%e0%a6%95%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a7%9c%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%87%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a6%a8%e0%a6%95%e0%a6%be

ইলিশের প্রজনন কালীন নিষেধাজ্ঞা এ বছর দীর্ঘসময় টানা ২২ দিন সত্ত্বেও শতভাগ সফলভাবে পালিত হয়েছে। উপকূলীয় কলাপাড়াসহ সাগরবক্ষে কিংবা নদীতে একজন জেলেও ইলিশ শিকার করেনি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হচ্ছে আগামীকাল ২ নবেম্বর। বাকি মাত্র একদিন। এখন জেলেদের চলছে ফের সাগরে ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি।অথচ এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ের জন্য পরিবার প্রতি ২০ কেজি চালের সরকারি খাদ্য সহায়তা অর্ধেক জেলে পরিবার পায়নি। এখনও খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করেনি চাকামইয়া, লতাচাপলী এবং ধানখালী ইউনিয়নের জনপ্রনিধিরা। এ তিন ইউনিয়নের সুবিধা ভোগীর সংখ্যা ২৯৫০ জেলে পরিবার। বাকি ইউনিয়নের চাল উত্তোলন করা হলেও বিতরন করা হয়নি অধিকাংশ ইউনিয়নে। ফলে এখন এই স্বল্প সময় জেলেরা সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিবেন না চাল সংগ্রহ করবেন, এনিয়ে পড়েছেন দোদুল্যমান শঙ্কায়। স্বেচ্ছায় ২২ দিন কর্মবিমুখ থেকেছেন জেলেরা। ইলিশ শিকারে তাদের নিরুৎসাহিত করেছেন ট্রলার মালিক, আড়তমালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। উল্টো জেলেসহ এ পেশা সংশ্লিষ্ট মানষেরা নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়কে পার করেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। করেছেন ইলিশের প্রজনন উৎসব। তারপরও জনপ্রতিনিধি কিংবা সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের ঢিলেমির কারনে শেষ সময় পর্যন্ত জেলেদের কাছে পৌছেনি খাদ্য সহায়তার চাল।

গত ১২ অক্টোবর অবরোধ শুরুর দিন থেকে মৎস্য বিভাগের সাথে উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ বাহিনী, নৌ পুলিশ ও থানা পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়লেও জেলেরা নিজেদের থেকেই অবরোধ পালনে আন্তরিক ছিল। প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তারাও বিষয়টি প্রশংসার মুখে স্বীকার করেছেন। এমনকি কলাপাড়া উপজেলার সাগর-নদী কিংবা অভয়াশ্রম এলাকা ছিল মা ইলিশের জন্য শতভাগ নিরাপদ। এ বছরের চিত্রটিই ছিল ভিন্নতর। ইলিশের বাম্পার আহরনের কারনেই এমনটা সম্ভব হয়েছে বলে সকলের অভিমত।

প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞার সময় কর্মবিমুখ জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল দেয়ার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। জেলেদের সহজ-সরল স্বীকারোক্তি সরকার দেয়, আমরা যথাসময় ঠিকমতো পাইনা। ওজনে দেয়া হয় কম। পশ্চিম চাপলী গ্রামের ২৫ এবং চরগঙ্গামতির দুই জেলে জানান, তাদের গত মে-জুন-২০১৬ মাসের ৮০ কেজি করে চাল লোপাট করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত তারা ওই চাল পায়নি। আর এখন অবরোধকালীন চাল পাবেন কি না তা জানেন না। একই মন্তব্য লতাচাপলীর জাহাঙ্গীর মাঝির। জেলে আবুল হোসেনের ভাষ্য, ‘ এহন চাউল আনতে যামু, না সাগরে যামু।’ উপজেলা মৎস্য অফিসের দেয়া তথ্যমতে কলাপাড়ায় তালিকাভূক্ত ১৭ হাজার ৩৫ জন জেলে রয়েছে। যার মধ্যে ১১ হাজার ছয় শ’ ৩৫ পরিবার ইলিশ প্রজননকালীন সময় নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২০ কেজি করে খাদ্যসহায়তার চাল পাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি জেলে অধ্যুষিত লতাচাপলী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ছাঈদ ফকির জানান, আড়তদার সমিতির সভাপতি ঢাকায় থাকায় চাল বিতরন করতে একটু দেরি হচ্ছে। দু’একদিনেই বিতরন করবেন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানান, তিনটি ইউনিয়ন ছাড়া অধিকাংশ ইউনিয়নের চাল উত্তোলন করা হয়েছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, ‘জেলেরা নিজ উদ্যোগে এবার ইলিশের প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা পালন করেছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষা পেলে জেলেরা যে লাভবান হবেন এটি তারা শতভাগ বুঝতে পেরেছেন। সে কারণেই কলাপাড়া উপজেলায় ইলিশের প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা শতভাগ সফল হয়েছে, এজন্য জেলেদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ খাদ্য সহায়তার চাল এখনও না পৌছানো সম্পর্কে ইউএনও বলেন, ‘এটি ইউপি চেয়ারম্যানদের গাফেলতি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আরও নজর দেয়া হবে।’