মন্দিরে ভয়াবহ আগুনে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১১২, আটক
ভারতের কেরালা রাজ্যের কোল্লম জেলার পারাভুরের পুত্তিঙ্গল দেবী মন্দিরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সোমবার প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১১২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ৪শ’ জন। পুলিশ মন্দির থেকে পাঁচ কর্মীকে আটক করেছে। গত শনিবার একটি উৎসব উপলক্ষে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাজি ফোটানোর প্রতিযোগিতা চলার সময় মন্দিরে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। পুলিশ জানায়, মন্দিরে উৎসবকে ঘিরে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।

পুলিশ রোববার মন্দিরের পাঁচ কর্মীকে আটক এবং বাজি সরবরাহকারী দুই ঠিকাদার ভারকালা কৃষ্ণকুট্টি ও কাজাকুত্তোম সুরেন্দ্রণের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। কৃষ্ণকুট্টি পলাতক রয়েছে এবং আগুনে সুরেন্দ্রণ গুরুতর আহত হয়েছে। মন্দিরের গুদামঘরে বিনা অনুমতিতে ১৫০ কেজি বাজি মজুতের অভিযোগ উঠেছে সুেরন্দ্রেণের বিরুদ্ধে। পলাতক রয়েছে মন্দিরের ১৫ সদস্যের কমিটির সদস্যরা।কোল্লম পুলিশ প্রধান পি. প্রকাশ টেলিফোনে বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।  তিনি বলেন, ‘এটা কেবল আনুষ্ঠানিক আটক নয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আমরা জানতে পারবো এবং এ অনুযায়ী আরো পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজির প্রতিযোগিতার অনুমতি ছিল না মন্দির প্রশাসনের কাছে। অথচ শনিবার সকাল থেকেই এ নিয়ে পুরস্কার ঘোষণা করে ছড়ানো হয়েছে প্রচারপত্র। রাতে শুরু হয় বাজি ফাটানোর প্রতিযোগিত। হঠাৎই বাজির আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে মন্দির চত্বরে জমা করে রাখা বাজির স্তুপে। মুহূতেই গোটা মন্দির ও মন্দির চত্বরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ।  রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডি এ ঘটনার তদন্তের ভার দিয়েছেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতিকে। তদন্তে নামছে রাজ্য পুলিশের অপরাধ দমন শাখাও। মৃতদের আত্মীয়স্বজনকেও দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘এই ঘটনা হৃদয়বিদারক ও ভয়ঙ্কর।’ বস্তুত বাজির জেরে এমন দুর্ঘটনা কেরালায় নতুন কিছু নয়। বেআইনি ভাবে বাজি মজুত, ও ব্যবহার চলে ব্যাপকভাবে। এ বারও তাই হয়েছে। তবে কেরালা প্রশাসনের ভাষ্য, প্রতিযোগিতামূলক ওই আতশবাজির জন্য তারা অনুমতি দেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘আগুনের গোলার সঙ্গে বিকট আওয়াজ হয়। সঙ্গে সঙ্গে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। ঘটনার পর চার দিকে শুধু অগ্নিদগ্ধ দেহ, রক্তমাখা কাপড় পড়ে ছিল। কোথাও পড়ে ছিল দেহাবশেষ, চটি, ভাঙা চাঙড়া। পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া শরীরগুলো দেখে কাউকেই চেনার উপায় ছিল না।