শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১৬টি গাড়ি নিয়ম বহির্ভূতভাবে হস্তান্তরের অভিযোগে তদন্ত শুরুর পর দুটি গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের হাতে তুলে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা সোমবার সকালে এসে টয়োটার একটি আরএভি-ফোর এসইউভি এবং একটি সেডান জমা দিয়ে যান।মইনুল খান বলেন, “দুটি গাড়ি জমা দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হল, তারা শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করেছে।এখন আদালতের মাধ্যমে গাড়িগুলোর বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মহাপরিচালক।তিনি বলেন, বাকি ১৪টি গাড়ির বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক কী পদক্ষেপ নেয়, সেজন্যও নজরদারি অব্যাহত রাখা হবে।

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কানাডার আদালতে ‘মিথ্যা’ প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনার মধ্যেই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর গত সপ্তাহে ঋণদাতা ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের অনিয়ম নিয়ে তদন্তের এ উদ্েযাগ নেয়।শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আনা ১৬টি গাড়ির বিষয়ে জানতে চেয়ে গত বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরকে একটি চিঠি পাঠানো হয় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়- গাড়িগুলো কারা ব্যবহার করতেন, তারা এখন কোথায় আছেন এবং গাড়িগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কী। উত্তর দেওয়ার জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয় বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়কে।তবে শুল্ক ফাঁকির ওই অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের কোনো বক্তব্য সে সময় পাওয়া যায়নি।

চিঠি পাঠানোর পর মইনুল খান বলেছিলেন, ২০০৩ সালের প্রিভিলেজড পারসনস (কাস্টমস প্রসিডিউর) রুলসের আওতায় বাংলাদেশে কর্মরত দাতা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মিশন হেডের সুপারিশ থাকতে হয় এবং এনবিআর ওই গাড়ির বিপরীতে একটি পাসবুক দেয়। ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে তার আগে তাকে গাড়ি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও ওই পাস বইয়ের তথ্য কাস্টমসের নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে হয়।ওই সুবিধার আওতায় ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন মডেলের ১৬টি গাড়ি আনা হয়। সেই কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করলেও কাস্টমসের কাছে তাদের গাড়ির বিষয়ে কোনো তথ্য জমা পড়েনি বলে মইনুল খানের তথ্য।তিনি জানান, প্রিভিলেজড পারসনস রুলসের আওতায় আনা গাড়ি হস্তান্তর করার তিনটি বৈধ উপায় আছে। ওই গাড়ি নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে, অন্য কোনো প্রিভিলেজড পার্সনকে হস্তান্তর করা যেতে পারে, অথবা সব ধরণের কর ও শুল্ক দিয়ে সাধারণ ব্যক্তির যানবাহন হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাওকে হস্তান্তর করা যেতে পারে। কেউ যদি আইন অমান্য করে গাড়িগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে থাকেন এবং সেই অর্থ যদি তিনি দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন মইনুল খান।

Image : bdnews24