চট্টগ্রামে দুর্ঘটনাস্থলে গ্যাসের ঝাঁজাল গন্ধ

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সরকারি এক সার কারখানার ট্যাংক ফেটে অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে যে বায়ুদূষণের সৃষ্টি হয়েছিল তা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।সোমবার রাত ১০টার দিকে কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল) সংলগ্ন ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানার ৫০০ মেট্রিক টন এমোনিয়া গ্যাস ধারণ ক্ষমতার ট্যাংকটিতে ৩০০ মেট্রিক টনের মতো গ্যাস ভরার পর ওই দুর্ঘটনা ঘটে।এতে অসুস্থ হয়ে পড়া মোট ৫২ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসতাপালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে নয়জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।এখনো ৩৯ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সার কারখানায় দুর্ঘটনার পর পাশের জলাশয়ের অনেক মাছও মারা গেছে।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সার কারখানার ট্যাংক ফেটে ছড়িয়ে পড়া অ্যামোনিয়া গ্যাস দুর্ঘটনাস্থলে এখনো রয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালে ফায়ার সার্ভিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও ১০ শতাংশ গ্যাস এখনো সেখানে রয়ে গেছে। দুর্ঘটনাস্থলের চারপাশে গ্যাসের ঝাঁজাল গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি গাড়ি পানি ছিটিয়ে গ্যাস নিষ্ক্রিয় করার কাজ অব্যাহত রেখেছে।সোমবার রাতে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়া গ্রামে ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট সার কারখানার তরল অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক বিকট শব্দে ফেটে অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৫০০ টন ধারণক্ষমতার ট্যাংকটিতে দুর্ঘটনার সময় প্রায় ২৫০ টন অ্যামোনিয়া গ্যাস ছিল। ছড়িয়ে পড়া গ্যাসের প্রভাবে অসুস্থ ৫২ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থলের পাশের সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কারখানার ট্যাংক যেখানে ফেটে গেছে, সেখানের সীমানা দেয়ালের পাশের সড়কে এখনো অ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র ঝাঁজাল গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন পথচারীদের ওই সড়ক এড়িয়ে চলার জন্য ফিতা টেনে দিয়েছে। পাশের পুকুর থেকে পানি নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে ঘটনাস্থলের ৩০০-৪০০ মিটার দূরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়নি।চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কর্ণফুলী এলাকায় জলাশয়ে মরে ভেসে ওঠা মাছ দেখাচ্ছেন একজন খামারি। তাঁর অভিযোগ, কারখানা থেকে নিঃসরিত গ্যাস পানিতে মিশে যাওয়ায় এসব মাছ মরে গেছে। ছবি: সৌরভ দাশঘটনাস্থলে বেলা তিনটায় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন বলেন, বেলা ১১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখনো ১০ শতাংশ গ্যাস রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি গাড়ি পানি ছিটিয়ে এসব গ্যাস নিষ্ক্রিয় করার কাজ অব্যাহত রেখেছে।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, কারখানার সীমানা দেয়ালের পাশের সড়কের সঙ্গে লম্বা পুকুরে মরা মাছ ভেসে উঠেছে। পুকুরটির মাঝখানে বাঁধ দেওয়া। তবে বাঁধ দেওয়া পুকুরের আরেক পাশে মরা মাছ দেখা যায়নি। মরে যাওয়া মাছ পুকুর থেকে তুলতে দেখা গেছে স্থানীয় লোকজনকে।দুপুরে সিইউএফএলের বিশ্রামাগারে ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার সময় বাতাস ছিল পশ্চিমমুখী। বাতাসে অ্যামোনিয়া গ্যাস নদীর ওপারে পতেঙ্গা ও বন্দর এলাকা হয়ে হালিশহরের দিকে চলে যায়। দুইটার পর বাতাস দক্ষিণমুখী ছিল। তখন দক্ষিণ দিকে গেছে অ্যামোনিয়া গ্যাস। পুকুরের পানি অ্যামোনিয়া গ্যাস শুষে নেওয়ায় হয়তো মাছ মরে গেছে।

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, রাত তিনটায় গ্যাস শনাক্তকরণ যন্ত্র দিয়ে পরিমাপ করে দেখা গেছে দুর্ঘটনাস্থলের ২০০ মিটার দূরে গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব ছিল না।এদিকে বিসিআইসি ট্যাংক ফেটে যাওয়ার কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিসিআইসির পরিচালক আলী আক্কাসকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন এবং দুটি সার কারখানা কাফকো ও সিইউএফএলের প্রতিনিধি রয়েছেন।

সকালে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবে। কারখানার অন্য ট্যাংকগুলোতে ঝুঁকি আছে কি না এবং ভবিষ্যতে যাতে এধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে সুপারিশ করার জন্যও বলা হয়েছে কমিটিকে।ঘটনার রাতে জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এর অধীন পরিচালিত ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড ড্যাপ নামেও পরিচিত; যেখানে দুটি ইউনিট ড্যাপ-১ ও ড্যাপ-২ আছে।এই কারখানার পাশেই কাফকো ও সিইউএফএল সার কারখানা। নদীর অপর পাড়ে শাহ আমানত বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।দমকাল বাহিনী বলছে, বিস্ফোরণে ড্যাপ-১ এর ওই ট্যাংকটির একটি অংশ ফেটে যায়। কারখানার অপর দুটি ট্যাংক ঠিক আছে।চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি আহমেদ খান দুপুরে বলেন, বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ করছে। বায়ু দূষণ সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। এর আগে ভোরে বিসিআইসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ওই এলাকার বাতাসে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ১০০ পিপিএম।দুর্ঘটনা স্থলের আশপাশের ২০০ মিটারের মধ্যে অ্যামোনিয়ার মাত্রা আছে ২০ পিপিএম। সেখানকার ঝাঁঝল গন্ধও ইতোমধ্যে কমে এসেছে। এখন এটা নিউট্রিয়ালাইজেশন করার কাজ চলছে।ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি তারাও কমিটি গঠন করেছে বলে জানান বিসিআইসি চেয়ারম্যান।