জনগণকে বোকা বানানোর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সরকার ভুল পরিসংখ্যান দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের কথায় মনে হয়, দেশ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছে, উন্নয়নের লহরি বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। রোজা সামনে রেখে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে।শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুবদল আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে এই সভার আয়োজন করা হয়।

নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকারকে সরাতে হবে। বর্তমান সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশির নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার জবাব দিতে হবে। বিএনপি ভিশন-২০৩০ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকার নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরা জনগণের করের টাকায় বেতন পান। যাঁরা জনগণের ওপর নির্যাতন করছেন, তাঁদের এর দায়দায়িত্ব নিতে হবে।

জনগণকে বোকা বানানোর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সরকার ভুল পরিসংখ্যান দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার লক্ষ্যে কাজ করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরিসংখ্যানের ধূ¤্রজাল তৈরি করে তারা অর্থনীতিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাতে চায়।বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনীতি হচ্ছে একটা লুটেরা অর্থনীতি, লুম্পেন ইকোনমি। এখন এই অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে।অর্থনীতির পরিসংখ্যানে একটা ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। জুয়েল আইচ ম্যাজিক দেখান, একটা ফুল নিয়ে এসে একশটা ফুল দেখান। আজকে এরা (সরকার) অর্থনীতিতে একটা ফুল দিয়ে ১০০টা ফুল দেখাতে চায়।বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগের কথা ‘চিন্তাও করে না’ দাবি করে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে বাংলাদেশকে উদ্যোক্তাদের আশা-প্রত্যাশা অনুযায়ী ‘মুক্ত অর্থনীতির সমৃদ্ধ দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা কখনোই সম্ভব হবে না বলে ভাষ্য বিএনপি মহাসচিবের। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক তুলে ধরে অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের রূপ্তারি প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ের কমছে, আমাদের রেমিট্যান্স গ্রোথ ধস নামছে। এই অবস্থায় দেশের অর্থনীতিকে কিভাবে আবার ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা যাবে, এটা আমি জানি না, অর্থনীতিবিদরা বলতে পারবেন।

দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, লুটপাট কী রকম হয়েছেৃ, পানামা স্ক্যান্ডেলের কথা শুনেছেন, আজকের পত্রিকায় একটি খবর আছে, বাংলাদেশ হচ্ছে পঞ্চম দেশ যেখানে বিএমডাব্লিউ গাড়ি (বিলাসবহুল) সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। তার মানে এটা মনে কইরেন না যে, এখানকার মানুষ সবাই বিএমডাব্লিউ গাড়ি কেনার মতো বিত্তশালী হয়ে গেছেন, তাদের সমৃদ্ধি বেড়েছে।এখানে লুটেরা অর্থনীতির মানুষের, যারা লুট করছে তারা এখন এভাবে লুট করছে যে, তারা বিএমডাব্লিউ গাড়ি বেশি কিনছে।বিএনপির শাসনামলে ব্যাষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীল ছিল বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।বিএনপির সময়ে মেক্রো ইকোনমি অত্যন্ত স্থিতিশীল ছিল, শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেজন্য এখানে ব্যাংকি সিস্টেমটা অত্যন্ত ভালোভাবে কাজ করেছে। আজকে সেই ব্যাংকি সিস্টেমকে তারা শেষ করে দিয়েছে।শুনেছেন ইতোমধ্যে ব্যাংকিংয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতির জন্য এখন আবার ভর্তুকি দিতে হবে। লুট করেছে তারা, দেবে আমরা জনগণ, আমাদের ট্যাক্সের টাকা থেকে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।ব্যক্তিখাতে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেন মির্জা ফখরুল।ব্যক্তিখাতে কাদেরকে ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছে? দেখবেন, সমস্ত আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী যারা আছেন, তারাই পেয়েছে। এরপর হুসাইন মো. এরশাদ সাহেবও বাদ যাননি, আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মহীউদ্দিন খান আলমগীরও বাদ যাননি।অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত নন, ব্যবসা করেন না এমন সব ব্যক্তিকে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। এ অবস্থার থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু নির্বাচনে মধ্য দিয়ে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম। এতে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন প্রমুখ।