শিক্ষাবিদদের সুপারিশের ভিত্তিতে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে পাঠ্যপুস্তক আরও সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করতে দুটি কমিটি করেছে সরকার।একটি কমিটি ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে পাঠ্যবই আরও পাঠযোগ্য করতে সুপারিশ দেবে। আরেক কমিটিকে নবম-দশম শ্রেণির কয়েকটি বই পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান বাড়াতে কিছু বিষয় বাদ দেওয়া, অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ব্যাংক তৈরিসহ ১৫ দফা সুপারিশ করেন শিক্ষাবিদরা।

শিক্ষাবিদদের ওই সুপারিশের ভিত্তিতেই পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা এবং নবম-দশম শ্রেণির কয়েকটি বই পরিমার্জনে কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।প্রায় দেড় যুগ পর ২০১২ সালে নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে সরকার। ওই পাঠ্যক্রমের আলোকে ২০১৩ সালের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পায় শিক্ষার্থীরা।২০১২ সালের ওই পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই অধিকতর পাঠযোগ্য করতে সুপারিশ দিতে নতুন একটি কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রর প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনজুর আহমদ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, মতিঝিল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক তানজীল আশ্রাফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহাও এই কমিটির সদস্য।এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদে কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন।এই কমিটিকে আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যমান পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন ও পরিমার্জনের বিষয়ে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
নবম-দশম শ্রেণির নির্বাচিত কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করার লক্ষ্যে আরেক কটিমির সদস্য করা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ।ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম, উদ্দীপন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহাকেও এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ইনামুল হক সিদ্দিকীকে এই কমিটির সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কমিটিকে নবম-দশম শ্রেণির কয়েকটি পাঠ্যবই নির্বাচন করে সেগুলোকে পরিমার্জনের জন্য একটি ‘টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করতে বলা হয়েছে; যাতে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির আগেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো যায়।নির্বাচিত পাঠ্যপুস্তকগুলো পরিমার্জনের মাধ্যমে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করে তোলার জন্য এই কমিটি সার্বিক সিদ্ধান্ত নিলেও জাতীয় কারিকুলাম কো-অর্ডিনেটর কমিটি (এনসিসিসি) পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন করবে।উভয় কমিটি প্রয়োজনে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে জানিয় আদেশে বলা হয়েছে, কমিটির সভায় বিষয় বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো যাবে।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথমে নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের চারটি এবং মানবিকের একটি বই সুখপাঠ্য ও সহজ করা হবে। প্রয়োজনে এসব বই রঙিন করে ছাপানো হবে।

এদিকে, ভর্তির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রাজধানীর ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী এ চিঠি পাঠান। দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সেগুলো হলো মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন উচ্চবিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অগ্রণী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয়, সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হলিক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মণিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এবং রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।দুদকের ওই চিঠিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিতে শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির পদ্ধতি ও নীতিমালা, এ বছর ভর্তির জন্য আসনসংখ্যা কত, সে সম্পর্কে ১২ জানুয়ারির মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।দুদক সূত্র জানায়, রাজধানীর নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি-বাণিজ্য সম্পর্কিত বেশ কিছু অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। ওই সব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করার পর আমলে নিয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়।