09-08-16-PM_ECNEC Meting-3

উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশেও বাতাস থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় সরকার এজন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে ফেনীর সোনাগাজিতে একটি বায়ু চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন এবং প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের শস্য সংগ্রহ পরবর্তী সহযোগিতার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ ৬ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।এসব প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৮০২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা যোগান দেয়া হবে।মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।বৈঠকশেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এপ্রকল্পটি সফল হলে দেশের অন্যন্য জায়গায় বায়ু চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মার্ণ করা হবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, ফেনীর সোনাগাজিতে ১০০ মেগাওয়াট বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভুমি অধিগ্রহণের জন্য ১০২ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করেছে একনেক। তিনি বলেন, ৬ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৮০২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা যোগান দেয়া হবে।

বৈঠকশেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ফসল ঘরে আনার পরে কৃষকরা যাতে ন্যাষ্যমূল্যে তার উৎপাদিত শস্য বিক্রি করতে পারে, এজন্য এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। অর্থের অভাবে কৃষকরা অল্প দামে আগেভাগেই ফসল বিক্রি করে থাকেন। এজন্য প্রকল্পের আওতায় শস্য কাটার আগে কৃষকদের ঋণ দেয়া হবে। ঋণের এই টাকা কৃষকরা তার সন্তানের লেখাপাড়ার খরচ ও কৃষি উপকরণের পেছনে ব্যয় করতে পারবেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ঋণের পরিবর্তে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার কথা বলেছেন।তনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে পাইলট আকারে প্রকল্পটি ৫ জেলায় বাস্তবায়ন হবে। পরবর্তীতে এটি সম্প্রসারণ করে অন্যান্য জেলার জন্য প্রকল্পটি নেয়া হবে।প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কৃষকরা উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য যেমন পাবেন, তেমনি সঞ্চয়ও করতে পারবেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত।প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকরা প্রত্যেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঋণ পাবেন।একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো- ফরিদপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় পতেঙ্গা, আনোয়ারা এবং পটিয়ায় পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্প। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় হবে ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ১০০ মেগাওয়াট সৌর ও ১০০ মেগাওয়াট বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৯২ লাখ টাকা।ঢাকা নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এদিকে, জুলাই মাসে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরে নতুন নতুন খাদ্যপণ্য বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। যার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। যে কারণে খাদ্যপণ্যে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জুনে এ হার ছিল ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।ডাল ও চিনির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।এর প্রভাবও পড়েছে খাদ্যে।মঙ্গলবার (০৯ আগস্ট) পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনে কক্ষে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া জুলাই মাসের ভোক্তামূল্য সূচকের (সিপিআই) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

ডাল, চিনি, মুড়ি, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, শাক-সবজি, ফল, মসলা, তামাক, দুধজাতীয় দ্রব্যাদি এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর মূল্য জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে বেড়েছে। মাসিক ভিত্তিতে অর্থাৎ মে মাসের তুলনায় জুন মাসে খাদ্য সামগ্রী উপ-খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে সরকার বাড়তি দামে চাল ও ধান সংগ্রহ করেছে। এর প্রভাবও পড়েছে খাদ্যপণ্যে।পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য প্রকাশ করে বলেন, ঈদের কারণে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।ঈদের কিছু নতুন নতুন খাদ্যপণ্য বাড়তি দামে কেনা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকার বাড়তি দামে কৃষকের কাছ থেকে খাদ্যপণ্য কিনে সংগ্রহ করছে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। সরকার যদি বাড়তি দামে কৃষকের কাছে খাদ্যপণ্য না কেনে, তবে কৃষকরা সমস্যায় পড়বেন। আমাদের সব দিক বিবেচনা করতে হচ্ছে। তবে বাজেটে যে প্রাক্কলন করেছিলাম তা ধরে রাখতে পেরেছি।জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার চড়া হলেও মাসওয়ারী সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। জুন মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।তবে বিবিএ বলছে, স্বস্তি দিয়েছে খাদ্য বহির্ভূত পণ্য। জুন মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, জুলাই মাসে কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।বিবিএস এর মূল্যস্ফীতির হার পর্যালোচনা করলে দেখা গেছে, জ্বালানি ও আলো, প্রসাধনী, জুতা, পরিধেয় বস্ত্র, বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ এবং বিবিধ সেবা খাতের মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হয়েছে।জুলাই মাসে গ্রামীণ পর্যায়ে সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্টের ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার কমে হয়েছে ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জুন মাসে এ হার ছিল ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ফলে গ্রাম পর্যায়েও স্বস্তির সঙ্গে খাদ্য ও খাদ্য বর্হিভূত পণ্য কিনতে পারছেন গ্রামের মানুষ।