মাশরাফি-সাকিব-তাসকিনের বোলিং নৈপুণ্যে নেলসনে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ২৫১ রানেই গুটিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। তাই জয়ের টার্গেটটা হাতের নাগালেই ছিলো টাইগারদের। এরপর ইমরুল কায়েস ও সাব্বিরের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ১ উইকেটে ১০৫ রানে পৌঁছে জয়ের পথেই হাটছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে। ১৮৪ রানে গুটিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৬৭ রানের জয় উপহার দেন মাহমুদুল্লাহ-সাকিব-মোসাদ্দেকরা। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করে ফেললো নিউজিল্যান্ড।

নেলসনের সাক্সটন ওভালে টস জিতেই প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অতীতের অভিজ্ঞতাতেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত। এই মাঠেই গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৮ রান তাড়া করে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিলো টাইগাররা। তাই এবার নিউজিল্যান্ডকে বধ করার পরিকল্পনায় শুরুটা চমৎকারই করে বাংলাদেশ। শুরুতা চমৎকার এনে দিয়েছেন মাশরাফি নিজেই। ইনিংসের প্রথম ওভারে বল করতে এসেই চতুর্থ বলেই নিউজিল্যান্ডের মারকুটে ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে শুন্য রানে বিদায় জানান ম্যাশ।মাশরাফির এমন শুরুতে আত্মবিশ্বাস যেন অনেকগুন বেড়ে যায় বাংলাদেশ বোলারদের। তাই দলীয় ৪৭ রানের মধ্যে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে সাকিব আল হাসান ও গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম লাথামকে তুলে নেন পেসার তাসকিন আহমেদ। উইলিয়ামসন ১৪ ও লাথাম ২২ রানে থামেন।চতুর্থ উইকেটে জমাট একটি জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে খেলায় ফেরানোর আভাস দেন নেইল ব্র“ম ও জেমস নিশাম। ধীরে ধীরে বড় জুটি গড়তে থাকা ব্র“ম ও নিশামকে বিচ্ছিন্ন করেন ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আক্রমনে আসা মোসাদ্দেক হোসেন। ২৮ রানে থাকা নিশামকে তুলে নিয়ে ৫১ রানের জুটি ভাঙ্গেন মোসাদ্দেক।দলীয় ৯৮ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে নিশাম ফিরে যাবার পর উইকেটে আসেন গত ম্যাচে ৬১ বলে ৮৭ রানের দানবীয় ইনিংস খেলা কলিন মুনরো। তাকে দেখে হঠাৎই নিজেকে আক্রমনে নিয়ে আসেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম স্পেলে ৪ ওভার ১ মেডেন ১৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নেয়া ম্যাশ আক্রমনে আসেন ২৪তম ওভারে। নিজের দ্বিতীয় স্পেলের নয় নম্বর বলেই মুনরোর উইকেট উপড়ে ফেলে মাশরাফি। ফলে ১০৭ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ৩ রান করে ফিরেন মুনরো।

বড় চাপে পড়া নিউজিল্যান্ডকে পরবর্তীতে আরও চাপে ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। কারন ষষ্ঠ উইকেটে ১২ ওভারে ৬৪ রান যোগ করে দলকে চাপমুক্ত করেন ব্র“ম ও উইকেটরক্ষক লুক রঞ্চি। তবে রঞ্চিকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে নিউজিল্যান্ডের রানের লাগাম টেন ধরার সুযোগ করে দেন তাসকিন। দলের ৩৮তম ওভারে ব্যক্তিগত ৩৫ রানে রঞ্চি যখন বিদায় নেন তখন নিউজিল্যান্ডের রান ১৭১। রঞ্চির পর কিউইদের তিন ব্যাটসম্যানকে তুলে নিয়ে টার্গেটা হাতের নাগালে রাখার চেষ্টায় ছিলেন অভিষেক ম্যাাচ খেলতে নামা শুভাষিশ রায়। কিন্তু শেষ উইকেট জুটিতে ট্রেন্ট বোল্টকে নিয়ে ২৩ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে ২৫১ রানে নিয়ে যান ব্র“ম। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে ১০৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ব্র“ম। তার ১০৭ বলের ইনিংসে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিলো। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১২ রান করে আউট হন বোল্ট। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি ৩টি, তাসকিন ও সাকিব ২টি করে উইকেট নেন।

নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে ২৫২ রানের টার্গেটটা দলের ব্যাটসম্যানদের সামনে তৈরি করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররাই। তাই বোলারদের কষ্টকে জয়ে রুপান্তর করতে শুরুটা দারুন ভাবেই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। প্রথম ওভার থেকে মাত্র ২ রান আসলেও, দ্বিতীয় ওভারে কিউই পেসার টিম সাউদির বলে তিনটি অপূর্ব বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। এরপর ৭ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৩০ রান, ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলো বাংলাদেশকে। ব্যক্তিগত ১৬ রানে তামিমকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা আরও বেশি চমকপ্রদ হতে দেননি সাউদি। তবে ব্যাট হাতে চমকটা পরবর্তীতে দেখান আরেক ওপেনার ইমরুল ও তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান। নিউজিল্যান্ড বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন ইমরুল ও সাব্বির। দেখেশুনে খেলে রানের চাকা সচল রেখে ৯৪ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন তারা। এতে জয়ের স্বপ্নটা পরিস্কারই হচ্ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু ২৩তম ওভারের শেষ বলে রান আউটের ফাঁেদ পড়ে ভেঙ্গে যায় ইমরুল-সাব্বিরের জুটি। তখন বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ১০৫ রান।আর ওখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসার পালা। পরবর্তীতে ২১, ১৬ ও ১৩ রানের বেশি বাংলাদেশের কোন জুটিতেই আসেনি। ফলে ১৮৪ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের। তখনও ইনিংসের ৪৪ বল বাকী ছিলো। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে ৫৯ রানে থামেন ইমরুল। তার ইনিংসে ৬টি চার ছিলো। এছাড়া সাব্বির ৪৯ বলে ৩৮, নুরুল হাসান ৩১ বলে ২৪ ও মাশরাফি ১৯ বলে ১৭ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের উইলিয়ামসন ৩টি, বোল্ট ও সাউদি ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচের সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ব্র“ম। নেলসনের এই ভেন্যুতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।