magura-1419641635

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬: মাঘের শীতে বাঘও কাঁপে-কথাটা সবার জানা। তবে এ বছর শীতের প্রকোপ কম লক্ষ্য করা গেছে। গত সপ্তাহে সারাদেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে শীতের মাত্রা বেড়ে গেছে।কোথাও কোথাও দেখা মিলছে না সূর্যের।এদিকে উত্তরে বইতে শুরু করেছে শৈত্যপ্রবাহ।দক্ষিণাঞ্চলেও শীতের মাত্রা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় তীব্র শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল। সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে আকাশ। রাজশাহী শহরে বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ভারী যান চলাচল করছে আলো জ্বালিয়ে। প্রচণ্ড শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ ও শিশু। শীতের কারণে মানুষের চলাফেরা ও কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা।চুয়াডাঙ্গায় শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পডড়েছে। সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ পথে যানবাহন চলতে দেখা যায়।

এ বছর প্রায় পুরো মৌসুম স্বাভাবিক শীতের জন্য অপেক্ষা করেছে দেশ। শেষ পর্যন্ত মাঘের প্রায় মধ্যভাগে এসে দেখা মিলেছে সেই শীতের। দুই দিন ধরে শীতে কাঁপছে সারা দেশ। শহর-নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে সেই কাঁপুনি প্রাকৃতিক কারণেই বেশি। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষের জন্য তা বয়ে এনেছে বাড়তি কষ্ট ও দুর্ভোগ।এর মধ্যে গত পরশু শুক্রবার থকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস হচ্ছে, আরও দু-তিন দিন সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রিসেলসিয়াস পর্যন্ত কমবে। ফলে নতুন আরও কিছু এলাকা শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়তে পারে। সোমবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।আজ সকাল ৯ টা থেকে ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার এক পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়।আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়াশুষ্ক থাকতে পারে।

টাঙ্গাইল,ফরিদপুর,মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ,সীতাকুন্ড ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর,খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়,সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।পরবর্তী ৭২ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়,রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে।আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়,উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।এ মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।গত সপ্তাহে মাঘের বাঘ পালানো শীতের কিছুটা অনুভূতি পেয়েছিল সারা দেশ। হঠাৎ বৃষ্টিকে সঙ্গী করে আসা সেই শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হলো শৈত্যপ্রবাহে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সীতাকুণ্ড এবং রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রোববার ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৬, রাজশাহীতে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।অবশ্য এমন তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহ মঙ্গলবারও থাকতে পারে বলে জানালেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি বলেন, আগামী বুধবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। মাসের শেষের দিকে নামতে পারে বৃষ্টি। এরপর ফেব্র“য়ারির প্রথম সপ্তাহে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ দিনে তাপমাত্রা বেড়ে কিছুটা রোদের দেখা মিললেও রাতে তাপমাত্রা কমে শীতের তীব্রতা বরং আরও বাড়তে পারে।

প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় তীব্র শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল। সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে আকাশ। রাজশাহী শহরে বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ভারী যান চলাচল করছে আলো জ্বালিয়ে। প্রচণ্ড শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ ও শিশু। শীতের কারণে মানুষের চলাফেরা ও কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা।চুয়াডাঙ্গায় শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পডড়েছে। সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ পথে যানবাহন চলতে দেখা যায়।

শহরের হকপাড়া বস্তির বাসিন্দা আরমানী বেগম বলেন, শীতে বস্তির বাসিন্দারা খুবই কষ্টে আছে। সেখানে শীতবস্ত্রের খুবই অভাব।চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স মালেকা বেগম বলেন, ওই ওয়ার্ডে ১৩ শয্যার বিপরীতে ৫২টি শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এসব রোগীর বেশির ভাগই শীতজনিত নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও বিপুলসংখ্যক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত তিন দফায় ১১ হাজার ১৪৬টি কম্বল বিলি করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও দরিদ্রদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছে।

রাজশাহী : মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে রাজশাহী। গত দুই দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে শীতের তীব্রতা আরো বেড়েছে। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে মাঝারি আকারের শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতাও। রোববার সকালে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় শীতে চাঁন মোহাম্মদ (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত চাঁন মোহাম্মদ ওই উপজেলার আমশো গ্রামের মৃত আব্দুল হামেদের ছেলে। এ ব্যাপারে মৃত চাঁন মোহাম্মদের চাচা কাদের জানান,রোববার সকাল ৬টায় ঘন কুয়াশার মধ্যে উপজেলার শিব নদীর বিলের জমিতে কাজ করছিল চাঁন মোহাম্মদ। এ সময় কনকনে শীতে কাঁপতে কাঁপতে কাহিল হয়ে পড়ে সে। আশপাশের উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর সাড়ে ১২টায় চাঁন মোহাম্মদ মারা যান।তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. রাকিব রাশেদ জানান, প্রচণ্ড শীতে চাঁন মোহাম্মদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগের দিন শনিবার রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর শুক্রবার ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, এটি এ মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রাজশাহীর ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের আবহাওয়া আরো কয়েকদিন থাকতে পারে বলে জানান তিনি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে গত দুই দিনে।শুক্রবার শীতে বাগমারার দেউলিয়া গ্রামের বুলবুলের শিশু সাম (৮) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্লিনিকে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে ভর্তি রয়েছে। শীতে বৃদ্ধ ও শিশুদের বাড়তি যতœ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বরিশাল: মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় থরথর কাঁপুনি শুরু হয়েছে বরিশালে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ২ডিগ্রি তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় রোববার এ অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। সেই সাথে উত্তুরে হিমেল বাতাস বয়ে এনেছে মৃত্যু শৈত্যপ্রবাহ। যে কারণে শীতের তীব্র্রতা প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। আগামী ৩ থেকে ৪ দিন এমন আবহাওয়া বিরাজ করবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে। রোববার এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর একদিন আগে গত শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রায় জানিয়েছেন, রোববারের তাপমাত্রাই এই মৌসুমের সর্বনিুম্ন। সঙ্গত কারণে বরিশালের ওপর দিয়ে এক ধরনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে। এ ধরনের আবহাওয়া আরও বেশ কয়েক দিন বিরাজ করবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

চাঁদপুর: আবহাওয়া পরিবর্তন ও গত কয়েক দিন শীতের তীব্রতা বাড়ায় রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। চাঁদপুর জেলাসহ পাশের বেশ ক’টি জেলা ও উপজেলায় রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু প্রতিদিনই মতলব আইসিডিডিআরবিতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন। মতলব আইসিডিডিআরবি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সব ক’টি ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের প্রচণ্ড ভিড়। বহির্বিভাগ অর্থাৎ বারান্দার মেঝেতেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সেবা নিতে দেখা যায়।আইসিডিডিআরবি সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে ১৪০ থেকে ১৭৫ জন রোগী এখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় তিন গুণের চেয়েও বেশি।

গত এক মাসে এ হাসপাতালে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, হাইমচর, শাহরাস্তি, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর এবং কুমিল্লার বরুড়া, মুরাদনগর, চান্দিনা, কুমিল্লা সদর, দাউদকান্দি, বুড়িচং, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, তিতাস, লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, রামগঞ্জ, নোয়াখালীর চাটখিল, ফেনী সদর, নোয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও কক্সবাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে।চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কুমিল্লা বরুড়ার সিফাতের মা আঞ্জুমান আরা বলেন, তার মেয়ে ঘনঘন বমি ও পাতলা পায়খানা করছিল। এখানে নিয়ে আসার পর ডাক্তারদের চিকিৎসা ও পরামর্শে এখন অনেকটাই ভালো। তিনি জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন ও বেবিজিংক খাওয়ানো হচ্ছে।

দিনাজপুর : মাঘের শুরুতে দিনাজপুরে হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর থেকে শীত জেঁকে বসেছে। হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। বীজতলা নিয়েও চিন্তিত কৃষক।গত মঙ্গলবারের পর থেকে শীতের প্রকোপ বাড়ে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে গত বুধবার থেকে হিমেল বাতাসে জীবনযাত্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। সন্ধ্যার পর এই শীত বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।চিরিরবন্দর কৃষি কর্মকর্তা সুধীন্দ্র নাথ রায় জানান, এ রকম শৈত্যপ্রবাহ চললে বোরো চাষের জন্য সদ্য বপণ করা বীজতলার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রোদ উঠলেই এ সমস্যা কেটে যাবে।

লালমনিরহাট :শৈত্যপ্রবাহে লালমনিরহাটে জেঁকে বসেছে শীত। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। রোগীর চাপে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে গাদাগাদি অবস্থা। উপায় না পেয়ে শীতজনিত রোগীকে রাখা হয়েছে মেঝেতে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা গেছে এক শিশু।লালমনিরহাটে আজ রোববারও সারাদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১২ বেডের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ১০৮ শিশু। হাসপাতালের মেঝেতেও গাদাগাদি অবস্থা। আবার অনেকের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। একই অবস্থা ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও। সেখানে ১০ আসনে রোগী ভর্তির সংখ্যা ৫৭। এর সবাই শিশু। একই চিত্র বাকি চারটি উপজেলা হাসপাতালেও। প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী। প্রয়োজনীয় ওষুধেরও (ইনজেকশন) সংকট রয়েছে হাসপাতালগুলোতেও। ওষুধ সরবরাহ কম হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুরুজ্জামান আহমেদ জানিয়েছেন, কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসা কুলাঘাট গ্রামের ওসমান আলীর শিশু হামিম (দুই মাস) শুক্রবার রাতে মারা গেছে। তিনি জানান, ‘তীব্র শীতের কারণে ছড়িয়ে পড়েছে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ।

পঞ্চগড় থেকে হাসিবুল করিম জানান, মাঘের শুরুতেই উত্তরের হাওয়ায় পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। শীতের তীব্রতা বাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। একই সঙ্গে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক দিন শীতের প্রভাব স্থিতিশীল ছিল। তবে দিনের বেলা সূর্যের দেখা মিললেও তাতে উত্তাপ ছিল না। মাঘের এক একটি দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সারাদিন সূর্যের মুখ দেখেনি পঞ্চগড়বাসী। উত্তরে হিমালয় থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। বর্তমানে এ জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে অবস্থান করছে। শনিবার এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেলের পর থেকে ঠাণ্ডা আরও বাড়তে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত, কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাস বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে। সকালে কুয়াশায় ছেয়ে যায় দিগন্তজুড়ে। দিনের বেলায় যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রৌমারীতে গত ক’দিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। তীব্র শীত সহ্য করতে না পেরে রোববার ভোরে সমেজ উদ্দিন (১০০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার খাটিয়ামারী এলাকার নিহত সমেজ উদ্দিনের পরিবার জানিয়েছেন, হঠাৎ তীব্র শীতের কবলে পড়ে। তাছাড়া বয়স্ক হওয়ার কারণে ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে ভোরে মারা যান তিনি। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে একদিনে ১৫ জন শিশু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. দেলোয়ার হোসেন জানান, ঠাণ্ডার কারণে শিশুদের মাঝে নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে।

পাবনা :তীব্র শীত আর সাথে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে জনজীবন। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে শীতজনিত নানা রোগের প্রকোপ। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ঠান্ডাসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বয়োবৃদ্ধরা। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৮৬ শিশু ভর্তি হয়েছে। আর এক সপ্তাহে শিশুসহ প্রায় এক হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এমন অবস্থায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। আর হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওষুধ সংকটসহ নানা অভিযোগ করছেন রোগী ও স্বজনরা।

সোমবার পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ভর্তি শিশুদের সবাই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। কারো ডায়রিয়া, কারো নিউমোনিয়া, আবার কেউ ধুকছে জ্বরের পাশাপাশি সর্দি-কাশিতে। বেড সংকটে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝো, বারান্দায় জায়গা হয়েছে আক্রান্ত শিশু রোগীদের। বাচ্চাদের নিয়ে তীব্র শীতের মধ্যে জুবুথুব অবস্থায় অবস্থান করছেন অভিভাবকরা। এমতাবস্থায় ওষুধ সংকটসহ স্বজনদের নানা অভিযোগ রয়েছে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কনকনে ঠান্ডায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে রোগীদের। চিকিৎসক ও শয্যা সংকটের কথা স্বীকার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী শ্যামল কুমার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে শীতজনিত রোগে ২৮৬ শিশু ভর্তি রয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে গত সাতদিনে হাসপাতালে ও বাইরে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে ছিন্নমূল আর দিনমজুরদের কষ্টের শেষ নেই। তবু সাধ্য মতো গরম কাপড় আর খড়কুটো জ্বালিয়ে চলছে শীত নিবারণের চেষ্টা। যাদের শীতবস্ত্র নেই, তারা ছুটছেন মার্কেটে। জমে উঠেছে গরম কাপড় বেচাকেনাও। পাবনা শহরের ফুটপাত, হকারস মার্কেট আর পুরাতন কাপড়ের পসড়াগুলোতে পড়ছে উপচেপড়া ভীড়। আর এই সুযোগে পুরাতন কাপড়ের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়িরা ইচ্ছে মতো। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, শৈত্যপ্রবাহ না হলেও আগামী দু-তিনদিন এ রকম শীত অব্যাহত থাকবে। সোমবার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর রোববার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলো চোখে পড়তেই নিমিশেই ঘনকুয়াশার চাদরে ঢেকে যায়। বেলা সোয়া একটার দিকে আকাশ কিছুটা পরিস্কার আর সূর্যের তাপ না থাকলেও আধো আলোকিত অবস্থা।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিকাল থেকে শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে আকাশ। এরপর আকাশ কিছুটা পরিস্কার হতে থাকলেও ১২টার আগে কখনই সূর্যের মুখ দেখা যায় না। সেই সূর্যের কোন উত্তাপ না থাকায় দুঃস্থ অসহায় মানুষের এখন জবুথবু অবস্থা। ঘর থেকে বের হওয়া দুস্কর। উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে এই পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। শীতের কারণে কোথাও মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রচুর রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।