10-06-16-Pabna_Dead-10

এবার টার্গেট কিলিং’র শিকার হলেন পাবনার হেমায়েতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমের ধর্মপ্রচারক নিত্যরঞ্জন পান্ডে (৬৫)। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় প্রাত:ভ্রমনরত অবস্থায় তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ধর্মপ্রচারক গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানার আড়োয়াকংসু গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের সৎসংঙ্গ আশ্রমের ধর্মপ্রচারকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঘাতকদের গ্রেফতার দাবিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদ ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী জানিয়েছে। আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ডায়াবেটিকে আক্রান্ত ধর্মপ্রচারক প্রতিদিনের মতো শুক্রবার ভোরে প্রাত:ভ্রমনে বের হন। তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজের ১নং গেটের কাছে এলে দুর্বৃত্তরা তার ঘারে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। আশ্রমের সেবক হরিপদ মজুমদার প্রাত:ভ্রমনে বের হয়ে মেডিকেল কলেজের কাছে তার মৃতদেহ দেখতে পায়। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে পাবনা সদর থানায় নিয়ে আসে।

ধর্মপ্রচারক হত্যাকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ, জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ পাবনা সদর থানায় ভীড় জমায়। জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল রহিম লাল সকালে থানায় এসে ধর্মপ্রচারকের লাশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি জামায়াত টার্গেট কিলিং’র পথ বেছে নিয়েছে। তিনি ঘাতকদের দ্রুত আটকের দাবী জানান। দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে ধর্মপ্রচারকের লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।মিছিলটি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘাতকদের গ্রেফতার দাবীতে আল্টিমেটাম দেন। পুলিশ ঘাতকদের গ্রেফতার করতে ব্যার্থ হলে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়। এ সময় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ পাবনার সাধারণ সম্পাদক বিনয় জ্যোতি কুন্ডু, পুজা উদযাপন পরিষদ পাবনার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র ঘোষ, পূজা উদযাপন পরিষদ সদর উপজেলার সভাপতি প্রভাস চন্দ্র ভদ্র, সাধারণ সম্পাদক কমল কৃষ্ণ দাস, পূজা উদযাপন পরিষদ পাবনার পৌর সভাপতি বলাই চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক দিপঙ্কর সরকার, সৎসঙ্গ আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।প্রতিবাদ সভা শেষে নিহত ধর্মপ্রচারকের লাশ হেমায়েতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমে নেয়া হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় আশ্রমের শতাধিক সদস্য সদালাপি নিরিহ ধর্মপ্রচারকের লাশ ঘিরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এরপর ধর্মপ্রচারকের আতœার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। প্রার্থনা শেষে তার লাশ গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। নিহত ধর্মপ্রচারক ২ ছেলে ১ মেয়ের জনক। তার বড় ছেলে নন্দ দুলাল পান্ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরিরত।সৎসঙ্গ আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষ বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।পাবনার পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম সদর থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে সকালে দু’দফা বৈঠক করেছেন। ঘাতকদের আটকে পুলিশি অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধর্মপ্রচারকের হত্যায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি পাবনার সভাপতি ডা. ইলিয়াস ইফতেখার রসুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম রাজা গভীর শোক ও নিন্দা জানিয়ে বলেছেন দেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারায় এ ধর্ম প্রচারককে হত্যা করা হয়েছে।