1475430201_65

দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই জীবনের কোনো না কোন পর্যাযে নিজের স্বামীর মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে। রোববার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে নারী ‘নির্যাতন-২০১৫’ শীর্ষক হালনাগাদ এই প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালের প্রতিবেদনে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার নারীর হার ছিল ৮৭ শতাংশ। এ হিসেবে চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর নির্যাতন কমেছে। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জরিপের বিভিন্ন ফলাফল উপস্থাপন করেন বিবিএসের জরিপের সমন্বয়ক জাহিদুল হক সরদার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিরা প্রতিবেদনটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, নারী নির্যাতনের হার ধীরে ধীরে কমছে। তবে এতে খুশি হওয়ার কারণ নেই। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন না হলে পুরুষ নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালায়। নারী নির্যাতন কমানো সম্ভব না হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ। আলোচনায় অংশ নেন পরিসংখ্যান এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মাতাভেল পিচ্চিন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর এবং হেড অব ডেলিগেশন প্রধান পিয়েরে মায়াদোঁ প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এখন পর্যন্ত নারী নির্যাতন নিয়ে আলাদা করে জরিপ হচ্ছে। কিন্তু পুরুষেরাও নির্যাতনের শিকার হয় কি না, তা-ও দেখতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরবর্তী জরিপ করতে হবে নারী ও পুরুষের নির্যাতন নিয়ে।তিনি বলেন, আগে মেয়েসন্তান হলে ছেলেসন্তানের জন্য পুরুষেরা একাধিক বিয়ে করতেন। এখন মেয়েসন্তানের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। এখন নারী উপার্জন করছে। শিক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে নারী নির্যাতন কমার সম্পর্ক আছে। সারা দেশে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। শুধু নারীদের নয়, পুরুষদেরও সচেতন করতে হবে।

জরিপ মতে, শারীরিক নির্যাতন ছাড়া দেশে সার্বিকভাবে নারী নির্যাতনের হার কমেছে। বর্তমানে বিবাহিত নারীদের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার। বিবিএস এবার দ্বিতীয়বারের মতো জরিপ করল। এর আগে ২০১১ সালে প্রথম জরিপ পরিচালনা করে। প্রথম জরিপ মতে, বিবাহিত নারীদের ৮৭ দশমিক ১ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার ছিল।স্বামী বা যেকোনো সঙ্গীর দ্বারা নির্যাতনের হারও কমেছে। আগে এ হার ছিল ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এখন তা ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। এদের মধ্যে সঙ্গীর নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের কারণে নির্যাতনের শিকার ১৫ শতাংশ।

শারীরিক, যৌন, অর্থনৈতিক, নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ এবং আবেগীয় নির্যাতনকে জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জরিপে ২১ হাজার ৭৭৫ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ২০১৫ সালের ১৩ থেকে ২২ আগস্ট তথ্য সংগ্রহ করা হয়।ব্যুরোর প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল হক সরদার অনুষ্ঠানে জানান, ২০১৫ সালের ১৩ থেকে ২২ অগাস্ট সারা দেশে ২১ হাজার ৬৮৮ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে তারা এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গত চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন কমলেও শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে।২০১৫ সালের জরিপে অংশগ্রহণকারী বিবাহিত নারীদের ৫০ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন ২৭ শতাংশ বিবাহিত নারী।২০১১ সালে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের এই হার ছিল যথাক্রমে প্রায় ৪৮ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীর ওপর স্বামীরা নির্যাতন করেন আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য।১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী বিবাহিত নারীরা নির্যাতনে শিকার হওয়ার কথা বলেছেন সবচেয়ে বেশি। জরিপে অংশ নেওয়া গ্রামের বিবাহিত নারীদের ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় স্বামীর নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। শহরে এই হার ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ; আর জাতীয় পর্যায়ে ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ।অর্থনৈতিক নির্যাতনের ক্ষেত্রেও জাতীয় ও গ্রামীণ চিত্র প্রায় অভিন্ন। গ্রামের ১২ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। শহরে এই হার ১০ দশকি ২ শতাংশ; জাতীয় পর্যায়ে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।জরিপে দেখা গেছে, স্বামী ও স্ত্রী শিক্ষিত হলে নির্যাতন করার প্রবণতা এবং নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা কম ঘটেছে।পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াজেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আসলে নারী নির্য়াতন একদম বন্ধ হবে না। তবে আরও অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি তিন মিনিটে একজন নারী কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন- এমন তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “সে তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো। তবে আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ আছে।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্যই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা কমাতে হবে।বর্তমান সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়ায় সহিংসতা আগের চেয়ে কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, “তারপরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।