মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে নতুন করে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার সেনা-গণতান্ত্রিক ডিফ্যাক্টো সরকার। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, নতুন করে অভিযান চালানোর স্বার্থে সেখানে মোতায়েনকৃত সেনার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সও নতুন করে সেনা মোতায়েনের খবর দিয়েছে।

গতবছর অক্টোবরে ৯ সীমান্ত পুলিশ হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী পুলিশ একযোগে রোহিঙ্গা দমনে অভিযান শুরু করে। মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত চলা সেই সেনা অভিযানে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়। জানুয়ারিতে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের পর জাতিসংঘ সে সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ আনে। তবে মিয়ানমার সরকার দাবি করছে, মে ইউ নামের পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা সোচ্চার রয়েছে। শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন খবর দিয়েছে, সেখানে নতুন করে অভিযান (ক্লিয়ারেন্স অপারেশন) চালাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আলজাজিরা বলছে, গত বছর অক্টোবরের অভিযানের সময়ও ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শব্দটি ব্যবহার করেছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

অক্টোবরের সেই দমন অভিযানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার খবরে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-ধর্ষণ আর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার তথ্যপ্রমাণ হাজির হয়। বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় নিপীড়নের শিকার প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা। পরে ইউএনএইচসিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের যথাযথ সহায়তা না দিলে তারা আবারও নিপীড়িত হতে পারে। নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকার অবশ্য রোহিঙ্গা নিপীড়নের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।শনিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট নিরাপত্তা জোরদার এবং বাড়তি সেনা মোতায়েনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সুনির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কার্ফিউ জারি হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। মে ইউ নামের পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গিবাদ দমনেই এই অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে।রাখাইনের দুই সামরিক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, গত সপ্তাহে মংডু শহরের কাছের পর্বতে ৭ বৌদ্ধর মৃতদেহ পাওয়ার পর নিরাপত্তা কঠোর করতে সহায়ক হিসাবে সেনাবাহিনী রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে সেনা পাঠিয়েছে। এদের একজন জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বুথিডং এবং মংডুসহ কয়েকটি শহরে প্রায় ৫শ’ সেনা পাঠিয়েছে। আর রাখাইন রাজ্যের পুলিশ প্রধান কর্নেল সেইন লুইন রয়টার্সকে বলেছেন, আমাদেরকে নিরাপত্তা অভিযান বাড়াতে হবে। কারণ, নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিদ্রোহীদের হাতে কয়েকজন মুসলিম এবং বৌদ্ধ নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য সামরিক মুখপাত্র কিংবা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের আলাদা কোনও জাতিগোষ্ঠীই মনে করে না। বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত ওই জনগোষ্ঠীকে তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে দায়িত্ব অস্বীকার করতে চায়। তবে রোহিঙ্গারা নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক বলেই জানে। নাগরিকত্বকে তারা অধিকার হিসেবেই দেখে। তবে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে গিয়েও তারা অজ্ঞাত হামলার শিকার হচ্ছেন বলে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।চলতি সপ্তাহে দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় রয়টার্সসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিককে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। মংদাওয়ের বুথিদংয়ের দুই দিন ছিলেন সাংবাদিকরা। এরপর অভিযুক্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। সাংবাদিকদের অনুরোধে দেখানো হয় কিয়ার গং তং এলাকাও। তবে সময়ের অভাবের অজুহাত দেখিয়ে সব স্থানে নেওয়া হয়নি তাদের।