মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানে গুলিবিদ্ধ আরও তিন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের পর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।কক্সবাজারের পাশাপাশি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ছয়টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়েও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় আছে শয়ে শয়ে রোহিঙ্গার নারী-পুরুষ-শিশু।কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় আরও ৯২ জনকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন রোববার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের পর বলেছেন, আমাদের সীমান্তে কোনো সন্ত্রাসীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

মিয়ানমারের বাহিনী সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করলে বিজিবি তার ‘সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে’ বলেও জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ওই রাতের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

আরও সহিংসতার আশঙ্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ অংশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের গুলি করার ঘটনাও ঘটেছে।শনিবার ভোর রাতে মিয়ানমার থেকে আসা গুলিবিদ্ধ চারজন রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে মুছা নামে একজন শনিবার সকালে মারা যান।এরপর শনিবার গভীর রাতে কক্সবাজার জেলার উখিয়ার কুতুপালং থেকে আরও তিন রোহিঙ্গাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন জানান। বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছয় রোহিঙ্গা হলেন- মোক্তার হোসেন,শামসুর ইসলাম ও মো. ইদ্রিস, জেয়াবুল হক, ইলিয়াস ও মোহাম্মদ তোহা।কক্সবাজারের পালংখালী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর শুক্রবার থেকে নাফ নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীরে বসে আছে সহায় সম্বলহীন কয়েক হাজার মানুষ। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়েও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি সদস্যরা জানিয়েছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দা সামশুল আলম জানান, ইতোমধ্যে কয়েকশ রোহিঙ্গা ঘুমধুম,তুমব্রু ও রেজু মঞ্জয় পাড়ায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।চাকঢালার সীমান্তের ওপারে ওয়ালিডং,খালিডং ও বিকুবুনিয়ার জঙ্গলে এবং সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি। লেমুছড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. কালু বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা যে কোনো সময় একযোগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলে বিজিবি সদস্যরা তাদের ঠেকাতে পারবে কিনা জানি না। আমরা আতঙ্কে আছি।নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সরোয়ার কামাল বলেন, ঘুমধুমের কলাতলী ও তুমব্র“সহ তিনটি পয়েন্টে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। তাদের নির্দিষ্ট তিনটি পয়েন্টে আটকে রাখা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা বলেছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হবে।বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনজুরুল হাসান খান জানান, শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত সময়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ৭১ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।কক্সবাজারের নাফ নদীর দমদমিয়া ও শাহপরীর দ্বীপ পযেন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় আটক আরও ২১ জনকে শনিবার রাতে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান।এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার ১৪৬ জন এবং শনিবার ৭৩ জন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠান বিজিবি সদস্যরা।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন রোববার দুপুরে নাইক্ষ্যছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে যে গোলাগুলি হয়েছে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসেনি। দেশের অভ্যন্তরে আঘাত এলে তার জবাব দিতে বিজিবি প্রস্তুত আছে।বাংলাদেশ সীমান্তে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে বিশ্বাশি। মিয়ানমারে যে সমস্যা তা তাদের কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে সমাধান করা জরুরি। মিয়ানমারের উচিত তাদের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা হচ্ছে। বিজিবি তাদের প্রবেশ করতে দেবে না।বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দেওয়া হয় না, হবেও না। সীমান্তে টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিজিবি সীমান্তের সকল নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।