বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনে মামলা থাকার কারণে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।শনিবার সিলেট সিটি করপোরেশন আয়োজিত সিলেট নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপানা নিয়ে একটি সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেছেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হলো না কেন, এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ এটা করতে পারি নাই। ফিলিপাইনে একটা কেস আছে। কেস থাকায় রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ওই বছরের ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব ও বাজেট শাখার যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাধ্যমে চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোতে। এই অর্থের দেড় কোটি ডলার ইতিমধ্যে ফেরত এসেছে, বাকি অর্থ উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ।এ সময় পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে যাঁদের নাম আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটিরও তদন্ত চলছে। দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) বিস্তারিতভাবে খোঁজখবর নিচ্ছে। তারা প্রতিবেদন দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও আরও সচেতন হতে হবে।তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। ফিলিপিন্সে মামলার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত এটি সম্ভব না।গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠানো হয় ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকে। ওই অর্থের অধিকাংশ জুয়ার টেবিলে চলে গিয়েছিল; তবে উদ্ধার করা দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে ফেরত দেয় ফিলিপিন্স।

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা এই ঘটনায় সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে এক বছর আগে প্রতিবেদন জমা দিলেও কয়েকদফা ঘোষণা দিয়েও তা প্রকাশ করেননি অর্থমন্ত্রী।বাকি অর্থ উদ্ধারের আশা এখনও ছাড়েনি বাংলাদেশ। চুরির সব টাকা ফেরত আনার পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন বলে কয়েক মাস আগে মুহিত জানিয়েছিলেন।শনিবার সিলেটের একটি হোটেলে সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মামলার কারণ দেখান তিনি।ইতোমধ্যে রিজল ব্যাংক বলেছে,আমরা টাকা দেব না। এ অবস্থায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলে একটু অসুবিধা হবে।

রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখা, যার মাধ্যমে লেনদেন হয় বাংলাদেশের রিজার্ভেররিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখা, যার মাধ্যমে লেনদেন হয় বাংলাদেশের রিজার্ভেরবিশ্বজুড়ে আলোচিত পানামা পেপার্সে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে সরকার কী করবে, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন মুহিতকে।তিনি বলেন, অনেকের নাম এসেছে। তবে আমাদের এখানে আমি যেটা শুনেছি এটা এত অথেনটিক না। বিষয়টি নিয়ে দুদক তদন্ত করছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মুহিতের সঙ্গে ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আব্দুল মোমেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।