জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদের একই পরিবারের শিশু সালাউদ্দিন, স্বাধীন, ইকবাল ও মেঘলা।ওরা চার ভাই-বোন। তাদের বয়স ৫ থেকে এগারো বছরের মধ্যে। চোখে মুখে ফুঁটে উঠে ক্ষুধার ছাঁপ। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুরে বেড়ায় রাস্তা-ঘাটে। ক্ষুধা নিবরানে মানুষের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দেয়। যা জুটে তাই চার ভাই-বোন মিলেমিশে খেয়ে কোন রকম বেঁচে থাকে। আর যেদিন কোন খাবার জুটে না, সেদিন না খেয়েই রাত কাটাতে হয় তাদের। থাকার তেমন জায়গাও নেই ওদের।

চার ভাই-বোনের সবার বড় সালাউদ্দিন। বয়স ১০। ছোট শিশুটিই কাধে তুলে নিয়েছে তিন ভাই-বোনের আহার যোগানের দ্বায়িত্ব। দোকান-পাটে আর মানুষের বাসার সামনে ক্ষুধার্থ মুখে অপলক দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অনেকেই দয়া করে খাবার দেয়। সেই খাবার নিয়ে চার ভাই-বোনে ভাগ করে খেয়ে কোন রকম জীবন কাটছে। অভাবের তাড়নায় ছাঁপড়া ঘরের চালের টিনও বিক্রি করে দিয়েছে অলস বাবা। পুরো শীত কেটেছে খোলা আকাশের নীচে। ছোট্র এই চার শিশুর করুন জীবনচিত্র দেখে প্রতিবেশী ছাড়াও পথচারীদের চোখেও নেমে আসে পানি। কিন্তু কে কার দায়ভার নেয় ? তাই এভাবেই চলছে অবহেলিত চার শিশুর জীবন।বাবা তমির উদ্দিন একজন অলস ব্যক্তি। খেঁাঁজ নেয়া বাচ্চাদের। সপ্তাহে দুই একদিন রিক্সা চালায় এতে তার নিজের পেটই চলে না। মা সেলেনা বেগম পাগল। সন্তানদের ফেলে ঘুরে বেড়ায় রাস্তা রাস্তায়। অনাদ হয়ে পড়ে শিশু সালাউদ্দিন, স্বাধীন, ইকবাল ও মেঘলা।

শিশুদের নানী বৃদ্ধা শহর বানু এই প্রতিবেদককে বলেন, নাতিদের কষ্ট দেইখা বুকটা ফাইটা যায়। আমার মাইয়্যা পাগলা। রাস্তা ঘাটে ঘুইড়া বেড়ায়, পুলাপানের (সন্তান) খোঁজ নেয় না। জামাইও খোঁজ নেয় না। রাস্তা-ঘাটে পড়ে থাকায় দুই বছরের সালেহীন ড্রেরেনের পানিতে ডুইবা আর ৩ বছরের আজাহার ওষুধ বেগরে মইরা গেছে। অগোরে এডা ব্যবস্থা কইরা দ্যান বাবা। আল্লা আফনে গরে দোয়া করবো, এই বলে অঝঁরে কাঁদতে থাকেন।অবহেলিত এই চার শিশুর করুণ জীবন চিত্র নিয়ে জামালপুরের জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন খানের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিটি শিশুর বাঁচার অধিকার রয়েছে। এজন্য অবহেলিত এসব শিশুদের পুর্ণবাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশ^াস দেন তিনি।