চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ঘিরে রাখা ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াটের সদস্যরা।অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরেই দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি এনে রাখা হয়েছে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি।সকালেই ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাতে অভিযান চালানোর জন্য এনে রাখা হয়েছে জেনারেটর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে থাকা আবুকে (৩০) ফিরে আসার জন্য তাঁর মা ও পরিবারের সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি কোন সাড়া দেননি।বুধবার ভোররাত থেকে উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামের বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট রয়েছে। আছে স্থানীয় থানার পুলিশ। বিকেল পৌনে পাঁচটচার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন সোয়াট সদস্যরা।বিকেলে আবুর চাচি চামেলি বেগম, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রুনা বেগমকে নিয়ে তার মা ওই বাড়ির দরজার সামনে যান। এ সময় মাইকে তারা আবুকে বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান। বেশ কয়েকবার আহ্বান জানানোর পরও ভেতর থেকে কোন সাড়া মেলেনি। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশ ছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথে আবুর চাচি চামেলি বেগম সাংবাদিকদে বলেন, মাইকে আবুকে বাড়ির বাইরে আসতে বললেও ভেতর থেকে কোন সাড়া মেলেনি।ওই বাড়িতে আবুর পরিবার ছাড়াও বাড়িতে আরও দুজন থাকতে পারেন বলে ধারণা পুলিশের।ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আবদুল মান্নান বলেছেন, সোয়াট দল অপারেশনের জন্য প্রস্তুত।

তবে কখন ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু হতে পারে- সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, জঙ্গিদের অবস্থানের খবর পেয়ে বুধবার ভোরে উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের মালিকানাধীন ওই বাড়ি ঘিরে ফেলেন স্থানীয় পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম বলেন, ওই বাসা ঘিরে ফেলা হলে ভেতর থেকে গুলি ছোড়া হয়। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে।তবে সেখানে কী পরিমাণ বিস্ফোরক বা গোলাবারুদ আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গোমস্তাপুর সার্কেলের এএসপি মাইনুল ইসলাম জানান, একতলা ওই বাড়িতে রফিকুল আলম আবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী-সন্তানসহ চারজন থাকে বলে তাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে।সকাল থেকে কয়েক দফা মাইকে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে। আশপাশের চারটি বাড়ির লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।এদিকে জননিরাপত্তার স্বার্থে শিবগনগর ও আশপাশের এলাকায় সকালেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।সকালে ওই এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায় দূর থেকেও। তবে পরে পরিস্থিতি চুপচাপ হয়ে যায়। নিরাপত্তার কারণে সাংবাদিকদের ওই বাড়ির কাছে যেতে দেয়নি পুলিশ।কাউন্টার টেররিজমের আবদুল মান্নান বলেন, “ওই বাড়ির ভেতরে নারী ও শিশুসহ চারজন আছে বলে আমরা ধারণা করছি। মাইকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। আমরা চেষ্টা করব শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে।

শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে আমবাগানের মধ্যে একতলা ওই বাড়ির মালিক ৭৫ বছর বয়সী সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাস। তিনি এলাকায় ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নিজের পরিবার নিয়ে পাশেই আরেকটি বাড়িতে তিনি থাকেন।স্থানীয়রা জানান, মাস তিনেক আগে চাচরা গ্রামের দিনমজুর আফসার আলীর ছেলে রফিকুল আলম আবুকে ভাড়া ছাড়াই ওই বাসায় থাকতে দেন জেন্টু বিশ্বাস।একসময় মাদ্রাসায় পড়া আবু একজন ভ্রাম্যমাণ মসলা বিক্রেতা। আট ও ছয় বছর বয়সী দুটি মেয়ে রয়েছে তার।ত্রিমোহনীর ওই বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চাচরা গ্রামে আবুর বাবা-মা থাকেন। সকালে সাংবাদিকরা সেখানে গেলে আবুর মা ফুলছানা বেগমের সঙ্গে তাদের কথা হয়। তিনি বলেন, প্রায় নয় বছর আগে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ের পর একই উপজেলার আব্বাস বাজারে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আবু। মাস তিনেক আগে তিনি জেন্টুর বাড়িতে ওঠেন ছেলেবেলায় আবু চাচরা গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বলে জানালেও কোন শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন- সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তার মা।তিনি জানান, আবু দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বোনের বিয়ে হয়েছে। আর ছোট ভাই আবদুস সবুর রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।সকালে পুলিশ আবুর বাসা ঘিরে ফেলার আগেই কানসাট ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকার তিনটি বাড়ি ঘেরাও অভিযান চালানো হয়। তবে সেখানে কাউকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ স্বীকার করেনি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালানোর পর পুলিশ গত শুক্র ও শনিবার ঝিনাইদহের একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালিয়ে ‘বিপুল বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে।এরপর মঙ্গলবার দিনভর রাজশাহীর একটি এলাকায় কয়েকটি বাড়ি ঘিরে ব্লক রেইড’চলে। তবে সেখানে কোনো জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায়নি পুলিশ।