CmoLM7BWEAAWx1L

গুলশানে হামলাকারীদের প্রশংসা করে বাংলাদেশে আরও জঙ্গি হামলার হুমকি দিয়ে আইএসএর এক নতুন ভিডিওর খবর দিয়েছে সাইট ইনটেলিজেন্স গ্র“প।ওই ভিডিওতে তিন তরুণকে বাংলায় কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। সাইটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে বলা হচ্ছে, ওই বার্তা এসেছে সিরিয়ার আইএস কথিত রাজধানী আর রাকা থেকে।আইএস এর পতাকা সম্বলিত ভিডিওতে তিন তরুণের মধ্যে একজনের মুখ ছিল কাপড়ে ঢাকা, আরেকজনের মুখভর্তি দাড়ি।তাদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে সাইট ইনটেলিজেন্স গ্র“পের প্রধান রিটা কাটজ গুলশানের ঘটনার দিকে ইংগিত করে মঙ্গলবার এক টুইটে লিখেছেন ওট ঝলক মাত্র… বারবার ঘটবে।ওই ভিডিও এবং তিন হুমকিদাতার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে; চেহারার মিলের কারণে কেউ কেউ তাদের সম্ভাব্য পরিচয়ও বলছেন। তবে যাচাই করা সম্ভব না হওযায় এখানে তা প্রকাশ করা হল না। ভিডিওতে আইএসএর বার্তা ও মতবাদের প্রচারে আরবির সঙ্গে বাংলা তর্জমাও দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আইএস এর হামলার নমুনার সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির ছবিও। এতে সমালোচনা করা হয়েছে বাংলাদেশের সরকার ও গণতন্ত্রের।ভিডিওতে এক তরুণকে বলতে শোনা যায়, শেখ আদনানির নির্দেশে তারা ‘খ্রিস্টান, ইহুদি ক্রুসেডার ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ করছে এবং তা কোনোভাবেই কৌতুক নয়।

গত শুক্রবার রাতে একদল অস্ত্রধারী জঙ্গি গুলশানের ওই ক্যাফেতে হামলা চালালে দেশি বিদেশি অতিথিরা সেখানে জিম্মি হন। হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়।আইএস ওই হামলার দায়ী স্বীকার করেছে বলে হামলার রাতেই খবর দেয় সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ। নিহত কয়েকজনের ছবি এবং পরে হামলাকারী হিসেবে পাঁচজনের ছবিও তারা প্রকাশ করে।অবশ্য বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গুলশানের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি। ওই হামলার পর শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উপর আস্থা রাখুন। ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আমরা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।ওই ভিডিওতে তিন তরুণকে বাংলায় কথা বলতে দেখা যায়। সুস্পষ্ট বাংলায় কথা বললেও ওই তিন তরুণ কোন দেশের নাগরিক তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ওই ভিডিও এবং তিন হুমকিদাতার ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। চেহারার মিলের কারণে কেউ কেউ তাদের সম্ভাব্য পরিচয়ও বলছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করা হল না। ভিডিওতে এক জঙ্গি বলছে, বাংলাদেশের তাগুত সরকার, এদের সমর্থক ও এদের কর্মচারীদের উদ্দেশে, আমি তোমাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই কেমন করে তোমরা ডেমোক্রেসিকে (গণতন্ত্রকে) সাপোর্ট করো? ডেমোক্রেসি নামক এই শিরকি মতবাদকে তোমরা কিভাবে সাপোর্ট করো?’তোমরা কি জানো না ডেমোক্রেসি হচ্ছে সেই মতবাদ যেখানে বলা হয় ক্ষমতা এবং আইন প্রণয়নের ক্ষমতা মানুষের হাতে, যেখানে আল্লাহ সুবহানা তায়ালা বলে দিয়েছেন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।ওই জঙ্গি আরও বলে,আমি বাংলাদেশের তাগুত (সীমালঙ্ঘনকারী বা আল্লাহদ্রোহী) সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, যে জিহাদ আজ বাংলাদেশে এসেছে, যে জিহাদ তোমরা প্রত্যক্ষ করছো, এরকম জিহাদ তোমরা এর আগে কখনও দেখো নাই। এই জিহাদ হচ্ছে সেই জিহাদ যার প্রতিশ্রুতি রাসুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়ে গিয়েছিলেন, সুতরাং তোমরা কখনওই এই জিহাদকে বন্ধ করতে পারবে না।

জিহাদ সফল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে ওই জঙ্গি আরও বলে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা জয়ী হই এবং তোমরা পরাজিত হও এবং সারাবিশ্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত না হয়। একে তোমরা কখনওই রুখতে পারবে না, সুতরাং এ চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলে, বাংলাদেশে তোমরা এখন যা দেখছো তা জিহাদের একটি ঝলক ছাড়া আর কিছু নয়…বাংলাদেশে যা দেখেছো সেটা রিপিট, রিপিট এবং রিপিট হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত শরিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়… আমরা শেষ পর্যন্ত তোমাদের সাথে লড়ে যাব, হয় আমরা বিজয়ী হব, অথবা শাহাদাৎ লাভ করব।এরপর দ্বিতীয় জঙ্গি বাংলাদেশের সব সরকারকে দোষারোপ করে বলে, আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই তবে এই ভূমিতে সমস্ত সরকার আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে মানবরচিত আইন দ্বারা পরিবর্তন করেছে। যার ফলে তারা তাগুত হয়ে যায়; তারা কাফের হয়ে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ অর্থাৎ সশস্ত্র কিতাল করা ফরজে আইন হয়ে যায়।তৃতীয় জঙ্গি জিহাদিদের উদ্ধুব্ধ করে গুলশানে হামলার দিকে ইঙ্গিত করে বলে, বাংলাদেশে যে কাজটি তারা করেছেন, সেটি চমৎকার একটি কাজ।

উল্লেখ্য, ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে শুক্রবার (১ জুলাই) রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল সসস্ত্র জঙ্গি ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে রেস্টুরেন্টটি নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার এবং ২০ জনের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি। বাকিরা বাংলাদেশি। এ ছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে গত শুক্রবার জঙ্গি হামলার পর গোয়েন্দা নজরদারিতে আসছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও ছাত্রদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখতে সরকারের সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকে। রোববার সরকারের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়,শুক্রবার নিহত জঙ্গিদের ছবি প্রকাশের পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বের হয়ে আসছে তাদের পরিচয়। যাদের অধিকাংশই দেশের নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। এ কারণে কয়েকটি ধাপে এ নজরদারি চলবে। প্রথমে সন্দেহভাজন স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হবে। এরপর ওই শিক্ষকদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই-বাচাই করা হবে। এদের মধ্যে প্রাধান্য পাবে যেসব শিক্ষক দেশের বাইরে থেকে পড়াশুনা বা চাকরি করে বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তাদের বর্তমান কার্যক্রম ও অতীত নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করবে গোয়েন্দারা।শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রদের গতিবিধিও নজরদারিতে রাখা হবে। ছাত্ররা কাদের সঙ্গে মিশছে। কোন কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও খতিয়ে দেখবে গোয়েন্দারা। এছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি কি কি ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাও নজরে রাখা হবে। স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-শিক্ষকদের পাশাপাশি যেসব দেশি-বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশে অতীতে কাজ করে গেছেন। একপর্যায়ে বিদেশে গেছেন আবার দেশে ফিরে এসে কাজ করছেন তাদেরকেও নজরদারির আওতায় রাখা হবে। তাদের মধ্যে একটা অংশ আছেন যারা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছেন। তাদেরকেও নজরদারির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সরকারের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা। দেশে অবস্থানরত এসব দেশি-বিদেশি নাগরিকদেরও গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) বোম ডিস্পোজাল টিমের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন বলেন, স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই তৎপর আছি। সেই ২০০৯ সাল থেকে আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। গুলশানের ঘটনাটা আবার নতুন করে ভাবাচ্ছে। আমরা এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে সজাগ আছি।কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট শুধুমাত্র মহানগরীতে নয় এটা জাতীয়ভাবে সারাদেশে করতে হবে উল্লেখ করে ছানোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে কাউন্টার টেরোরিজম শুধুমাত্র মহানগরীতে রয়েছে। কিন্তু বাইরের দেশে জাতীয়ভাবে এসব কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট করা হয়। ঢাকায় কিন্তু জঙ্গিরা সংঘবদ্ধ হতে পারে না। কারণ ঢাকায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট আছে। সারাদেশে জাতীয়ভাবে এটা করা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটা হয়ে গেলে জঙ্গি তৎপরতা দেশে আর কোথায়ও সংঘবদ্ধ হতে পারবে না।