কোনো ধরনের ঝুঁকির কারণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানমালা সীমাবদ্ধ করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে একুশে ফেব্র“য়ারিতে মাতৃভাষা দিবস পালন জাতির শিকড়ের বিষয়। আজকে আমরা দেখছি শিকড়ের বিষয় শিকড় থেকে শিকড়ের দিকে ধাবমান। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। হাজারো স্কুল ও উপজেলায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রয়েছে।তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে তা দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার। আমরা তো আর এটিকে সীমাবদ্ধ করতে পারি না। এটি আমাদের জাতিসত্তার বিষয়। বরঞ্চ এটাকে আমাদের আরও উৎসাহ দিতে হবে। জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে শুধু র‌্যাব নয় সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে।র‌্যাব মহাপরিচালক আরও বলেন, বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একুশে ফেব্র“য়ারিসহ সকল মেগা ইভেন্টে সম্ভাব্য সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন করি। যদি আমরা আরও নির্দিষ্ট করে বলি জঙ্গিবাদ আমাদের বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার ও জনগণের বিস্ময়কর সাফল্য রয়েছে। এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। সারা বিশ্বব্যাপী সমস্যাটা চলমান। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় এই চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে ছুটে বেড়াচ্ছে। এই দেশকে নিরাপদ রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নিরাপত্তা নিয়ে র‌্যাবের বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশের প্রধান গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বোমা ডিস্পোজাল ইউনিট, স্ট্যান্ডিং পেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল ইউনিট গঠন করা হয়েছে।এছাড়া হেলিকপ্টারে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।অমর একুশে পালনের জন্য শহীদ মিনার এলাকা প্রস্তুত । বাঙালির অন্যতম প্রেরণার উৎস অমর একুশ। আর একুশ পালনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা প্রস্তুত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।সোমবার (সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ হোসেন এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী। তারপর সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবেন। সোমবার সকালে শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো শহীদ মিনারকে নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। শেষ হয়েছে আলপনা আঁকার কাজ।অমর একুশে পালনের জন্য শহীদ মিনার এলাকা প্রস্তুত/ছবি-ডিএইচ বাদলনিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য শহীদ মিনারে তিনটি, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সামনে একটি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ বহির্বিভাগের সামনে একটি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনে র‌্যাব, পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সিসিটিভির মাধ্যমে সমগ্র এলাকাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঘোষণা মঞ্চের সাউন্ড সিস্টেম পরীক্ষা করা হচ্ছে।এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শহীদ মিনার এলাকা পরিদর্শন করেন।এসময় তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানান।অমর একুশে পালনের জন্য শহীদ মিনার এলাকা প্রস্তুত/ছবি-ডিএইচ বাদলগৃহীত কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন উপাচার্য।নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পৌনে ১১টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। সঙ্গে রয়েছে র‌্যাবের বোম ডিস্পোজাল ইউনিট। ডিএমপির পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে যাওয়ার রোড ম্যাপ লাগানো হয়েছে।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতির বিষয় জানিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় শহীদ মিনারের সংবাদ সম্মেলন করেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। বেনজীর আহমেদ বলেন, একুশে ফেব্র“য়ারির শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠানকে নির্বিঘœ করতে অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে র‌্যাব ইতোমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।অমর একুশে পালনের জন্য শহীদ মিনার এলাকা প্রস্তুত/ছবি-ডিএইচ বাদলএ দিবসের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রধান হিসেবে থাকেন বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয় গত ২৩ জানুয়ারি।এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএস এম মাকসুদ কামালকে সমন্বয়কারী এবং শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহকে যুগ্ম-সমন্বয়কারী করে অমর একুশে পালনে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ছাড়াও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে মহান অমর একুশে পালনের লক্ষ্যে ১১টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৭ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য বিকল্প পথ ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’ আজিমপুর কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাতায়াতের জন্য এই আহ্বান জানান।এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’ আজিমপুর কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাতায়াতের জন্য একটি রুট প্রণয়ন করে। রুট-ম্যাপটি সোমবার রাত ৮টা থেকে কার্যকর হবে।

রুট-ম্যাপ অনুযায়ী জনসাধারণ পুরনো হাইকোর্টের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল ক্রসিং, বাংলা একাডেমি, টিএসসি মোড়, উপাচার্য ভবনের পাশ দিয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড়, নিউমার্কেট-ক্রসিং পার হয়ে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর দিকের গেট দিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করবেন এবং শহীদদের কবর জিয়ারতের পর আজিমপুর কবরস্থানের মূল গেট (দক্ষিণ দিকের) দিয়ে বের হয়ে আজিমপুর সড়ক হয়ে পলাশী মোড় ও ফুলার রোড মোড় হয়ে অর্থাৎ সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন।কবরস্থানে না গিয়ে বিকল্প পথে যারা শহীদ মিনারে যেতে চান তারা উপাচার্য ভবন পার হয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড় থেকে বাম দিকের রাস্তা দিয়ে (জহুরুল হক হলের পশ্চিমের রাস্তা) সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।নউমার্কেট ক্রসিং থেকে হোম ইকোনমিক্স ও ইডেন কলেজের সামনের রাস্তা দিয়েও আজিমপুর (বেবী আইসক্রীম) মোড়, পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।চাঁনখার পুল এলাকা থেকে বক্শিবাজার মোড় হয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা দিয়েও পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।এদিকে টিএসসি মোড় থেকে জগন্নাথ হলের পূর্ব পাশের রাস্তা অর্থাৎ শিব বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে শহীদ মিনারে ও মেডিকেল কলেজে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। উপাচার্য ভবন গেট থেকে ফুলার রোড হয়ে ফুলার রোড মোড় পর্যন্ত রাস্তা এবং চাঁনখার পুল থেকে কার্জন হল পর্যন্ত রাস্তা জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর ও পেছনের রাস্তা দিয়ে চাঁনখার পুল হয়ে শুধুমাত্র প্রস্তান করা যাবে, শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।