হাওর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো আরও বেশি প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সংবাদ ব্রিফিং এবং একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, সবাই যেন ত্রাণ পায়, সে জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, হাওর এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছানো গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চারটি মন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছে। এটাকে আরও একটু প্রচারে আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।এদিকে আজকের মন্ত্রিসভায় ‘মৎস্য সঙ্গ নিরোধ আইন-২০১৭’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইন অনুযায়ী মৎস্য, মৎস্যপণ্য বা মৎস্যের উপকারী বা ক্ষতিকারক জীবাণু আমদানির জন্য সরকারের অনুমোদন লাগবে। কেউ যদি আইন অমান্য করে এই কাজ করেন, তাহলে অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদ- বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি নতুন আইন। বিভিন্ন দেশ থেকে মৎস্য বা মৎস্যজাত পণ্য, যেমন: পোনা, রেণু ইত্যাদি আমদানির সময় যাতে রোগ-জীবাণু না থাকে, এই আইনে সেই সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং ত্রাণ ও পুর্নবাসনের যে কর্মকা- চলছে, সেসব বিষয় প্রচারে নিয়ে আসতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, হাওর এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে একটু তৎপর হতে অনুশাসন দেওয়া হয়েছে।যা প্রয়োজন পুনর্বাসনের জন্য, জনগণ যাতে সন্তুষ্ট হয় যে আমাদের জন্য কিছু করা হচ্ছে।ৃ ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান করে ফেলেছে, কাজও করছে। তারপর যেটা করছে সেটা যাতে সবাইকে জানানো হয়।গতমাসের শেষ দিকে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ধান তলিয়ে যায়।হাওরের বাঁধগুলো মেরামত ও নতুন করে নির্মাণে দুর্নীতির কারণেই এ ফসলহানি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

বাঁধ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাঁধ নিয়ে আলোচনা হয়নি। অন্য ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে যে মানুষ ঠিকভাবে রিলিফ পাচ্ছে কিনা।পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, মানুষের কাছে পর্যাপ্ত রিলিফ পৌঁছেছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় সাথে সাথেই স্টেপ নিয়েছে, মানুষ ফিল করছে যে কিছু কাজ হয়েছে। আলোচনা হয়েছে যে অনেক কাজ হচ্ছে, এটাকে একটু প্রচারে নিয়ে আসা- এটা প্রধানমন্ত্রীর বার্তা।হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের জন্য ইতিমধ্যে মাসে ৩০ কেজি করে চাল ও ৫০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

এদিকে,মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী লাকী আখান্দের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শিল্পী গত শুক্রবার মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখান্দের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা।মন্ত্রিসভা শোক প্রকাশ করে তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।লাকী আখান্দের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। শৈশব পেরোতেই তিনি সুযোগ পেয়ে যান রেকর্ড লেভেল প্রতিষ্ঠান এইচএমভিতে।আশির দশকের শুরুতে লাকী আর ভাই হ্যাপী আখান্দ জুটির বেশ কিছু গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় লাকী মূলত ছিলেন সুরকার ও গীতিকার। আর সেই গানের শিল্পী ছিলেন হ্যাপী। সে সময়ের একটি টিভি নাটকে ‘এই নীল মনিহার’ গানটি দারুণ সাড়া ফেলে।১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে বাজারে আসে লাকীর প্রথম একক অ্যালবাম। ‘এই নীল মণিহার’ ছাড়াও ওই অ্যালবামের ‘আমায় ডেকো না’,‘রীতিনীতি জানি না’, ‘মামনিয়া’, ‘আগে যদি জানতাম’ গানগুলো শ্রোতাদের মাঝে সাড়া ফেলে।

১৯৮৭ সালে হ্যাপীর মৃত্যুর পরপর সঙ্গীতাঙ্গন থেকে অনেকটাই স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান এই গুণী শিল্পী। দীর্ঘ নীরবতার পর ১৯৯৮-এ ‘পরিচয় কবে হবে’ ও ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ নামে তার দুটি অ্যালবাম আসে।লাকী আখান্দ সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মাত্র ১৫ বছর বয়সে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাধীণ বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন।”কিংবদন্তি এই সঙ্গীত শিল্পীর সুরারোপিত গান মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করত উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরাও শুনেছি ওই সময়ে। তার বিশেষ গানের মধ্যে রয়েছে, স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে, এই নীল মণিহার, আবার এলো যে সন্ধ্যা, কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে, আমায় ডেক না, আগে যদি জানতাম, মামনিয়া, লিখতে পারি না কোনো গান, রীতিনীতি জানি না ইত্যাদি। এগুলো খুবই জনপ্রিয় গান, ওনার লেখা এবং সুর করা গান।তিনি দেড় হাজারের বেশি গানে সুরারোপ করেন এবং বাংলা গানে এক নতুন ধারার সূচনা করেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকির ঘুড্ডি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।লাকী আখান্দের মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হল, বলেন তিনি।