শফিক রেহমান রিমান্ড শেষে কারাগারে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাংবাদিক শফিক রেহমানকে দুই দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলাম এ আদেশ দেন।এ ছাড়া শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানকে শফিক রেহমানের সঙ্গে আদালতের হাজতখানায় ১৫ মিনিটের জন্য দেখা করার অনুমতি দেন আদালত।১৬ এপ্রিল ইস্কাটনের বাসা থেকে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর দুই দফায় তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুলিশ গত বছরের আগস্টে রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। শফিক রেহমানকে আটক করার পর তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পল্টন থানার পুলিশ।

এদিন দুপুরে দ্বিতীয় দফার ৫ দিনের রিমান্ড শেষে এ সাংবাদিককে আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হাসান আরাফাত। পাশাপাশি জামিনের আবেদনসহ তার চিকিৎসা, জেলহাজতে ডিভিশন প্রদান এবং তার স্ত্রীর ও আইনজীবীর সাক্ষতের জন্যও আবেদন করা হয়।শুনানি শেষে বিচারক রায়হান উল ইসলাম জামিন আবেদন নাকচ করে আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর অন্য আবেদনগুলোর বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষকে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ জামান। এছাড়া তার স্ত্রী এবং চার জন আইনজীবীকে আদালত ১৫ মিনিট করে কথা বলার নির্দেশ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড ফেরত আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামি শফিক রেহমান সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। রিমান্ডে নিয়ে আসামির বাড়ি থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংবলিত একটি ফাইল উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেছেন, এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের যুক্তরাষ্ট্রের বাসায় তিনিসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা ও এফবিআইয়ের এজেন্ট রবার্টের সঙ্গে জয়কে অপহরণে ও হত্যা ষড়যন্ত্রে একাধিকবার বৈঠক করেন। আসামি স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তিনি বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠক করেন। তার দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই চলছে। প্রয়োজনের আবার তাকে রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজন হতে পরে। তাই এ পর্যায়ে তিনি জামিনে মুক্তি পেলে তদন্তে বিঘœ ঘটবে। তাই তাকে কারাগারে রাখা প্রয়োজন।আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াসহ প্রমুখ আইনজীবী জামিনের প্রার্থনা করে শুনানি করলে আদালত তা নাকচ করেন।এর আগে গত ১৬ এপ্রিল এ সাংবাদিকের ৫ দিন এবং গত ২২ এপ্রিল ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।গত ১৬ এপ্রিল সকালে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন থানায় এ মামলা হয়। ওই বছর আগস্ট মাসে মামলাটি তদন্ত শুরু করে ডিবি। মামলার এজাহারে শফির রেহমান আসামি ছিল না। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তীতে তদন্তে তার সম্পৃক্ততা পায়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পূর্বে যে কোনো সময় জাসাস সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ উল্লাহ মামুন ও তার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারসহ আসামিরা পল্টনস্থ জাসাস কার্যালয়ে, নিউইয়ার্ক শহরে, যুক্তরাজ্যে ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একত্রিত হয়ে পরস্পর যোগসাজসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী পুত্র বর্তমান তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণপূর্বক হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের জন্য আসামি মোহাম্মাদ উল্লাহ মামুন ও বিএনপি ও বিএনপি জোটভুক্ত নেতৃত্ব আসামি সিজারকে দায়িত্ব দেয়। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে সিজারের ৪২ মাসের কারাদণ্ড হয়।