বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

জনগণের কণ্ঠরোধ করতে সরকার নতুন নতুন আইন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এজন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা নির্ধারণ করে ঘুরে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ আহ্বান জানান।আমার দেশসহ ৩০টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে এবং মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবিতে ওই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ‘আমার দেশ পরিবার।৩০টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় সাংবাদিকরা জোরালো কোনো প্রতিবাদ না করায় হতাশা প্রকাশ করে বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া এবং গ্রেফতার সব সাংবাদিকদের মুক্তি দাবি করেন মির্জা ফখরুল।তিনি বলেন, নতুন নতুন আইন হচ্ছে। এই আইনে এখন কথাও বলা যাবে না। এসব আইনে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এক কোটি টাকা জরিমানাসহ বিভিন্ন বিধান বিধান রাখা হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এগুলো করে মানুষের কণ্ঠরোধের চেষ্টা হচ্ছে। এখন আপনাদের (গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের) কী ভূমিকা হবে তা আপনাদেরই নির্ধারণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা ধরে নিয়েছি শেষ জীবনে হয়তো জেলে কাটাতে হবে। কারণ যে মামলা আছে, সেই মামলায় যদি ৫-১০ বছর ধরে জেল হয়, হিসেব করেছি ২৫০ থেকে ২৬০ বছর হবে। অতএব আপনাদেরই (সাংবাদিক) ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে বাস করতে চান, স্বকীয়তাকে এবং নিজস্বতাকে রক্ষা করতে চান, তাহলে স্বজনহারা, পুত্রহারা ও স্বামীহারাদের জন্য আপনাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

বিএনপির জাতীয় ঐক্য বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে যাই, কথা বলি। তারা বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেন। আমার কথা হচ্ছে, শর্ত জুড়ে দেন ঠিক আছে, কিন্তু আপনার ওপরে যখন খড়গটা এসে পড়বে, তখন আপনি কাকে শর্ত জুড়ে দেবেন?

দেশে রাজনৈতিক স্পেস নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কথা বলারও অধিকার নেই। কথা বললেই গ্রেফতার হতে হয়। পল্টন ময়দান, মুক্তঙ্গনসহ রাজধানীর বিভিন্নস্পটে এক সময় বিএনপি জনসভা করলেও এখন আর অনুমতি দেয়া হয় না।এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ৩১ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি একটি জনসভার জন্য স্থান বরাদ্দ চাইলেও ‘আগস্ট মাসে সমাবেশ করা যাবে না’ বলে তাদের সেদিন অনুমতি দেয়া হয়নি। এর পরবির্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১ সেপ্টেম্বর করতে বলেন।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সবগুলো কার্যালয়ে সব সময় পুলিশ প্রহরায় থাকছে। অনেক ক্ষেত্রে জেলা কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খুললেও সেখানে নেতাকর্মীর বদলে পুলিশ বসে থাকছে।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বলে কেন্দ্র থেকে তৃনমূল পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভয়াবহ জঙ্গিবাদের কথা বলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে ভীতিও তৈরি করা হচ্ছে আর বাণিজ্যটাও ভালো হয়। ভালো পয়সা-কড়ি কামাই হয়।

এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, মিরপুরে কায়সার নামে প্রাক্তন এক বিএনপি নেতাকে কল্যাণপুরের তাজ ভবনের জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে আইনশৃংখলা বাহিনী। শেষ পর্যন্ত ৫ লাখ টাকায় রফা হওয়ায় তিনি ওই টাকা দিয়ে জঙ্গি মামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। অন্য একটি মামলায় তাকে জেলে দেয়া হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে এখন ‘স্বৈরাচারী রূপ’ নিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করতে ফ্যাসিস্ট সরকারে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।