নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিন ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়েছেন বাংলাদেশের মোমিনুল হক ও তামিম ইকবাল। মোমিনুলের অপরাজিত ৬৪ ও তামিমের ৫৬ রানের কল্যানে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৫৪ রান করেছে বাংলাদেশ। এই স্কোরটি টাইগাররা করেছে ৪০ দশমিক ২ ওভারে। তিন দফায় বৃষ্টির কারনে আজ দিনের পুরো ওভার খেলা হয়নি।ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ঘন সবুজ পীচের সুবিধাটা শুরুতে নিতেই এমন সিদ্ধান্ত ব্ল্যাকক্যাপস অধিনায়কের। তবে সহজেই সুবিধাটা দিতে রাজি ছিলেন না বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। মারমুখী মেজাজেই ব্যাটিং শুরু করেন তিনি। প্রথম তিন ওভারে তামিমের তিনটি বাউন্ডারিতে ভালো শুরুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলো বাংলাদেশ।কিন্তু সেটি হতে দিলেন না আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস। নিজের মুখোমুখি হওয়া তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ১ রান করে নিউজিল্যান্ড পেসার টিম সাউদির শিকার হন ইমরুল। ফলে দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সতীর্থ ইমরুল ফিরে গেলেও, ভড়কে যাননি তামিম। ওয়ানডে মেজাজেই ব্যাট চালিয়েছেন পরবর্তীতেও। স্ট্রাইক পেলেই বলকে বাউন্ডারির স্পর্শ দিয়েছেন। তবে ১২তম ওভারের তৃতীয় বলের পরই বৃষ্টি তাকে থামান, বিশ্রামের জন্য। বৃষ্টির কারনে খেলা বন্ধ হবার সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিলো ১ উইকেটে ৩৯ রান। এরমধ্যে তামিমের রান ছিলো ৩৭ বলে ৩৬। অন্যপ্রান্তে ২৫ বলে ২ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন তিন নম্বরে নামা মোমিনুল হক।বৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে, এর মাঝে বাধ্য হয়ে লাঞ্চও সেড়ে ফেলেন বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। প্রায় ৮০ মিনিট পর বৃষ্টি থেমে গেলে, ২২ গজে আবারো শুরু হয় তামিম ঝড়। কাভার ড্রাইভ, পুল, কাট শট দিয়ে বাহারি বাউন্ডারির পসরা সাজিয়েছিলেন তামিম। এতে ৪৮ বলেই পেয়ে যান টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০তম ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি।নিউজিল্যান্ডের মাটিতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়ার ১ বল পরই ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমের (ডিআরএস) মারপ্যাচে পড়ে আউট হন তামিম। বাংলাদেশ ইনিংসের ১৫তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্টের দ্বিতীয় ডেলিভারিটি ফ্রন্টফ্রুটে খেলেন তামিম। কিন্তু বলটি গিয়ে আঘাত হানে তামিমের সামনের পায়ে, এতেই উচ্চস্বরে আবেদন নিউজিল্যান্ড খেলোয়াড়দের। তাতে সাড়া দেননি দক্ষিণ আফ্রিকার আম্পায়ার মারাইস ইরাসমুস। ফলে তামিমের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মত ডিআরএস-এর সিদ্ধান্ত স্বাগতিক দলপতি উইলিয়ামসনের। এরপর টিভি-রিপ্লেতে ডিআরএস-এ শেষ হয়ে যায় তামিমের ৫০ বলে ৫৬ রানের তাৎপর্যপূর্ণ ইনিংসটি। তার ইনিংসে ১১টি বাউন্ডারির মার ছিলো। এরমধ্যে বোল্টের ১৯টি ডেলিভারিতেই ৭টি চার মারেন তামিম।

তামিম যখন ফিরেন তখন বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ৬০ রান। এরপর মোমিনুলের সাথে দলের হাল ধরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ভালোই জমে উঠে জুটিটি। নিউজিল্যান্ড বোলারদের সামনে নিজেদের টেস্ট ব্যাটিং দক্ষতা দেখিয়েছেন মোমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ। উইকেট বাঁিচয়ে রেখে ২৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ১১৯ রানে নিয়ে যান তারা। এরপর আবারো বৃষ্টির কারনে বন্ধ হয়ে যায় খেলা।

এবার প্রায় ৩ঘন্টা পর শুরু হয় প্রথম দিনের খেলার শেষ সেশন। দীর্ঘ বিরতির পরও নিজেদের ব্যাটিং দক্ষতা দেখিয়েছেন মোমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ। স্কোরবোর্ডকে সচল রেখেছিলেন তারা। এতে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান মোমিনুল। অবশ্য কিউইদের বিপক্ষে দেশের মাটিতে দু’টি সেঞ্চুরির স্বাদ ২০১৩ সালের সিরিজেই নিয়েছিলেন তিনি।মোমিনুলের সাথে মাহমুদুল্লাহ’র জমে উঠা জুটিটি অবশেষে ভাঙ্গে দলীয় ১৪৫ রানে। স্বাগতিক পেসার নিল ওয়াগনারের শিকার হবার আগে নামের পাশে ২৬ রান রাখেন মাহমুদুুল্লাহ। আর তৃতীয় উইকেটে মোমিনুলের সাথে ৮৫ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুুল্লাহ।মাহমুদুুল্লাহর বিদায়ের পর উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। এরপর আর মাত্র ১৫ বল খেলা হয়েছে দিনের। কারন আবারো নামে বৃষ্টি, আর সেখানেই শেষ হয়ে যায় প্রথম দিনের খেলা। দিন শেষ হবার আগে বাংলাদেশের স্কোর ছিলো, ৪০ দশমিক ২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫৪ রান। মোমিনুল ৬৪ ও সাকিব ৫ রানে অপরাজিত আছেন। মোমিনুলের ১১০ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। নিউজিল্যান্ডের বোল্ট, সাউদি ও ওয়াগনার ১টি করে উইকেট নেন।