gazipur-1-17-november-2016-court-life-time-jail-including-lady-for-rapped-2

টাঙ্গাইলে নবম শ্রেণীর স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের আলোচিত মামলায় গাজীপুরের আদালত এক নারীসহ ৫জনের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ১লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক সৈয়দ জাহেদ মনসুর এ রায় ঘোষণা করেন।

দন্ডপ্রাপ্তরা হলো, টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার মহেলা গুচ্ছগ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে বিথী আক্তার ইভা (২৩), একই জেলার মধুপুর থানার আউশপাড়া বোকারবাইদ এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে এসএম নুরুজ্জামান গেদা (৪৪), একই থানার কুড়িবাড়ি এলাকার গাজীবুর রহমানের ছেলে মো. হারুন অর রশিদ (২৭), জটাপাড়া (পশ্চিমপাড়া) এলাকার মৃত আয়েত উদ্দিনের ছেলে শাহজাহান আলী (৪৪) ও বোয়ালী মধ্যপাড়া এলাকার মৃত ওমেদ আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান ওরফে মনি (৪৩)।

গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের স্পেশাল পিপি মোঃ ফজলুল কাদের ও আদালতের ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী (ভিকটিম) সেলাই প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে তার সঙ্গে বিথী আক্তার ওরফে ইভার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বে সূত্রধরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর বীথি তার মামাত বোনের বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিম বান্ধবীকে তার বাসা থেকে আউশনারা বোকারবাইদ গ্রামের নুরুজামান ওরফে গেদার বাড়িতে নিয়ে যায়। ওইদিন রাতে (৬ ডিসেম্বর) ওই বাড়িতে ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামী নুরুজ্জামান, হারুন অর রশিদ, শাহজাহান ও মনিরুজ্জামান পালাক্রমে ধর্ষণ করে। আসামীরা ভিকটিমকে সেখানে তিনদিন আটকে রাখে। পরে ৯ ডিসেম্বর অসুস্থ্য ভিকটিমকে তার বাড়ির কাছে রেল লাইনের পাশে ফেলে রেখে ধর্ষণে সহায়তাকারী আসামি বিথী আক্তার ইভা পালিয়ে যায় এবং ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করলে ছুরি দিয়ে হত্যা করবে বলে ভিকটিমকে ভয় দেখায়। এতে ভিকটিম আতঙ্কিত হয়ে ঘটনাটি লুকানোর চেষ্টা করে বাড়িতে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন এবং ঘটনাটি তার স্বজনদের জানান। পরে ভিকটিম বেশী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তিনি প্রথমে টাঙ্গাইল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। ডাক্তারি পরীক্ষা ও ভিকটিমের স্বীকারোক্তিতে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মজিবুর রহমান সহায়তাকারী বিথীসহ চার ধর্ষকের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে থানার ওই মামলাটি টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে স্থানান্তরিত হয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালতের তৎকালীন বিচারক বিচারকাজে বিব্রতবোধ করেন এবং উচ্চ আদালতের মাধ্যমে মামলাটি অন্যত্র স্থানান্তর করার আবেদন জানান। এ ব্যপারে ২০১৪ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। পরে হাইকোর্ট মামলাটি বিচার কার্যক্রমের জন্য ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর পাশর্^বর্তী জেলা গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে প্রেরণের আদেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে ওই মামলাটি ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে বিচারের জন্য আসে।

গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলার বিচারকার্য চলাকালে ১৮জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হয়। দীর্ঘ শুনানী ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত বৃহস্পতিবার দুপুরে আসামিদের উপস্থিতিতে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের বিচারক বিচারক সৈয়দ জাহেদ মনসুর আলোচিত এ মামলাটির রায় প্রদান করেন। রায়ে ধর্ষণে সহায়তাকারী এক নারীসহ চার ধর্ষকের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ১লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

ভিকটিমের পক্ষে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তাবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী মোঃ জালাল উদ্দিন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের টঙ্গী শাখার সভাপতি আনোয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী মোঃ জালাল উদ্দিন জানান গণধর্ষণের শিকার স্কুল ছাত্রীটিকে দেড় বছর ঢাকার শেলটার হোমে রাখা হয়। পরে তাকে তার নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে সেখান থেকে কিছু দিন পরে তাকে ফের ঢাকায় আনা হয়। এরপর তাকে একটি এনজিও’র সহায়তায় ৬ মাসের গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বর্তমানে সে গাজীপুরে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করছে।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।