জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার লেনদেনের উৎস জনগণ জানতে চায় বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চক্রান্তে এফবিআই কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার মামলার বিচারে তার ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।ওই বিচারের সূত্র ধরে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হলেও ওই লেনদেন নিয়ে কেন কথা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব।সাংবাদিক শফিক রেহমানকে চক্রান্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শনিবার বেলা ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, শফিক রেহমানকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ এই মানুষটিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যা অমানবিক ও দুঃখজনক।তিনি বলেন,গত বছরের ৩ আগষ্ট পল্টন মডেল থানায় দায়েরকৃত এফআইআর’র ভিত্তিতে শফিক রেহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো মামলায় তার নাম নেই। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের ওপর ভিত্তি করেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, মার্কিন সরকারের ডকুমেন্টে উল্লেখিত সজিব ওয়াজেদ জয় ও প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে সরকার টু শব্দটি করছে না? জনগণ জানতে চায় এই লেনদেনের টাকার উৎস কি? শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে তারও কোনো বিচার হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। এ সময় তিনি এসব বিষয়ে সরকারকে জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়ে শফিক রেহমানকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান ।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন,যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে পেশকৃত মার্কিন সরকারের ডকুমেন্টে ইনডিভিজুয়াল ওয়ান অর্থাৎ সজীব ওয়াজেদ জয় ও ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে সরকার টু শব্দ করছেন না কেন? শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংকগুলোর যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে তার বিচারও কেন হচ্ছে না? আমরা বলতে চাই, এই দুটি বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র আছে কি না- এটা জানার অধিকার অবশ্যই জনগণের আছে। তাই জনগণ এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত চায়। জনগণ জানতে চায় যে, সন্দেহজনক এই লেনদেনের ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উৎস কী? এ্ বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক কে?এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, সরকার জনগণের এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।জয়কে অপহরণ চক্রান্তের যে অভিযোগ শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃখলা বাহিনীর কাছে জয় সম্পর্কিত সংরক্ষিত তথ্য পেতে এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ায় এক বিএনপি নেতার ছেলের কারাদণ্ড হয়েছে যে মামলায় তার সূত্র ধরে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে পুলিশ।তবে ওই মামলার অভিযোগপত্র, আদালতে জমা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের লিখিত প্রতিবেদন, অভিযুক্ত কিংবা সাক্ষীদের জবানবন্দি, মামলার রায় এমনকি ঢাকার রমনা থানায় দায়েরকৃত এফআইআর কিংবা পল্টন থানায় দায়েরকৃত মামলার কোথাও সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান কিংবা বিএনপির কোনো নেতার নাম উল্লেখ নেই বলে দাবি করেন তিনি।শুধু জয়ের ফেইসবুক পোস্টের ভিত্তিতে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে জমা দেওয়া মার্কিন সরকারের রিপোর্টে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ কিংবা দৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ আদালত গ্রহণ না করা সত্ত্বেও শুধু মাত্র তার (জয়) ফেসবুকে দেওয়া একটা পোস্টের এর উপর ভিত্তি করে ঢাকায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে এফআইআর হলো, গোপনে তদন্ত হলো, মামলা হলো এবং বয়োঃবৃদ্ধ ও ভালো মানুষ বলে পরিচিত সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হল ও রিমান্ডে নেয়া হল।

শফিক রেহমান ও কারাবন্দি আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ফাঁসাতে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন বিএনপির মুখপাত্র।শফিক রেহমানকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, শফিক রেহমান বয়োঃবৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ। তাকে প্রথম দফায় ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, যা অমানবিক বলে আমরা মনে করি।শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করতে চাই, বিএনপি একটি জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দল হিসেবে অপহরণ কিংবা হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।বরং বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আমলেই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মী অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছে, যার কোনো বিচার আজও হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, এসব হত্যা বিচার আজ হোক কাল হোক হবে, ইনশাল্লাহ।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আবদ্ল্লুাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ওসমান ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনি, শায়রুল কবীর খান উপস্থিত ছিলেন।