যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডের পপ কনসার্টে হওয়া জোড়া বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২-এ দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। বিবিসি, সিএনএন ও গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫৯ জন। গ্রেটার ম্যানচেস্টার জুড়ে মোট আটটি হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের পর থেকে মোট ৬০টি অ্যাম্বুলেন্স হতাহতদের বহনের কাজে নিয়োজিত ছিল বলে জানিয়েছে নর্থ ওয়েস্ট অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেস। এছাড়া অল্প আঘাত পাওয়াদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

২১ মে সোমবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ম্যানচেস্টার অ্যারেনায় মার্কিন সংগীতশিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে এ বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের শব্দে দিগ্বিদিক ছুটতে গিয়ে অনেকে নিখোঁজ হয়ে পড়ে। আর তাদের ফিরে পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনরা। পুলিশের দাবি অনুযায়ী আত্মঘাতী ওই হামলাকারী ছিলেন লোন উলফ।

বিস্ফোরণের সময় কনসার্টে উপস্থিত অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন ওন্ধুরা।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি আত্মঘাতী হামলা ছিল বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তাদের ধারণা, হামলাকারী একজন মাত্র ব্যক্তি ছিল। বোমা বিস্ফোরণের সাথে সাথে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। হামলাটিতে কোনো বড় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সম্পৃক্ততা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঘটনার পরপরই পুরো গ্রেটার ম্যানচেস্টার জুড়ে সশস্ত্র পুলিশের টহল বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ওই অঞ্চলের চিফ কনস্টেবল ইয়েন হপকিন্স। এছাড়াও সাদা পোশাকেও পুলিশের সদস্য পুরো শহরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে।বোমাতে পেরেক জাতীয় স্প্লিন্টার ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানান তিনি। বিশ্বনেতারা ম্যানচেস্টারে এ হামলার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার ব্রিটিশ সময় সকাল ৯টার দিকে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র সভাপতিত্বে ক্যাবিনেটের জরুরি প্রতিক্রিয়া কমিটি ‘কোবরা’র একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে ম্যানচেস্টার এরিনা সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া ট্রেন স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশের বিরাট এলাকা জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ।২০০৫ সালের ৭ জুলাই যুক্তরাজ্যের লন্ডনে হওয়া বোমা হামলার পর এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। ওই ঘটনায় ৫২ জন নিহত হয়েছিল। এই হামলাকে প্রাথমিকভাবে আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড হিসেবে শনাক্ত করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। হামলার প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেনে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণা স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া সব রাজনৈতিক দল। তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে সারাবিশ্বে।

এদিকে ব্রিটেনের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া সমস্ত রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনি প্রচারণা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমে শুধু কনজারভেটিভ, লিবারেল ডেমোক্র্যাট এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে নির্বাচনি প্রচারণা স্থগিত ঘোষণা করে। পরে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। শীর্ষ নেতা জেরেমি করবিন জানিয়েছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র সঙ্গে আলোচনা করেই সবগুলো দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পরবর্তী ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত ৮ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের সব ধরনের প্রচারণা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি হতাহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে বিশ্বনেতারা। বেথলেহাম সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় ব্রিটিশ জনগণের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট অব রাশিয়া নামের টুইটার একাউন্টে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিন শোক ও সমবেদনা জানান। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি ভীষণ মর্মাহত। তীব্র নিন্দা জানাই এই হামলার। আমি উদ্বিগ্ন সেই পরিবারগুলোকে নিয়ে যারা স্বজন হারিয়েছেন। আহতদের জন্য রইলো প্রার্থনা।’

‘এই পর্যায়ে আমরা ধারণা করছি, একজন হামলাকারীই এই হামলা চালিয়েছে।হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।’ বলেছেন ম্যানচেস্টার পুলিশের চিফ কনস্টেবল। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘হামলাস্থলেই নিহত হয়েছেন হামলাকারী।এখন বিবেচ্য হলো, তিনি নিজ সিদ্ধান্তে হামলা চালিয়েছেন নাকি কোনও নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কাজ করেছেন।’

উল্লেখ্য লোন উলফ অর্থ হলো একা একজন ব্যক্তির ‘টার্গেটেড’ কোনও স্থানে গিয়ে আত্মঘাতী হামলা করা। এ ধরনের হামলার কারণে হামলাকারী জীবিত না থাকায় তার কাছ থেকে কোনও তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ম্যানচেস্টার এরিনা কর্তৃপক্ষ জানায়, ভেন্যুর বাইরে এক জনসমাগম এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে। কনসার্টে সেসময় প্রায় ২১ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বিস্ফোরণে পুরো দালান কেঁপে উঠে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পালাতে শুরু করে। ইতোমধ্যে এরিনা সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া ট্রেন স্টেশনসহ বড় এরিনাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে মঙ্গলবার সারাদিন এগুলো বন্ধ থাকবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হতাহতদের প্রতি ও তাদের পরিবারের পাশে রয়েছেন বলে জানান। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন ও লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা টিম ফ্যারনও তাদের সহমর্মিতা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এ নিয়ে কোবরা সরকারি জরুরি কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা হয়েছে। আত্মীয় ও বন্ধুদের সম্পর্কে জানার জন্য পুলিশ সবাইকে +৪৪০১৬১৮৫৬৯৪০০ নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলেছে।