শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের মাত্র একদিন বাকী। নাড়ির টানে বাড়িমুখী মানুষ।যে যেভাবে পারছে লঞ্চ, ট্রেন কিংবা ছাদে নাড়ির টানে পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরে লাখো ফিরছে মানুষ। রাজধানীর বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড়। অন্যদিকে ট্রেনের ছাদে করে বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা। একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন আমানউাহ আমান। তাঁর বাড়ি জামালপুর। বৃহস্পতিবার থেকে কারখানায় ছুটি শুরু হয়েছে। সকালেই চলে এসেছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কমিউটার ট্রেনের টিকিট কেটেছেন পাক্কা চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে। এখন আছেন ট্রেনে ওঠার অপেক্ষায়।কমলাপুর রেলস্টেশনে অযাত্রীদের ব্যাপক ভিড়। আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে ভিড় কম। আগে থেকে কেনা টিকিটের যাত্রীই বেশি। শেষ মুহূর্তে যাঁরা টিকিট কিনছেন, বেশির ভাগই পাচ্ছেন দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট। ভাগ্য ভালো থাকলে কেউ কেউ পাচ্ছেন বিশেষ আসনের টিকিট। তবে মূল ভিড় দেখা গেছে কাছেপিঠের গন্তব্যে চলা কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে।সকালে জামালপুর, বলাকা, দেওয়ানগঞ্জ ও তিতাস কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ছিল লম্বা লাইন। কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে চিৎকার। লাইনের বাইরে থেকে যেন কাউকে আগে টিকিট কেনার সুযোগ না দেওয়া হয়। কেউ বলছেন ‘লাইনে দাঁড়ান’, আবার কেউ কেউ লাইনের বাইরে থেকে ঢোকার চেষ্টা করা ব্যক্তির উদ্দেশে দিচ্ছেন সাবধানবাণী, ঝগড়াও শুরু হয়ে যাচ্ছে কখনো কখনো।আমানউল্লাহ যেমন পাঁচটি টিকিট কিনে কোন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে, তার খোঁজ করছিলেন। তিনি আসনের টিকিট পেয়েছেন তিনটি। বাকি দুটি দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট। এ নিয়ে তাঁর আফসোসের শেষ নেই। সকালে আরেকটু আগে এলে হয়তো পেতেন আসনের টিকিট!কমলাপুর রেলস্টেশনে অনেকে নিচ্ছেন জরুরি টিকিট। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখেই রেলওয়ের কর্মকর্তারা জরুরি টিকিট বিক্রি করছেন। এগুলো মূলত দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইহসান করিম যাবেন চট্টগ্রাম। আগে না কাটায় এখন জরুরি টিকিটই তাঁর ভরসা। তিনি বলেন, আগে ভেবেছিলাম বাসে যাব। কিন্তু যানজটের কথা ভেবে এখানে এলাম। দাঁড়িয়ে যেতে কষ্ট হবে। কিন্তু কী আর করা! যেতে তো হবে।কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সব ট্রেন ঠিক সময়ই ছাড়ছে। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় পরপর আমরা ঘোষণা দিচ্ছি।

দূরপাল্লার বেশির ভাগ বাসের টিকিটই আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। সেখানে শেষ সময়ে টিকিট কেনার ধুম নেই। এখন শুধু যাত্রীদের গাড়িতে ওঠার অপেক্ষা। শ্যামলী পরিবহনের উত্তর কমলাপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক নিলয় ঘোষ বলেন, এখনো পর্যন্ত গাড়ি ঠিক সময়েই ছাড়া গেছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুক্ষণ পর থেকে সমস্যা হতে পারে।’ তিনি জানান, রাস্তায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। যেখানে যেতে পাঁচ ঘণ্টা লাগে, সেখানে এখন দু-তিন ঘণ্টা বেশি লাগছে।মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ছিল প্রচন্ড ভিড়। এখান থেকে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ উত্তরবঙ্গ ও সিলেট, চট্টগ্রামের উদ্দেশেও বাস ছাড়ে। টিকিট কাটার তাড়া দেখা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে ছাড়া বাস কোম্পানির কাউন্টারে। এগুলোতে তাৎক্ষণিক টিকিট বিক্রি হয়। আর দূরপাল্লার বাসগুলোর টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।ফারহানা পারভিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। যাবেন নওগাঁ। টিকিট কেটেছেন একতা ট্রান্সপোর্টে। ফারহানা বলেন, ‘বাস আসতে একটু দেরি হচ্ছে। দেখি কখন আসে। যেতে অনেক দেরি হবে, তা তো জানা কথাই। প্রতিবারই এমন হয়।

এসআর ট্রাভেলসের বাসযাত্রী নিয়ে যায় রংপুর, গাইবান্ধা ও বুড়িমারীতে। টিকিট কাউন্টারের সুপারভাইজার সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখা যাত্রীদের পাঠাচ্ছেন তাঁরা। অন্যান্য সময় যেতে লাগে ৮-১০ ঘণ্টা। এখন লাগছে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা। দেরির কারণ হিসেবে ভাঙা রাস্তা ও যানজটকে দায়ী করেন সাইফুদ্দিন।রাস্তায় যানজট নেই বলে দাবি করেন মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি শওকত আলী। তিনি বলেন, ‘অনেক গাড়ি আছে। সবকিছু ঠিকভাবেই চলছে। বরং যাত্রীর চাপ কম।’কমলাপুর: পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঘরে ফেরা মানুষের উপচানো ভিড় শুরু হয়েছে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে।বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনই দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়। বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা স্টেশনে অপেক্ষায় আছেন- কখন আসবে বাড়ির ট্রেন।জায়গা পাওয়া নিশ্চিত করতে অনেকে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উল্টো পথের ট্রেনে চেপে বসছেন। সেই ট্রেন কমলাপুরে এসে যাত্রী নামিয়ে নতুন যাত্রী নিয়ে আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটছে।রংপুর এক্সপ্রেসের ছাড়ার সময় সকাল ৯টায়। কিন্তু সকাল সাড়ে ৮টায় ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসতেই অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা তাতে উঠে পড়েন।ট্রেন পরিষ্কার করার জন্য ওয়াশ শেডে নেওয়া হবে জানিয়ে মাইকের মাধ্যমে যাত্রীদের নেমে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তাতে কান দেননি কেউ। পরে যাত্রী বোঝাই করেই ট্রেনটি ওয়াশ শেডে যায়।সকাল সোয়া ৯টায় প্ল্যাটফর্মে ঢোকে দিনাজপুর থেকে আসা একতা এক্সপ্রেস। এ ট্রেনও প্ল্যাটফর্মে আসামাত্র পূর্ণ হয়ে যায়। যাত্রীরা ট্রেনের ছাদেও উঠে বসেন।অনেক ঠেলাঠেলি করে নিজের আসনে বসার পর বেঙ্গল গ্র“পের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বললেন, প্রতি ঈদে এরকম ঝক্কির মধ্যে বাড়ি যেতে যেতে তিনি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

এটাই আমাদের নিয়তি। আমরা মেনে নিয়েছি। তবে সরকার চাইলে মানুষের এই ভোগান্তি কমাতে পারে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলে এ দুর্ভোগ কমবে।যত দুর্ভোগই হোক, বাড়ি গেলে সেটা আর মনে থাকে না বলে জানালেন একতা এক্সপ্রেসের আরেক যাত্রী এহসানুল হক।বাড়ি যাওয়ার আনন্দের কাছে এই কষ্ট কিছু না।নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি পৌনে দুই ঘণ্টা দেরি করে প্ল্যাটফর্মে ঢোকে। দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা পড়িমরি করে ট্রেনে উঠে পড়েন। এ সময় অনেকে জানালা দিয়ে ঢুকেও আসনে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ার টিকেট কিনেছিলেন শ্রীপুরের একটি পোশাক কারখানার কর্মী আয়েশা বেগম। সঙ্গে তার ভাবী। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে জয়দেবপুর থেকে উঠতে পারবেন কি না- সেই আশঙ্কায় ঢাকার পথের নীলসাগর এক্সপ্রেসে উঠে পড়েন তারা। উল্টো পথে কমলাপুর এসে তারপর শুরু হয় তাদের ঈদযাত্রা।আয়েশা বলেন, টিকেট কাটা আছে, কিন্তু মানুষের যে ভিড়, জয়দেবপুর থেকে ওঠার কোনো সুযোগ নাই। মেয়েরা তো আরও পারবে না। দেখেনৃ এখনই ট্রেনে পা ফেলার জায়গা নাই।বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আকাশ মেঘলা হয়ে বৃষ্টি শুরু হলে ট্রেনের ছাদে ওঠা যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকে ছাতা, পলিথিনের নিচে আশ্রয় নেন।রংপুর এক্সপ্রেসের ছাদে থাকা মিল্লাত হোসেন জানান, রংপুরের কাউনিয়ায় যেতে ট্রেনের ছাদে চড়েছেন তিনি।“টিকেট কিনতে পারি নাই। এই কারণে ছাদে যাইতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে অসুখ করার ভয় আছে, পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে। কিন্তু কি করা, যাওয়া লাগবে।বৃহস্পতিবারও কয়েকটি ট্রেন দেরি করে কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে। রাজশাহীর ধূমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা। কিন্তু সেটি দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি করে বেলা ৮টা ২০ মিনিটে ছাড়ে।নীলসাগর এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা সকাল ৮টায়। ট্রেনটি আড়াই ঘণ্টা দেরি করে বেলা সাড়ে ১০টায় ছাড়ে যায়।সকাল ৯টার রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে ১১টায়। খুলনার সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৭টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে ছেড়েছে ৮টা ২০ মিনিটে।তবে একতা, অগ্নিবীণা, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়েছে সময়মত।স্টেশন ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবার সারা দিনে ৬৭টি ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে বেলা ১১টা পর্যন্ত ছেড়ে গেছে ২৬টি ট্রেন।ট্রেনগুলো কমলাপুরে আসতে দেরি হওয়ায় সেগুলো ছাড়তেও বিলম্ব হয়েছে বলে সিতাংশু চক্রবর্তী জানান।“যাত্রীর অতিরিক্ত চাপও দেরি হওয়ার কারণ। প্রতিটি স্টেশনে যে সময় দেওয়া থাকে, যাত্রী ওঠানামায় তার চেয়ে বেশি সময় লাগে। তবে দেরি যে খুব বেশি হচ্ছে তা নয়।অনেক চেষ্টা করেও’ যাত্রীদের ছাদে ওঠা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না বলে জানান কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক।আমরা বারবার মাইকে বলি ছাদে না উঠতে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ছাদ থেকে নামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যাত্রীরা নামতে চায় না। যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে চায়।

সদরঘাট: বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের মোটামুটি ভিড় দেখা গেলেও উপচেপড়া অবস্থাটি ছিল না; কিন্তু অফিস ছুটির পর বিকালে পাল্টে যায় দৃশ্যপট।বিকালে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। পন্টুনে স্থান নেই বলে বারবার মাইকে ঘোষণা দেওয়া হলেও তাতে কেউ কান না দেওয়ায় বিকাল ৫টার দিকে পন্টুনে ঢোকার কলাপসিবল গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়।সদরঘাট নৌ টার্মিনাল থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার লঞ্চ ছেড়ে যায়। এসব লঞ্চের বেশিরভাগই বিকালে ছাড়ে।বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সদরঘাট পরিদর্শনে যান পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এবার রেল ও নৌপথে যাত্রী বেশি।বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, বিকাল ৫টার পর্যন্ত ৭০টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়।বুধবার ছেড়েছিল ১১৮টি লঞ্চ। বৃহস্পতিবার রাত নাগাদ অন্তত দেড়শ লঞ্চ সদরঘাট ছাড়বে বলে ধারণা জয়নাল আবেদীনের।লঞ্চ মালিক সমিতির প্রধান উপাদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৩টা থেকে যাত্রী নামতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে,কাল দুপুর পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যাবে।বিকালে যাত্রীর চাপ দেখে এমভি আওলাদ লঞ্চের মহাব্যবস্থাপক এম এ মাহফুজুল বলেন, আজ সব যাত্রী যেতে পারবে না লঞ্চের অভাবে।তার অভিযোগ, সকালে যাত্রী না ভরতেই লঞ্চগুলোকে ঘাট ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।তবে বিআরটিএর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, যেসব লঞ্চে যাত্রী ভরেছে। সেসব লঞ্চ নিয়ম মেনেই ছাড়া হয়েছে।সদরঘাটের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘যথেষ্ট’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমম্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মওদুদ হাওলাদার।
তিনি বলেন, ২৬৫ জন পুলিশ সদস্য সদরঘাটে পালা বদল করে ডিউটি দিচ্ছে। কিন্তু পিক আওয়ারে ২২৫ জন পুলিশ সদস্য ডিউটি দেয়। এছাড়া নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও র‌্যাব ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।সদরঘাটের সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে, যেখান থেকে ৩০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঘাটের পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।এদিকে বৃষ্টি হলেও নদীতে ১ নম্বর সতর্কতা রয়েছে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক দীনেশ কুমার বলেন, এই সতর্কতায় লঞ্চ চলতে কোনো বাধা নেই।ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেলেও কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের খাড়াজোড় বাইপাস এলাকা থেকে ছবিটি বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে তোলা। ছবি: প্রথম আলোকয়েক বছর ধরে বছরের দুটো ঈদেই গাজীপুর : ঘরমুখী মানুষের কাছে যানজটের কারণে আতঙ্ক বলে পরিচিত গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড়। এবার সেই পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। তবে গাড়িসংকট ও বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।গত চার-পাঁচ দিন, এমনকি গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত যানজট ছিল এই মোড়ে। রাতে মহাসড়ক ছিল একেবারেই ফাঁকা। তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি।সকালে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। তবে যানবাহনের চাপ ও যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রায় যানজটে তেমন দুর্ভোগ না হলেও আছে গাড়িসংকট। সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় ও যাত্রীর তুলনায় পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। অপেক্ষাকৃত ভাড়া কম ও যানবাহন অপ্রতুল থাকায় অনেক যাত্রী বাসের ছাদে ও ট্রাকে চড়ে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন।সকাল সাড়ে আটটার দিকে চন্দ্রা এলাকায় কারখানার শ্রমিক হাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলছিলেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর সকাল নয়টার দিকে তাঁকে একটি ট্রাকের উঠতে দেখা যায়।বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়, কোনাবাড়ী, সফিপুরসহ যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। তবে কালিয়াকৈর বাইপাস এলাকায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।একই অবস্থা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় টঙ্গী, ভোগরা বাইপাসসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরমুখী মানুষের চাপ ও যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।যানবাহনের সংকট থাকায় চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যাত্রীদের জটলা রয়েছে। অনেকে কম ভাড়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে ও ট্রাকে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। অনেক যাত্রীই বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন। যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন পুলিশ, আনসার ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্যরা।কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে কোথাও যানজট নেই। কিছু স্থানে সকালে জটলা হলেও সেগুলোও এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তিনি আশা করছেন, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। মাদারীপুর: ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের প্রধান পথ।মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে। কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট।বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে। অনেকেই জায়গা না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ছাদে চড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেছেন।মাদারীপুরগামী যাত্রী সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘অনেক কষ্টে বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ি পেয়েছি। কিন্তু গাড়ি যে চলছে না। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের জ্যামে আটকে আছে। কখন যে বাড়ি ফিরব, আল্লাহ জানেন।সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁঠালবাড়ি চারটি ফেরিঘাটের প্রতিটিতেই যাত্রীদের ঢল নেমেছে। ফলে গাড়ির জন্য অপেক্ষা না করে ব্যাগ হাতে নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন অনেকে। কেউবা আবার ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছেন। প্রতিটি পরিবহনের ছাদে যাত্রী উঠতে দেখা গেছে। লঞ্চঘাটেও ছিল যাত্রীদের ভিড়। তবে তীব্র ¯্রােত থাকার পরেও যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে।বরিশালগামী যাত্রী আয়েশা বেগম বলেন, ‘ঘাটে অনেক জট। গাড়িতে ওঠা কষ্টের। মাইক্রোবাসগুলোতেও গাদিয়ে গাদিয়ে নিচ্ছে যাত্রী। তাই লোকাল বাসে করেই বাড়ি ফিরছি। আর ঈদ উপলক্ষে এতটা পথ যে আসতে পেরেছি এটাই হচ্ছে ঈদের বড় আনন্দ।খুলনাগামী যাত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হচ্ছে লঞ্চে। তবুও লঞ্চে করেই পদ্মা পাড়ি দিতে হয়েছে। গাড়ি পাইনি তাই এখন বাসের ছাদে করেই বাড়ি ফিরব।

মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক উত্তম কুমার শর্মা বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ঘাট এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তাই থেমে থেমে গাড়ি চলছে।পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ঘাট এলাকায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যরা। এ ছাড়া নৌপথে দুর্ঘটনা রোধে সব সময় নৌপুলিশ টহল দিচ্ছে।এই নৌরুটে স্বাভাবিক সময়ে ১৭টি ফেরি চললেও ঈদে আরও তিনটি ফেরি যোগ হয়েছে। এখন চলছে ২০টি ফেরি। এ ছাড়া ৮৭টি লঞ্চ ও শতাধিক স্পিডবোট নিয়মিত কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে চলাচল করে।
কুমিল্লা ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অংশের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ কোনো যানজট দেখা যায়নি। মহাসড়কে কোনো দুর্ভোগ ছাড়াই যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে পারছেন।ঈদকে সামনে রেখে আজ সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ এক এম শহীদুল হকের আসার কথা।আইজিপি আসবেন বলে মহাসড়কে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। বুধবার রাত ১২টা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাগামী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।