠন ওলামা একরাম, ও ইসলামমনস্ক লোকদের সমন্বয়ে একটি সংগঠিত, সমন্বিত ইসলামী শক্তি গড়ে তোলা অপরিহার্য।’

এখন থেকে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজেদের সাংগঠনিক তৎপড়তায় মনযোগী হবে। কেননা স্বকীয়তা অন্তপ্রেরণায় ইসলামী ঐক্যজোট স্বতন্ত্র। তাই এখন থেকে ইসলামী ঐক্য স্বকীয়তা বজায় রেখে জোটের কর্মতৎপড়তা চালিয়ে যাবে।২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবর বেড়ে ১৮ দলীয় জোট হয়। বিএনপি ছাড়া সে সময় জোটের বাকি শরিকরা ছিল জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ।

পরে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দলের একাংশ এই জোটে যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। এদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে গেলেও থাকছে মাওলানা আব্দুল রকিবের নেতৃত্বে একটি অংশ। বৃহস্পতিবার ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামীর বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণার পর মাওলানা আব্দুল রকিব এ কথা জানান। পরে বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেও বিষয়টি জানানো হয়। এদিকে বিকেলের সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ঐক্যজোটের এই অংশের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আব্দুর রকিব জানান, অদৃশ্য কোনো এক মহাশক্তি ইসলামী ঐক্যজোটের মধ্যে এই বিভেদ সৃষ্টি করেছে। সেই মহাশক্তি কে বা কারা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সেটা মহান আল্লাহও হতে পারে। আপনারা জ্ঞানী মানুষ, আপনারাতো সবই বোঝেন।