IMage Courtesy : bdnews24.com with full copyrighted
IMage Courtesy : bdnews24.com with full copyright

ইউএসএআইডি কর্মকর্তা অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যার আগে খুনিরা দুই মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে,রাজধানীর কলাবাগানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা, অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যায় জড়িত আটক তরিকুল ইসলাম শিহাবকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। রোববার পুলিশের করা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কায়সারুল ইসলাম।এদিন আসামিকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক বাহার উদ্দিন।

গতকাল শনিবার (১৪ মে) রাতে কুষ্টিয়ার ছয় রাস্তার মোড় থেকে শিহাবকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আনসার আল ইসলামের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে বলে জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) বিভাগ। রোববার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, ওই হত্যাকাণ্ডে শিহাবই খুনিদের অস্ত্র সরবরাহ করেন। হত্যাকাণ্ডের দিন ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ঘাতকদের সহায়তা করেছিলেন শিহাব।শিহাব ১৯৯৮ সালে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) যোগ দেন। পরে ২০১৫ সালে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলাটিমে (এবিটি) যোগ দেন। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া অঞ্চলে এবিটির একটি ইউনিটের দায়িত্বে রয়েছেন। ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের আরও জানান, প্রায় দু’মাস ধরে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তবে সর্বনিম্ন এক মাস আগে স্লিপার সেলের কাছে জুলহাজকে হত্যার বিষয়টি জানানো হয়।সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, শিহাব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২৫ এপ্রিল কলাবাগানের একটি বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জুলহাজ যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডিতে চাকরি করতেন। তিনি সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাহবুব ছিলেন নাট্যকর্মী।জুলহাজ-তনয়কে হত্যার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকেও কোপায়। পরে কলাবাগানের ডলফিন গলি দিয়ে পালানোর সময় কলাবাগান থানার পুলিশের এক সদস্য এক দুর্বৃত্তকে জাপটে ধরেন। দুর্বৃত্তরা তাকেও কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় এক দুর্বৃত্তের কাছ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ব্যাগে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নয় ধরনের আলামত পাওয়া যায়।

জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে হত্যার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) কথিত বাংলাদেশ শাখা ‘আনসার আল ইসলাম।জুলহাজ ও মাহবুব হত্যার ঘটনায় কলাবাগান থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি অস্ত্র আইনে। নিহত জুলহাজ মান্নানের ভাই মিনহাজ মান্নান হত্যা মামলাটি করেছেন।রাজধানীর কলাবাগানে জোড়া খুনের ওই ঘটনায় কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার শরিফুল ইসলাম ওরফে শিহাববের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়ার কথা বলেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

শিহাবকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে রোববার পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন,শিহাব আমাদের জানিয়েছে, হত্যাকারীরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিল।মূলত এপ্রিল মাসকেই কাজের টার্গেট হিসেবে ধরেপ্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা।ঢাকায় ইউএসসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা জুলহাজ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাত ভাই। তিনি সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাময়িকী রূপবান সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন।

তার বন্ধু তনয় ছিলেন লোকনাট্য দলের কর্মী। পিটিএ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে শিশু নাট্য প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করতেন তিনি।প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী সেদিন হামলায় অংশ নিয়েছিল অন্তত পাঁচ থেকে সাত জন। হামলাকারীদের অস্ত্রাঘাতে ওই বাড়ির দারোয়ান পারভেজ মোল্লা আহত হন। বাধা দিতে গিয়ে আহত হন মমতাজ নামের এক এএসআই।খুনিরা পালানোর সময় তাদের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে রেখেছিলেন মমতাজ, যেখানে ছিল একটি পিস্তল, একটি শাটারগান, গুলি ও মোবাইল ফোন।ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল বলেন, শিহাব আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা দুটি অস্ত্রের একটি (শাটারগান) নিজের বলে জানিয়েছে সে। এর আগেও আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের একাধিক অপারেশনে সে বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিল।১৯৯৮ সাল থেকে শিহাব হরকাতুল জিহাদের (হুজি) এর সদস্য হিসেবে সিলেট এলাকায় কাজ করত দাবি করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে সে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেয় এবং কুষ্টিয়া এলাকায় কাজ শুরু করে। বর্তমানে সে কুষ্টিয়ায় এই সংগঠনটির একটি ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।এই খুনের ঘটনায় অপারেশনের নেতাসহ তিনজনকে শনাক্ত করা গেছে উল্লেখ করে কাউন্টার টেররিজম বিভাগের এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন,এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি এই হত্যাকাণ্ডে অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে ছিল শিহাব।