হজ যাত্রীদের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভিসা জটিলতায় বৃহস্পতিবার আরো দুটি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক হজযাত্রী না পাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আরও দুটি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়। বাতিল হওয়া বিজি-১০৫৫ ফ্লাইটির আজ সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে ও বিজি-৩০৫৫ ফ্লাইটটির আজ বিকেল চারটায় সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।এই নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২১টি হজ ফ্লাইট বাতিল হলো।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ প বলেন, পর্যাপ্তসংখ্যক হজযাত্রী না পাওয়ায় ফ্লাইট দুটি বাতিল করতে হয়েছে।উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বুধবার বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দিক আহমেদ বিমানের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত ২১টি হজ ফ্লাইট বাতিলের কারণে ৯ হাজার ৮৮৭ যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা হারিয়েছে (ক্যাপাসিটি লস) বিমান। এতে বিমান ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের হজ ফ্লাইট শুরু হয়। ওই দিন সকালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪১৯ জন হজযাত্রী নিয়ে বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে।চলতি বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে হজ ফ্লাইট ও নিয়মিত ফ্লাইটে ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন হজযাত্রী জেদ্দা যাবেন। ভিসা জটিলতায় যাত্রী না পেয়ে ১৯টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আহমেদ।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার বিমানের বলাকা কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এ পরিস্থিতির যে অবসান হবে, সেই জায়গাটায় আমরা এখনও যেতে পারছি না।এজন্য সরাসরি কাউকে দায়ী না করলেও বাড়ি ভাড়া করার ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিগুলোর সমন্বয়হীনতার কথা বলেছেন বিমানের এমডি। এ সঙ্কট কাটিয়ে হজযাত্রীদের সবাইকে সৌদি আরবে পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এ পর্যন্ত বিমানের ৫৪টি ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইট এবং ১৬টি শিডিউল ফ্লাইটে ২৪ হাজার ১১৫ জনকে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি কঠিন হলেও তা এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। সব হজযাত্রীকে সময়মতো জেদ্দা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনও আশাবাদী।”সৌদি সরকারের কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা। কিন্তু ভিসা জটিলতা, সৌদি আরবে মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি এবং টানা দ্বিতীয়বারের হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে ভিসা ফি বৃদ্ধির ফলে এবারের হজযাত্রায় জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

যাত্রী না পাওয়ায় বুধবার পর্যন্ত মোট ১৯টি হজ ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান, যেসব ফ্লাইটে সাড়ে আট হাজার যাত্রী জেদ্দা যেতে পারতেন। এর বাইরে হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্বে থাকা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সেরও চারটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। বিমানের এমডি ও সিইও মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, “হজ যাত্রী পরিবহনে আমরা লাভ লোকসান হিসাব করি না। এখানে ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। এটাকে লোকসান বলব না, কারণ এ আয় থেকে আমাদের খরচও হত।এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য কোনো দেশের হজ যাত্রীদের এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে তার জানা নেই।তারা সরকারিভাবে হজ পালন করতে যায়। যাত্রীদের পাঠানোর দায়িত্ব নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের ওপরই থাকে।চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ৩০ অগাস্ট হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে। সৌদি সরকার ১৭ অগাস্ট পর্যন্ত ভিসা দেবে এবং হজের শেষ ফ্লাইট যাবে ২৬ অগাস্ট।গত ২৪ জুলাই ফ্লাইট শুরুর পর ১৬ দিনে ৭০টি ফ্লাইটে ৪০ হাজারের মত হজ যাত্রীকে সৌদি আরব পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে বিমান ২৪ হাজার ১১৫ জনকে জেদ্দা নিয়ে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ৫২ হাজার হজ যাত্রীর ভিসা করিয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে তাদের জন্য ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার বিষয়টিকে ‘বেশ কঠিন’ বলেই মনে করছেন মোসাদ্দেক আহমেদ।তিনি বলেন, “এটা খুব চ্যালেঞ্জিং একটা সিচুয়েশন। সিচুয়েশনটা ইমপ্র“ভ করা দরকার। আমরা এর মধ্যে হজযাত্রী পরিবহনের জন্য ১৪টি স্লটের আবেদন করেছিলাম। যার মধ্যে সাতটি আমরা ব্যবহার করতে পারব।”বিমানের এত বেশি ফ্লাইট বাতিল হলেও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে ততটা সমস্যা না হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোসাদ্দেক বলেন, সৌদিয়ার কোন হজ ফ্লাইট নাই। সেখানে শিডিউলড ফ্লাইটে যাত্রীরা যাতায়াত করছে। কিন্তু বিমানের যেগুলো বাতিল হয়েছে সবগুলো হজ ফ্লাইট। যাত্রী না থাকার কারণে সেগুলো বাতিল হয়েছে।