কলম্বিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিধসে অন্তত ২০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আরো কয়েকশ লোক আহত হয়েছে এবং বেশ কিছু বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। শনিবার দেশটির কর্মকর্তারা একথা জানান। প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে পেরু ও ইকুয়েডরেও বিপুল সংখ্যক লোক প্রাণ হারিয়েছে। কলম্বিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মোকোয়ায় কাদাপানির প্রচন্ড স্রোতের তোড়ে বহু বাড়িঘর, সেতু, গাড়ি ও গাছপালা ভেসে গেছে।

আমাজান অববাহিকায় অবস্থিত শহরটিতে কয়েকদিনের টানা বর্ষণের পর শুক্রবার রাতে এই ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে। শহরটিতে ৪০ হাজার লোকের বাস। কলম্বিয়ায় রেডক্রস প্রধান সিজার উরুয়েনা বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, ‘আমাদের কাছে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভূমিধসে ২০৬ জন নিশ্চিতভাবে মারা গেছে এবং ২০২ জন আহত ও ২২০ জন নিখোঁজ হয়েছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ১৭টি এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।’

প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্টোস উদ্ধার অভিযানের তদারকি করতে শনিবার পুতুমায়ো অঞ্চলের রাজধানী মোকোয়া পরিদর্শন করেন। উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা জোরদারে তিনি জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
তিনি এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমাবেদনা জানান। পুতুমায়োর গভর্ণর সোরেল অ্যারোকা ওই এলাকায় প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়কে ‘নজিরবিহীন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি ডব্লিউ রেডিওকে বলেন, ‘সেখানে কয়েকজন পরিবারের মানুষকে এখনো পাওয়া যায়নি। তারা নিখোঁজ রয়েছে। কাদাপানি গোটা এলাকাটিকে গ্রাস করে ফেলেছে।’

জাতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক কার্লোস ইভান মারকুয়েজ বলেন, মাকোয়া ও এর উপনদীগুলো কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে চারপাশ প্লাবিত করে ফেলে এবং এর ফলেই ভয়াবহ এই ভূমিধসের সৃষ্টি হয়। সান্টোস বলেন, শুক্রবার রাতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩০ মিলিমিটার। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় যারা মারা গেছেন ও যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে।’ দেশটির এই বিপর্যয়ের মুহূর্তে কয়েক হাজার জরুরি কর্মী উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে। মোকোয়ায় বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেখানে পানি সংগ্রহের জন্য বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে এবং লুটপাটেরও খবর পাওয়া গেছে। ৬৯ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা হার্নান্দো রডরিগুয়েজ টেলিফোনে বলেন, ‘রাস্তায় বিপুল সংখ্যক গৃহহীন লোক অবস্থান করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে বহু বাড়িঘর ধসে গেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জনগণ বুঝতে পারছে না তাদের কি করা উচিত। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগটি মোকাবেলা করার মতো তাদের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না।’ কলম্বিয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ ভূমিধস হয়েছে। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এল টাম্বো শহরে নভেম্বর মাসে ভূমিধসে ৯ জন প্রাণ হারায়। দেশটির উত্তরাঞ্চলে অক্টোবর মাসের ভূমিধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়।