লন্ডনের বারা মার্কেট এলাকায় পথচারীদের চলাচলের রাস্তায় গতকাল একজন নারী এক গোছা ফুল রাখছেন। সেখানে শনিবারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি তিনি এভাবেই শ্রদ্ধা জানান ষ ছবি: এএফপিলন্ডনে গত শনিবার রাতে সন্ত্রাসী হামলা চালানো তিনজনকেই শনাক্ত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দুজনের নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁদের অন্তত একজনের উগ্রবাদী আচরণ সম্পর্কে আগে থেকেই জানত পুলিশ।এদিকে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর রোববার রাতে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) লন্ডন হামলার দায় স্বীকার করেছে।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ সোমবার দুই হামলাকারীর নাম প্রকাশ করে। তাঁদের মধ্যে ২৭ বছর বয়স্ক খুরাম বাট পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি পরিবার নিয়ে পূর্ব লন্ডনের বার্কিং এলাকায় থাকতেন বহু বছর ধরে। আরেক হামলাকারীর নাম রশিদ রেদুয়ান। বয়স ৩০ বছর। তিনি মরক্কো-লিবিয়া বংশোদ্ভূত। অন্যজনের নাম অবশ্য জানানো হয়নি।অন্তত এক হামলাকারীর সম্পর্কে পুলিশকে আগে সতর্ক করার কথা প্রকাশ পাওয়ার কারণে এই হামলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে। তবে তদন্ত সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ও এমআই-৫ জানিয়েছে, খুরাম বাট সম্পর্কে আগে থেকেই জানত তারা। তবে তিনি এ ধরনের হামলা চালাতে পারেন এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না।লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা কোনো বৃহত্তর নেটওয়ার্কের অংশ কি না, সেই প্রশ্ন মাথায় রেখে তদন্ত চলছে।

স্থানীয় সময় গত শনিবার রাত ১০টার পর ব্যস্ত লন্ডন ব্রিজ এলাকায় গাড়িচাপা দিয়ে এবং এর অদূরে একটি মার্কেটে ছুরি হামলা চালান তিনজন। এতে ৭ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হন। পরে তিন হামলাকারীই পুলিশের গুলিতে নিহত হন।২৭ বছর বয়সী বাটের বিষয়ে ডেইলি মেইল-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফুটবল খেলতে গিয়ে স্থানীয় তরুণদের উগ্রবাদে দীক্ষা দিতেন তিনি। বিষয়টি এলাকাবাসী একাধিকবার পুলিশকে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া দুই বছর আগে চ্যানেল ফোরে প্রচারিত ব্রিটিশ জিহাদি নামের প্রামাণ্যচিত্রে ওই হামলাকারীকে দেখানো হয়। এতে দেখা যায়, স্থানীয় রিজেন্ট পার্কে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের পতাকা তোলা নিয়ে তিনি পুলিশের সঙ্গে তর্ক করছেন। দুই সন্তানের জনক এই হামলাকারী পূর্ব লন্ডনের বার্কিং এলাকায় স্ত্রী ও মাকে নিয়ে বাস করতেন।ওই হামলাকারীর এক বন্ধু বিবিসিকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে সে বদলে যাচ্ছিল। আমরা তার উগ্রবাদী চিন্তার বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করেনি।

এর আগে অভিযোগ ওঠে, ম্যানচেস্টারে হামলাকারী সালমান আবেদির বিষয়ে পুলিশকে বারবার জানানো হয়েছিল, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উগ্রবাদী হিসেবে অভিযোগ পেলেই কাউকে সম্ভাব্য হামলাকারী হিসেবে ধরে নেওয়া যায় না। ব্রিটিশ পুলিশকে অন্তত ৫০০ সম্ভাব্য হামলাকারীর ওপর সব সময় নজর রাখতে হচ্ছে। আরও ২৩ হাজার লোক আছেন তাদের নজরদারির তালিকায়।সাধারণ নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে ঘটা এই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার কারণে রোববার বন্ধ ছিল নির্বাচনী প্রচারণা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে আবার প্রচারে নামে দলগুলো। স্বাভাবিক কারণেই শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রাধান্য পাচ্ছে সন্ত্রাসবাদ বন্ধে দলগুলোর অবস্থান।মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ১১টায় হতাহত ব্যক্তিদের স্মরণে যুক্তরাজ্যজুড়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করার কথা রয়েছে।