Gazipur-(2-1)- 02 February 2016-Fire-9

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : গাজীপুরে রপ্তানীমূখী পোশাক তৈরীর এক কারখানায় মঙ্গলবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওই কারখানা ভবনের ৮ম তলার অগ্নিকান্ডে গোডাউন ও রপ্তানীর জন্য রাখা তৈরী পোশাক ও কাঁচা মালসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট প্রায় ৬ ঘন্টা চেষ্টার পর দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও সম্পূর্ণ নেভাতে বিকেল পর্যন্ত কাজ করেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে ধোয়ার কারনে কারখানার ৪ শ্রমিক এবং ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের কারনে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় এক ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তাৎক্ষনিকভাবে অগ্নিকান্ডের কারন ও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমান জানা যায়নি। তবে অগ্নিকান্ডের এ ঘটনায় একশ’ কোটি টাকার বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবী করেছেন। এদিকে, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিরাপত্তা ও ঝুকির কারনে আশেপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানায় এদিন ছুটি ঘোষনা করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস, এলাকাবাসি ও কারখানা সুত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ছয়দানা মালেকের বাড়ী এলাকাস্থিত লাবিব গ্রুপের ম্যাট্রিক্স সোয়েটার কারখানার সকালের শিফটের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার সকালে কারখানা এলাকায় জড়ো হচ্ছিল। এ কারখানায় প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করে। শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ৮ তলা বিশিষ্ট ওই কারখানা ভবনের উপরের (৮ম তলা) তলার একটি গোডাউনে হঠাৎ আগুনের সূত্রাপাত হয়। ওই গোডাউনে বিদেশে রপ্তানী করতে শিপমেন্টের জন্য বিপুল পরিমান তৈরী পোশাক (ফিনিশড্ প্রোডাক্ট) ও কাঁচামালসহ বিভিন্ন মালামাল রাখাছিল। মুহুর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো গোডাউন ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার শ্রমিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও এক পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে আগুন পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারন করে। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে প্রথমে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে টঙ্গী, কালিগঞ্জ, সাভার, ঢাকা ইপিজেড, ভালুকা ও ঢাকা ফায়ার সার্ভিসেরসহ মোট ২৪টি ইউনিট আগুন নেভানোর জন্য একযোগে কাজ শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় ৬ ঘন্টা চেষ্টার পর দুপুর দেড়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছিল। তখনও কারখানার ধ্বংস স্তুপ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। বহুতল ওই ক্রখানা ভবনে আগুন নিভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যাবস্থা না থাকায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করেও আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। ঘটনার সময় আগুন নেভাতে গিয়ে ধোঁয়ার কারনে কারখানার ৪ শ্রমিকসহ ফায়ার সার্ভিসের কয়েক কর্মী আহত হয়েছে। তাদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের কারনে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে প্রায় এক ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ওই মহা সড়কের যানবাহন বিকল্প পথে মীরের বাজার ও টঙ্গী হয়ে চলাচল করেছে। এদিকে, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিরাপত্তা ও ঝুকির কারনে আশেপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানায় এদিন ছুটি ঘোষনা করা হয়।

কারখানায় অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, আগুন লাগার কারন ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনো জানা যায়নি।

কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ার সাদাত জানান, প্রায় ৭০ হাজার বর্গফুটের গোডাউনে রক্ষিত রপ্তানীর জন্য তৈরী সোয়েটার এবং সোয়েটার তৈরীর বিপুল পরিমান সুতা, মেশিনারিজ ও আসবাবপত্রসহ সব মালামাল পুড়ে গেছে। রপ্তানী আদেশের এসব মালামাল শিপম্যান্টের জন্য গোডাউনে রাখা হয়েছিল। এতে কারখনার ১০০ কোটি টাকার বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে অগ্নিকান্ডের সঠিক কারন জানা যায়নি, তবে বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, অগ্নিকান্ডের সঠিক কারন ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তাৎক্ষনিক ভাবে নির্ধারন করা যায়নি। তবে তদন্তের পর তা জানা যাবে।

এদিকে, অগ্নিকান্ডের এ ঘটনা তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে প্রধান করে ৫সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রির্পোট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।